ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

আমরা খাদক: যা পাই তাই খাই

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : শনিবার ৯ মার্চ ২০২৪ ০২:২৭:০০ অপরাহ্ন | এক্সক্লুসিভ

বাঙালিরা ভোজনরসিক! এ নিয়ে বিশ্বে বেশ খ্যাতি রয়েছে। আসলে আমরা বাঙালিরা ভেড়ার চালে চলেই অভ্যস্ত। এক জনে কোন কিছু খেলে দেখাদেখি আমরা ওটাই খাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অপরদিকে, বলতে গেলে আমরা সবাই খান। অথচ একাত্তরে সব খানদেরকে খেদিয়ে বারশো মাইল দূরে তাড়িয়েছি। তবুও এখন খানদের রাজত্ব চলছেই। কেউ পান খান, কেউ চা খান, আবার কেউ মিষ্টি খান। কেউবা আবার খামও খান। আসলে আমরা সবাই খান হয়ে গেছি। এতে যদি কেউ রাগ পান। তাতে কিছু বলার নেই। এমনও নজির আছে- ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত’ লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড বা প্লেকার্ড সাটানো আছে কোনো কোনো দপ্তরে। বর্তমান এ যুগে উল্লেখিত কথাটি কেমন জানি বেখাপ্পা লাগছে। অর্থাৎ বড়ই বেমানান লাগছে। কারণ- বাস্তবতা বড়ই কঠিন। যাই হোক- মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসাই ভালো। মানে আমরা খাদক। খাদ্ + অক = খাদক। এটি তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ। খাদক শব্দটি বিশেষণ পদ। যে খায় তাকে এক কথায় খাদক বলে। সেই হিসেবে আমরা সবাই খাদক। আমরা মাছ খাই, ভাত খাই, আবার ঘাসও খাই, বাঁশও খাই। পঁচা খাই, বাসি খাই, আবার ইট খাই, বালু খাই এমনকি মাটিও খাই। আমাদের এই খাই খাই স্বভাব আর গেল না। তাই বিষ খাই, সার খাই, মলও খাই। এটা গবেষকদের কথা। কারণ দৈনিক শাকসবজিতে যে সার-বিষ ব্যবহৃত হচ্ছে তার নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই খাবারের জন্য ওঠে পড়ে লাগি। ওই খাবার খাওয়া মানেই সার-বিষ খাওয়া। যুক্তিবিদ্যার সূত্র মোতাবেক- মুরগি মল খায়, আমরা মুরগি খাই। সুতরাং, আমরা মল খাই। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের গবেষকরা বলেন, আমরা মলত্যাগের পর শৌচকার্য সেরে যতই সাবান-ছাই দিয়ে হাত পরিষ্কার করি না কেন হাতের সূক্ষ্ম রেখার ভাজে ভাজে মলের অণু-পরমাণু পরিমাণ হলেও থেকে যায়। খাবারের সাথে সেগুলো আমাদের পেটে চলে যায়। এতো গেল গবেষকদের কথা। ভেবেচিন্তে বলতে গেলে আমরা প্রতিদিন কি খাচ্ছি? ভেজাল আর ভেজালে আমাদের পেট সয়ে গেছে। এখন আসল আর নকলের পার্থক্য খুুঁজি না। কেউ নিজে থেকেই, কেউবা অপরের দেখাদেখি আবার কেউবা বাধ্য হয়েই কুখাদ্য খেয়ে চলছি। কুখাদ্য বলতে যা স্বাস্থ্যসম্মত বা মানসম্মত নয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত উপ-শহরের মাংস ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমানকে পঁচা-বাসি মাংসে আগে থেকে সংগৃহীত রক্ত বা কেমিকেল মিশিয়ে তাজা হিসেবে বিক্রিকালে হাতেনাতে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। এ অভিযোগ পেয়ে সাংবাদিকরা প্রমাণসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। পরদিন থেকে হাফিজুর রহমান সাময়িক গা ঢাকা দেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি জামালপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরিফুল ইসলাম অভিযান চালালে মাংস ব্যবসায়ী মজিবর রহমানের দোকানে ডিজিটাল মিটার ব্যবহার না করে দাঁড়িপাল্লার ব্যবহার ও বাটখারার ওজন কম থাকায় তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। সেই সাথে তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেন। এ ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আসমাউল হুসনা দিগপাইত উপ-শহরের কলেজ রোড়ের শিমুল কসমেটিক্স এন্ড কনফেকশনারী দোকানে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদেশী কসমেটিক্স রাখা ও বিক্রির কারণে তার কর্মচারী মঞ্জু মিয়ার নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। উল্লেখ্য, দুইদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে এ উপ-শহরের শতকরা ৮০ ভাগ দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দেন। এতে সহজেই বোঝা যায়, ব্যবসায়ীদের অনেক গলদ রয়েছে। তারপরও ব্যবসায়ীরা অনেকটাই সতর্ক হয়েছেন। রোজার মাসকে সামনে রেখে মজুদদারি, কালোবাজারি ও মুনাফাখোরীদের পোয়াবারো। তারা তাদের অপতৎপরতায় সদা সচেতন। পবিত্র মাহে রমজান অত্যাসন্ন। প্রত্যেকটি মুসলমান ভাইবোন রোজা রাখার চেষ্টা করে। সাধ্যমত সবাই অপেক্ষাকৃত ভালো খাওয়ারও চেষ্টা করে। তাই রোজাদাররা যাতে পবিত্র ও স্বাস্থ্যকর ও মানসম্মত খাবার খেতে পারে এ কথা মাথায় রেখে  রোজার আগেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা জরুরি।

 

কামরুল হাসান

(লেখক: সাংবাদিক ও ডিরেক্টর- বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব, ঢাকা এবং সাবেক শিক্ষক ও এনজিও কর্মকর্তা)