ঢাকা, শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কি ঘটতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : শনিবার ২১ অক্টোবর ২০২৩ ০১:৪২:০০ পূর্বাহ্ন | রাজনীতি

নানা আলোচনা। নানা শঙ্কা। চারদিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কী হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর? ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে বিএনপির ‘মহাযাত্রা’ ঘোষণার দিন আওয়ামী লীগের পাল্টা অবরোধের ঘোষণা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে সরকারের সব সংস্থায়। এরই মধ্যে আগাম সতর্কবার্তা এবং সুপারিশ দিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে উচ্চ পর্যায়কে অবহিত করেছে একাধিক সংস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে তাদের। মহাসমাবেশের পর বসে যাওয়ার চেষ্টা করলে জিরো টলারেন্স প্রদর্শনের বিষয়টিও ভাবছেন সরকারের শীর্ষ মহল। অন্যদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ৭৮টি সাংগঠনিক টিমকে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল করতে সহযোগিতার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর ঘিরে ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে সব ইউনিট প্রধানকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব বাহিনীকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। যদিও বিএনপির একটি সূত্র দাবি করছে, নির্বাচনের এত আগে তারা শক্তি ক্ষয় করবে না। তবে যখনই আন্দোলন শুরু করবে তখন লাগাতার হবে। তা হবে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন। সরকারকে বাধ্য করা হবে।  ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি সূত্র বলছে, বিএনপি অবস্থান করতে চাইলে তাতে কোনোভাবেই সায় দেবে না পুলিশ। সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করতে তারা দ্বিধা করবে না। রাজধানীবাসীর জানমালের নিরাপত্তা এবং দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতেই তাদের এ উদ্যোগ হবে।

 

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। কারণ, ২৮ অক্টোবর তো এখনো অনেক দূর। বিএনপি আবেদন করুক। সেটি কমিশনার স্যার অনুমোদন দেবেন কি না তাও একটি বিষয়। শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হলে শর্তগুলোর ওপর আমাদের নজর থাকবে। রাজধানীবাসীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ভিতরে ভিতরে বিএনপির প্রস্তুতি রয়েছে অবস্থান নেওয়ার। উচ্চপর্যায়ের সিগন্যাল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। রাজধানীর সঙ্গে তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জ। মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেওয়া হবে। এরই মধ্যে তাদের সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চিন্তা রয়েছে, নভেম্বর থেকে যেসব কর্মসূচি থাকবে তাতে প্রাধান্য পাবে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে একপর্যায়ে অসহযোগ বা অবরোধের মতো আন্দোলনের দিকেও যেতে বাধ্য হতে পারে দলটি। অন্যদিকে, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঠেকাতে পাল্টা কর্মসূচি দেবে আওয়ামী লীগ। যে কোনো মূল্যে বিএনপিকে দাঁড়াতে না দেওয়ার ঘোষণা ইতোমধ্যেই (গত বুধবার) দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শিল্পপুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবুর রহমান  বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে শিল্পপুলিশের প্রতিটি সদস্য সজাগ রয়েছে। সাইবার ওয়ার্ল্ডেও আমাদের নিয়মিত মনিটরিং রয়েছে। অশুভ শক্তি যাতে কোনোভাবেই শিল্প খাতে ধ্বংসাত্মক কিছু করতে না পারে সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। 

 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, জনগণকে নিরাপদ রাখাই আমাদের কাজ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে র‌্যাব। এর অংশ হিসেবে সাইবার ওয়ার্ল্ড ২৪/৭ মনিটরিং করা হচ্ছে। যাতে কেউ প্রোপাগান্ডা এবং গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে র‌্যাব।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, আক্রমণাত্মক পথে না গিয়ে একের পর এক কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ের পরিস্থিতি তৈরি করবেন। তবে তাদের মধ্যে এ আলোচনাও রয়েছে, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন দেশের সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সেটি যাতে করতে না পারে এ জন্য বিএনপি চেষ্টা করবে, যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দলকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা এবং সরকারবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে রাখা। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল  বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব ইতোমধ্যে শাপলা চত্বরের করুণ পরিণতির বিষয় তুলে হুমকি দিয়েছেন। যাতে পুলিশ দিয়ে মারধর করাতে সুবিধা হয়। আমরা এখনো নিজেদের সংযত রেখেছি। সব সময় বলে আসছি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেই আমরা সরকারকে গদি ছাড়তে বাধ্য করব। এরই মধ্যে সরকারের পেটুয়া বাহিনী ও তাদের ক্যাডারদের হাতে আমাদের ২২ জন নিহত হয়েছেন। আমাদের মামলাও নেয়নি তারা। তবে আমাদের মহাসচিব তো ইতোমধ্যে সরকারের কাছে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন। এখন সিদ্ধান্ত সরকারের।

 

মহাসড়কে নাশকতার চেষ্টা হলে তা দমন করা হবে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দীন খান। তিনি বলেন, মহাসড়কগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তো এরই মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, ঢাকা এবং আশপাশের জেলাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল আছে কি না তা পরখ করতে নির্দেশনা রয়েছে উচ্চ পর্যায় থেকে। প্রয়োজনে আরও ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অস্ত্র-গোলাবারুদ, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পরখ করতে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানোর কথা ভাবছেন পুলিশের শীর্ষ ব্যক্তিরা। এর বাইরে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পুলিশ এবং র‌্যাবের বাইরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স, কারা অধিদফতরকে সব সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।