পাহাড়ি ঢলে আবারও বাড়ছে কিশোরগঞ্জ হাওরের নদ-নদীর পানি। দু-এক দিনের মধ্যে সেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ অবস্থায় ফসলডুবির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই দ্রুত ধান কাটার আহ্বান জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, উজানের ঢলে দ্রুত বাড়ছে কিশোরগঞ্জের হাওরের পানি। ভারতের মেঘালয় ও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দুদিন ধরে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় বাড়ছে পাহাড়ি ঢল। বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে মেঘনা, ধনু, কালি ও কুশিয়ার নদ-নদীর পানি। জেলার ইটনা ধুন নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করায় হুমকির মুখে পড়েছে জিওলের বাঁধ। এর পাশেই আরও একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে পাউবো।
দুই সপ্তাহ আগে উজানের ঢলে তলিয়ে যায় কিশোরগঞ্জের প্রায় ৮০০ হেক্টর জমির ধান। দ্বিতীয় দফায় জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় কাঁচা-পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওরের কৃষক।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সবাইকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার সহকারে যত দ্রুত সম্ভব ধান কেটে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হলো। এতে আরও বলা হয়, কোথাও কোনো স্থানে যদি ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেয় অথবা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এই সময়ে বাঁধগুলো রক্ষা না করা গেলে পানিতে তলিয়ে যাবে পুরো হাওরের বোরো ধান।
ইটনা হাওরের কৃষক আমিন মিয়া বলেন, পানি আবার বাড়তেছে। তাই কাঁচা-পাকা ধান আগা থেকে কেটে আনতেছি। আবার যদি পানি বাড়ে, তাই আমার শেষ হয়ে যাব।
কৃষক সরাফত আলী বলেন, পানি বাড়ার শঙ্কা আবার দেখা দিয়েছে। তাই প্রশাসনের লোকজন এলাকায় মাইকিং করতেছে। আমারও কাঁচা-পাকা ধান কেটে ফেলতেছি। কী করব যদি পানি বেড়ে আবার হাওর তলিয়ে যায়। তাইলে তো আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে। যে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছি, সেই ঋণ কীভাবে শেষ করব। সেই চিন্তায় আছি।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, আমাদের নদীগুলোর পানি এখনো বিপৎসীমা থেকে ৪২ সেন্টিমিটার নিচে আছে। কিন্তু প্রতিদিনই যেভাবে পানি বাড়ছে, এভাবে যদি দু-এক দিন পানি বাড়ে, তাহলে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে হাওরবাসীকে দ্রুত ধান কাটার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে দিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর অঞ্চলেই ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
