ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে সবজি আবাদে দুঃখ দূর কৃষকের

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৩ জানুয়ারী ২০২২ ০৫:৩৩:০০ অপরাহ্ন | কৃষি ও প্রকৃতি

সারা বছরই সকাল-সন্ধ্যা লাঙ্গল, কোদাল আর কাস্তে নিয়ে মাঠে ঘুরাঘুরিই কৃষকের নিত্যদিনের কাজ। জীবন সংগ্রাম করেই তাঁকে বাঁচতে হয়। নিজের পরিবারকে নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে চায়। এ জীবন সংগ্রামে কঠোর পরিশ্রম করে দুঃখ ঘুচার যেন আপ্রাণ চেষ্টা। এ আপ্রাণ চেষ্টাতে তাঁরা এখন স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন। হয়েছে অর্থকুড়ি, বাড়িঘর ও দালান। সবজি আবাদই এমন ভাগ্যের পরিবর্তন এনে দিয়েছে। বছরজুড়ে আবাদি জমিতে বিভিন্ন রকমের সবজি আবাদ করে এমন ভ্যাগের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের কৃষকরা। এ গ্রামটি ‘বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির গ্রাম’ হিসাবে পরিচিত। সবজির আবাদে ভালো দাম পাওয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখাও করছে তাঁদের সন্তানেরা। বিষমুক্ত সবজি আবাদ হওয়ায় উপজেলা-জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

Tangail Pic-23-01-22 (2)
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৫৫০ হোক্টর সবজি আবাদ হয়েছে। শুধু মুশুদ্দি ইউনিয়নে ১০৩ হোক্টর। সবজি আবাদের জন্য নারী ও পুরুষরা মাঠে সমভাবে কাজ করে। প্রণোদনা, পরামর্শ ও বিভিন্ন প্রদর্শনীতে কৃষকদের আগ্রহতে বেড়েই চলছে এ আবাদ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুশুদ্দি ইউনিয়নটি সবজি প্রধান এলাকা। এলাকার কৃষকরা সবজি আবাদের পাশাপাশি কিছু জমিতে ধান চাষ করে। বছর জুড়েই লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা, শিম, শসা, চিচিংগা, রবরটি, ঢেঁড়স, পুইশাক, লাউশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন রকমে সবজি পর্যায়ক্রমে একের পর এক আবাদ হচ্ছে। দেশের ১০টি মডেল সবজির গ্রামের মধ্যে মুশুদ্দি একটি। রাসায়ানিক সারের পরিবর্তে জৈব সার দিয়ে আবাদ করা হয়ে এ সবজি। পোকা দমনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্স ফেরোমিও ও আলোর ফাঁদ। কম্পোষ্ট ও জৈব সার ব্যবহারে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠছে সবজি গাছ। আবাদকৃত সবজিগুলো কৃষকরা ভোর বেলায় খেত থেকে সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এ সবজি ক্রয় করে ট্রাক যোগে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় পাইকারাও সবজি ক্রয় করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। 

কামাড়পাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক মিয়া বলেন, আমি ১৫ বছর যাবত বছরজুরে একের পর এক বিভিন্ন জাতের সবিজ আবাদ করি। এবার ৭৫ শতাংশ জমিতে শিম, লাউ, বেগুন, করলা ও পটল আবাদ করেছি। সকল খরচ বাদে প্রতি বছর আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা থাকে। মেয়েকে অনার্সে পড়ালেখা করাচ্ছি। এ ইউনিয়নের সবজি আবাদে সফলতা দেখে উপজেলায় অন্যান্য কৃষকদের আগ্রহও বেড়েছে।

কৃষক সুজন মিয়া বলেন, শুধু আমিই না, আমার মতো যারা সবজি আবাদ করে সকলেরই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। এক সময় আমরা এ এলাকায় শুধু ধান চাষ করতাম। ধান চাষের চেয়ে সবজি আবাদে পাঁচ গুণ লাভ। আয়ের টাকার বাড়িতে দালাল করেছি। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছি। অপর কৃষক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ সবজি আবাদ আমার ভাগ্যের পরির্বতন এসে দিয়েছে। এক সময় অনেক কষ্টে দিন পার করতাম। শুধু আমি না ইউনিয়নের শতশত কৃষক এখন সাবলম্ভী। কৃষকদল গঠন করে এখানে সবজি আবাদ করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষ অফিস থেকে কর্মকর্তরা মাঠে এসে সকল পরামর্শ দিচ্ছে।    

স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে মুশুদ্দি বাজারে থেকে সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে বিষ ও রাসায়নিক সারমুক্ত সবজি ক্রয় করে ট্রাকযোগে রাজধানীর ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। 

মুশুদ্দি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া জানান, এ ইউনিয়নটি মূলত সবজি প্রধান এলাকা। কৃষকরা বছরজুড়ে সকল ধরনের সবজি আবাদ করে। মাঠে গিয়ে সব সময় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। বানিজ্যিক ভিত্তিতে সবজি আবাদ করছেন কৃষকরা। 

ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম জানান, কৃষি অফিস থেকে সকল ধরনের পরামর্শ ও প্রণোদনা মুশুদ্দি ইউনিয়নের কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। ওই এলাকার মাটি খুবই উর্বর। সবজি চাষে খুবই উপযোগী। সবজি চাষ ভালো হয়। কৃষকরা সবজি আবাদে খুবই আগ্রহী। সবজি আবাদ করে মুশুদ্দি ইউনিয়নের কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।