ঢাকা, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

ধসম্পদের সুষম ব্যায় ও ইসলামী অর্থনীতি

মমিনুল ইসলাম মোল্লা | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৫ এপ্রিল ২০২২ ০৪:২৮:০০ পূর্বাহ্ন | মতামত


পরিমিত ব্যায় সকলের জন্য কল্যাণকর। অপচয়কারীকে আল্লাহ ভালবাসেন না। সুরা আল আরাফ এর ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “ এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। ”মানুষের জীবন ধারণের জন্য খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা ও বিনোদন মানুষের মৌলিক চাহিদা। এগুলো ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। সামাজিক অবস্থানের কারণে মানুষ সমানভাবে তার চাহিদা পূরণ করতে পারে না। মানুষ আল্লাহর দেয়া বিধান বাদে নিজস্ব অর্থনীতি অনুযায়ী চলার কারণে কারো ভােগের পেয়ালা উপচে পড়ে , আবার কারো ভোগের হাঁড়ি শূণ্য থাকে। আল্লাহ বলেন,“ অপচয়কারীরা জাহান্নামের অধিবাসী” (আল অনাম ১৪১)। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে আমরা সবাই কম বেশি অপচয়কারী। কোন বিবাহ অনুষ্ঠানে যদি ১০০জন লোক খায় তাতে ২/৪ জনকে নবির সুন্নত অনুযায়ী প্লেট পরিষ্কার করে খেতে দেখা যায়। এছাড়া “বোন প্লেটে“ খাবারের যোগ্য খাবারও অনেককেই ফেলতে দেখা যায়। আমরা যদি কোন অজুহাতে বোন প্লেটে অতিরিক্ত খাবার ফেলে দেই তার জন্যও আল্লার কাছে জবাব দিতে হবে। কোন খাবার খেতে গিয়ে পড়ে গেলে ময়লা অংশটুকু ফেলে দিয়ে বাকিটুকু খাওয়া সুন্নত। কেননা খাবারের কোন অংশে বরকত লুকিয়ে আছে তা আমাদের জানা নেই। আল্লাহ বলেছেন, এবং তোমরা আহার কর ও পান কর । কিন্তু অপচয় করো না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। ( আরাফ-৩১)। বভিন্ন হাদিসে রমজানে দান-খয়রাত ও সহমর্মীতার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আমরা সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে কিভাবে ইফতারিটা উপভোগ্য করা যায় , সেহরীর মেনু প্রতিদিন কিভাবে পাল্টে দেয়া যায়, কি কি নতুন খাবার সংযোজন করা যায়? তা নিয়ে ভাবি। ফলে দেখা যায় একটি ছোট পরিবারে অন্য সময় যেখানে ৪কেজি সোয়াবিন তেল লাগে রমজানে সেখানে ৬/৭ কেজি তৈল কেন লাগে তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই আমাদের সংসারে অপচয় হচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাইএবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় কৃতজ্ঞ। (সুরা আল ইমরান-২৬)কেউ কেউ অপচয় করাকে ছোট গুনাহ মনে করেন। অপচয়বারীরা দোষী একারণে যে তারা নিজের অপ্রয়োজনে ব্যায় করে। অথচ নিস্বঃ ও বিপদগ্রস্তদের প্রয়োজন মেটাতে তারা এগিয়ে আসে না। মানুষের মনুষত্ব তখনই প্রকাশ পায় যখন সে নিজ পরিবার ও আত্মীয়স্বজন বাদেও অন্যান্য অসহায় ব্যক্তির সাহায্যার্থে এগিয়ে যায়। কিন্তু অপচয় ও অপব্যয়কারী তাতে সাড়া দেয় না।
বিদ্যুতের অপচয় আমাদের দেশে সবসময়ই কম বেশি হয়ে থাকে । রমজান মাসে বোধ করি আরো বেশি হয়। বিশেষ করে শপিং সেন্টারগুলোতে আলোক সজ্জা করা হয়। ১০ ফুটের একটি কক্ষের জন্য বাসা-বাড়িতে ১টি লাইট জ্বালানো হয় আর কাপড়ের দোকানে লাগানো হয় রং বেরঙ্গের ৮ থেকে ১০ টি লাইট। বিয়ে- –সাদিতে আলোকসব্জা করা এখন স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে, এমনকি রমজানে কোন কোন মসজিদেও আলোকসজ্জা করা হয় এভাবে বিদ্যুতের অপচয় করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত ? আমরা রমজান মাসে দিনের বেলা রোজা রেখে ক্ষুধা  তৃষ্ঞায়   দিন কাটালেও ভালোভাবে ইফতার করার জন্য স্বাদের ভিন্নতা আনতে এক শহর থেকে অন্য শহরে ছুটে বেড়াই। এসময় টেবিলের কোন অংশই ফাকা থাকেনা। অথচ এর অর্ধেক খাবার হলেই চলতো। ফলে অধিকাংশ খাবারই অপচয় হয়। শুধু ইফতারী নয় সেহরীতেও থাকে  মজাদার খাবারের আয়োজন ।   রমজানসহ অন্যান্য সময় পানির অপচয় হয়। অজু গোসল, কাপড় ধোয়াসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সকল ক্ষেত্রে আমরা সবাই কম বেশি পানির অপচয় করি। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে , প্রায় আড়াই কেজি পানি দিয়ে নবি করিম (সাঃ )গোসল করতেন।  অজু করার ক্ষেত্রেও বেশি পানি ব্যবহার করা উচিত হবে না।  প্রাকৃতিক গ্যাস বান্দার জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ। এটি আল্লাহ প্রদত্ত মহামূল্যবান সম্পদ। গ্যাসের মিটার হিসাবে বিল দেয়া লাগে না। তাই অধিকাংশ পরিবারেই গ্যাসের চুলা রান্নার পরও জ্বালিয়ে রাখা হয়। এটি নিসন্দেহে অপচয়ের বড় উদাহরণ। বিলাসিতার কারণে অপচয় বেশি হয়। ইসলামে বিলাসিতা নিষিদ্ধ। দামি খাবার, দামী পোশাক, সুরম্য অট্টালিকা, অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা চিকিৎসা ও বিনোদন অপচয়ের শামিল। নবি করিম (সাঃ) খোলাফায়ে রাশেদিন ও সাহাবায়ে কেরাম অপচয়কে স্থান দেন নি। ঈদুল ফিতরের আগেই আমাকে নতুন জামা কিনতে হবে। এধরণের একটি প্রবণতা বাংলাদেশের শহর-গ্রাম সবযায়গায় লক্ষ করা যায়। নতুন পোশাক ছাড়া যেন ঈদ করা যাবে না। পোশাক আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস। আমরা যেকোন সময় এটি কিনতে পারি। ঈদের আগেও কেনা যায়। কিনতু যারা শুধু মাত্র ঈদের দিনই পাঞ্জাবি পড়েন তাদের প্রতি বছর পাঞ্জাবী কেনার যৌক্তিকতা কতটুকু অবশ্যই ভেবে দেখার বিষয়। শুধু পাঞ্জাবী নয় নিজের পোশাকের সাথে সাথে পরিবারের সকলের পোশাক কেনা এখন একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ঈদুল ফিতর এখন হয়ে গেছে “পোষাকী ” ঈদ। নতুন পোশাকটি অপচয় কিংবা বিলাসিতার মধ্যে পড়ে কিনা তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। সহিহ মুসলিম শরিফে এসেছে “---বিলাসিতা মুশরিকদের বেশভ’ষা এবং রেশমী কাপড় পরা থেকে বেঁচে থাকবে। ”  সুতরাং মুমিনদের উচিত ব্যায়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। তারা অরাম আয়েশ , বিলাসিতা, বন্ধু-বান্ধবদের জন্য কিংবা মেলা-পার্বন, বিয়ে-সাদিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। অন্যদিকে কার্পণ্য করাও অনুচিত। আবু দার্দা এর বর্ননায় আহমদ ও তাবরানী উল্লেখ করেছেন, “ নিজের অর্থনেতিক বিষয়াদিতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা মানুষের ফকীহ( জ্ঞানবান) হবার অন্যতম আলামত।” সুতরাং অপচয়ের ক্সেত্রে আমরা অবশ্যই সাবধান থাকবো। লেখকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক , সাংবাদিক ও  ধর্মীয় গবেষক,
 কুমিল্লা।০১৭১১৭১৩২৫৭    সধসরহসড়ষষধয@ুধযড়ড়.পড়স
অষড়শরঃড় ইধহমষধফবংয ০৪-০৫-১৭
ওহির আলোকে-সম্পদের সুষম ব্যায় ও ইসলামী অর্থনীতি
। সুরা আল আরাফ এর ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “ এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। ”মানুষের জীবন ধারণের জন্য খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা ও বিনোদন মানুষের মৌলিক চাহিদা। এগুলো ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। সামাজিক অবস্থানের কারণে মানুষ সমানভাবে তার চাহিদা পূরণ করতে পারে না। মানুষ আল্লাহর দেয়া বিধান বাদে নিজস্ব অর্থনীতি অনুযায়ী চলার কারণে কারো ভােগের পেয়ালা উপচে পড়ে , আবার কারো ভোগের হাঁড়ি শূণ্য থাকে। আল্লাহ বলেন,“ অপচয়কারীরা জাহান্নামের অধিবাসী” (আল অনাম ১৪১)।
। আল্লাহ বলেন,“ অপচয়কারীরা জাহান্নামের অধিবাসী” (আল অনাম ১৪১)।
আল্লাহ বলেছেন, এবং তোমরা আহার কর ও পান কর । কিন্তু অপচয় করো না। তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। ( আরাফ-৩১)।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাইএবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় কৃতজ্ঞ। (সুরা আল ইমরান-২৬)ে
সহিহ মুসলিম শরিফে এসেছে “---বিলাসিতা মুশরিকদের বেশভ’ষা এবং রেশমী কাপড় পরা থেকে বেঁচে থাকবে। ”  সুতরাং মুমিনদের উচিত ব্যায়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। তারা অরাম আয়েশ , বিলাসিতা, বন্ধু-বান্ধবদের জন্য কিংবা মেলা-পার্বন, বিয়ে-সাদিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। অন্যদিকে কার্পণ্য করাও অনুচিত। আবু দার্দা এর বর্ননায় আহমদ ও তাবরানী উল্লেখ করেছেন, “ নিজের অর্থনেতিক বিষয়াদিতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা মানুষের ফকীহ( জ্ঞানবান) হবার অন্যতম আলামত।”