ঢাকা, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

বাড়ছে মাদকের ব্যবহার, উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

মো. এনামুল হক লিটন/সাহেনা আক্তার, চট্টগ্রাম : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২০ নভেম্বর ২০২১ ০২:২২:০০ অপরাহ্ন | এক্সক্লুসিভ

চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মাদকের ব্যবহার। মদ-গাজা, হেরোইন-ইয়াবার পাশাপাশি মাদকের জগতে নতুন নাম যুক্ত হয়েছে, ‘ক্রিস্টাল মেথ’ বা আইস। এটি ভয়ঙ্কর ইয়াবার চেয়েও ২০ গুণ বেশি শক্তিশালী বলে জানা গেছে। ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল। সচেতন মহলের মতে, সমাজের প্রতিটি স্থরে মাদকের ভয়াল আগ্রাসন চলছে। নিত্য নতুন নামের সর্বনাশা বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ক্রমেই গোটা সমাজকে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর এর শিকার যুব-তরুণ সমাজ।

শুধু তাই নয়, সব ধরণের মাদক দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে এমনটিও আলোচিত হচ্ছে। মাদকের আগ্রাসন রুখতে রীতিমত প্রশাসনকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাদকের পেছনে ছুটতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এমন মন্তব্যও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকার দলীয় কতিপয় নেতার শেল্টারে থাকা কতিপয় বড় ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এলাকা ভিত্তিক মাদক ব্যবসা। এলাকার ওঠতি যুবকদের ব্যবহার করে একশ্রেণীর মাদক ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট তাদের রমরমা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছে। সূত্র জানায়, নগরীর ১৬টি থানায় প্রতিটি এলাকায় কমবেশী মাদক ব্যবসা চলছে।

ফলে নগরীতে ক্রমেই বেড়ে চলেছে মাদক দ্রব্যের ব্যবহার। আর এ কারণে সন্দেহাতীতভাবেই ভয়ানক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে তুলছে। শুধু শহর নয়, গ্রাম পর্যায়েও ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, প্যাথেডিনসহ নানা নেশাজাতীয় দ্রব্য ছড়িয়ে পড়েছে, এমন বিষয়ও বারবার আলোচনায় এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রায় প্রতিদিনই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবুও কমছেনা মাদকের এই আগ্রাসন। গত ১৮ নভেম্বর পতেঙ্গা থানা পুলিশ ৫০ লিটার দেশীয় তৈরী চোলাই মদসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। জানা যায়, পতেঙ্গা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই, নিরস্ত্র) ফরিদ আহমেদ সঙ্গীয় ফোর্সসহ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পতেঙ্গা মডেল থানাধীন ডেইলপাড়া হাজী কাদের মেম্বারের গলি সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৫০ লিটার দেশীয় তৈরী চোলাই মদসহ মো. শহিদুল ইসলাম প্রকাশ হলুদ মাঝি (৪৫) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।

এ সংক্রান্তে পতেঙ্গা মডেল থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ। এর আগে গত ১৩ নভেম্বর বাকলিয়া থানা পুলিশ ৩ হাজার পিস ইয়াবা ও ১টি প্রাইভেট কারসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। জানা যায়, ওইদিন বাকলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই নিরস্ত্র) আব্দুল্লাহ আল ইমরান সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সসহ থানার তুলাতলী মদিনা ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৩ হাজার পিস ইয়াবা ও ১টি প্রাইভেট কারসহ মো. মোবারক মিয়া (২৬) কে গ্রেফতার করেন। এছাড়া একইদিন চাঁন্দগাও থানা পুলিশ ৫ লিটার চোলাই মদ ও মদ তৈরীর উপকরণসহ দুই নারীকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে নগরীর বাকলিয়া, বায়েজিদ, চাঁন্দগাও, পাহাড়তলী থানা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ি ও সেবনকারিদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। বায়েজিদে বস্তি কেন্দ্রিক মাদকের আখড়া সবচাইতে বেশী। সূত্র জানায়, বায়েজিদ বোস্তামী থানার বাংলাবাজার ও বাংলাবাজার সংলগ্ন ডেবারপাড়, জামতলা, কলাবাগান, আরেফিন নগর, আমিন কলোনী, শান্তি নগর, অক্সিজেন ও অক্সিজেন সংলগ্ন শহীদ নগর এলাকায় মাদকসেবি ও ব্যবসায়িদের উৎপাত সবচাইতে বেশী। সূত্র মতে, গত কয়েকমাস ধরে বায়েজিদ থানা এলাকায় মাদক ব্যবসা, জুয়ারিদের উৎপাত, চুরি-ছিনতাই বেড়েই চলেছে।

মাদক সেবীরাই মাদকের টাকা জোগাড়ে চুরি-ছিনতাইয়ে লিপ্ত হচ্ছে, এমন অভিযোগ স্থানিয় বাসিন্দাদের। পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সিএমপির ১৬টি থানায় প্রায় প্রতিদিন মাদক আইনে মামলা দায়ের হচ্ছে। মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ নিজেই এসব মামলা করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে কৌশলে আনা হচ্ছে এসব ইয়াবাসহ নানা নামের মাদকদ্রব্য। ধরাও পড়ছে। তবুও থেমে নেই মাদক ব্যবসা। অন্যদিকে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর পুলিশ দুই কেজি ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধারের ঘটনায় সবচাইতে বেশী হতবাক হয়েছে সচেতন মহল। এতে করে অভিভাবক মহলে দেখা দিয়েছে নতুন আতঙ্ক। জানা গেছে, ওইদিন রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের সাতকানিয়ার কেওচিয়ার তেমুহনী এলাকার ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি মিনি কেজি ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর সাথে জড়িত রোহিঙ্গাসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, টেকনাফ থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এসব মাদক। মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে ক্রিস্টাল মেথ বাংলাদেশে ঢুকছে।

কেনাবেচা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং প্রাইভেট গ্রুপে। পুলিশ জানায়, রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রুপ বাংলাদেশী মাদক কারবারিদের সাথে মিলে এ কারবার চালাচ্ছে স্থল, নৌ ও আকাশপথে। অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকের আগ্রাসন বন্ধে পুলিশ ও র‌্যাবের ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে। পুলিশ ও র‌্যাবের ব্যাপক তৎপরতার মাঝে নগরীতে বাড়ছে মাদকের ব্যবহার। এ নিয়ে অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেছে। এ অবস্থার উত্তোরণে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে এমনটি মনে করেন অভিজ্ঞ সচেতন মহল। এ প্রসঙ্গে সিএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আরাফাতুল ইসলাম মাদকবিরোধি অভিযান চলমান রয়েছে এবং তা আরো জোড়ালো করা হবে বলে জানিয়েছেন।