ঢাকা, শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিএনপির ওপর নির্ভর করছে জাসদের নির্বাচনি হিসাব-নিকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৫৩:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপির) ওপর নির্ভর করছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নির্বাচনি হিসাব-নিকাশ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও প্রার্থিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপির অবস্থানের দিকে নজর রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম এই শরিক দলটি। 

 

দলটির নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকেই অন্তত ৩০টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়ে আসছে জাসদ। তবে, জোটবদ্ধ নির্বাচনের কারণে ২০০৯ সালের নির্বাচনে দলটির মাত্র চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। পরে ২০১৪ সালে যখন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বয়কট করে, ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্রসহ ২০টি আসনে প্রার্থী দেয় জাসদ। 

 

জাসদের নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন জাসদের নেতাকর্মীরা। ওই বছর তফসিল ঘোষণার আগে অন্তত শতাধিক নির্বাচনি সভায় বক্তব্য দেন দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। ওই নির্বাচনেও ৭০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত ছিল। পরে জোটগত নির্বাচনের কারণে সাতটি আসনে প্রার্থিতা করে জাসদ।

 

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী একজন নেতা জানান, সবসময়ই অন্তত ৩০ থেকে ৪০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকে জাসদের। এবারও সেই পথেই এগোচ্ছে জাসদ। এক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে এলে এক হিসাব, না এলে অন্য হিসাব। বর্তমানে সংসদে জাসদ ছয়টি আসনে প্রতিনিধিত্ব করছে। এরমধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। 

 

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন দায়িত্বশীল নেতার ভাষ্য—বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থানে দুটো অর্থ বহন করে। তারা যেভাবে ‘আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে খেলতে দেওয়া হবে না’—বলে প্রচার করছে, তাতে দুটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। এক হচ্ছে, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন বয়কট করবে। দ্বিতীয়ত, খালি মাঠে খেলতে দেওয়া হবে না, এর মানে তারা নিজেরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। জাসদ দলীয়ভাবে এই বার্তাটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জাসদ জোটগত নির্বাচনই করবে।

 

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না এলেও আরও অনেক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। জাসদ বিগত সময়ের মতো জোটবদ্ধ থেকেই নির্বাচন করবে।’

 

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতা উল্লেখ করেন, ২০০৬ সালের ২২ জানুয়ারি (যে নির্বাচনটি হয়নি), ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাসদের যারা মনোনয়ন পেয়েছিলেন, চূড়ান্ত প্রার্থিতা করার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং যারা সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন, সেই আসনগুলোকে কেন্দ্র করেই নির্বাচনি দরকষাকষি করার প্রস্তুতি রয়েছে জাসদের।

 

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে মনোনয়নের বিষয়ে জাসদের যারা আলোচনায় আছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—হাসানুল হক ইনু (কুষ্টিয়া-২, ভেড়ামারা-মিরপুর), শিরীন আখতার (ফেনী-১, সোনাগাজী-পরশুরাম-ফুলগাজী), এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন (বগুড়া-৪, কাহালু- নন্দীগ্রাম), রবিউল আলম (যশোর-৩, সদর); নুরুল আকতার (চট্টগ্রাম-৩, সন্দ্বীপ); মীর হোসাইন আকতার (ঢাকা-৭), শহীদুল ইসলাম (ঢাকা-৫), আফজাল হোসেন জকি (মানিকগঞ্জ-১, ঘিওর-শিবালয়), মোশাররফ হোসেন (লক্ষ্মীপুর-৪, রামগতি-কমলনগর), রোকনুজ্জামান রোকন )কুষ্টিয়া-৩, কুমারখালী-খোকসা), মোহাম্মদ মোহসীন (বরিশাল-৬, বাকেরগঞ্জ), সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু (ময়মনসিংহ-৬, ফুলবাড়িয়া), কুমারেশ রায় (রংপুর-২, তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ);, জসিমউদদীন বাবুল (চট্টগ্রাম-১৫),  জায়েদুল কবির (নরসিংদী-২, পলাশ ও কয়েকটি ইউনিয়ন), খাদেমুল ইসলাম খুদি (গাইবান্ধা-৩, সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী), আব্দুল মতিন (রাজবাড়ী-২, পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দী)। এছাড়া ওবায়দুস সুলতান বাবলু সাতক্ষীরা-২ (তালা-পাটকেলঘাটা), সবেদ আলী চুয়াডাঙ্গা (আলমডাঙ্গা), মনিরুজ্জামান মনির চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনে আলোচনায় আছেন।

 

জানতে চাইলে দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি প্রসেস এখনও শুরু হয়নি, কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হবে। ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবে।’

 

রাজনৈতিক এই পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতীয় কমিটির বৈঠক ডেকেছে জাসদ। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে দলটির দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন  বলেন, ‘আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ৩৫-৩৬, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। সকাল ১০টায় বৈঠক শুরু হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি।’

 

সাজ্জাদ হোসেন উল্লেখ করেন, জাসদের জাতীয় কমিটির সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জাসদের দলীয় প্রস্তুতি এবং সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হবে।