শামীম আহমদ:
সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে দেখলাম আমাদের দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী সবাই একদিনের বেতন দিয়েছেন। গরীব দু:খী মেহনতী মানুষের জন্য। যেহেতু দেশের লকডাউন চলছে ।
সেনাবাহিনীর এক দিনের বেতন কর্তন হলে দাঁড়ায় ৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
পুলিশের একদিনের বেতন ২০ কোটি টাকা।
নৌবাহিনীর ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা।
বিমান বাহিনীর ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
যারা জীবন বাজি রেখে এ দেশকে রক্ষা করার জন্য, এদেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এখন তারা করোনা মোকাবেলায় দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তারা যদি একদিনের বেতন দিতে পারেন, তাহলে তো আমদেরকে ও কিছু করা উচিত এ দেশের জন্য। তাঁদের সবাইকে সালাম, শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
মূল কথা :
২০১৮ সালে বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী দেশে মোবাইলের গ্রাহক সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজার।
এরমধ্যে গ্রামীণ সাত কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার।
রবি ৪ কোটি ৯০ লাখ ৪ হাজার।
বাংলালিংক ৩ কোটি ৫২ লাখ ৩৯ হাজার।
টেলিটক ৪৮ লাখ ৬৮ হাজার।
আমরা যারা গ্রাহক আছি আমরা যদি একদিন এক টাকা করে দেই তাহলে টাকা দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
সরকারের পক্ষ থেকে যদি টিভির মাধ্যমে নোটিশ (এ্যড) দেয়া হয় যে- দেশের এ সংকটময় মুহুর্তে আমরা মাসে এক টাকা করে দুইবার আপনাদের কাছ থেকে দাবি করে ২ টাকা কর্তন করে নিয়ে যাচ্ছি । আমার মনে হয় যে যারা মোবাইল গ্রাহক আছেন তারা সবাই সানন্দে সে প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। কারণ আমরা সবাই রক্তে, মাংসে গড়া ও বিবেক সম্পন্ন মানুষ ।
একজন ঠেলা গাড়ী চালকও মোবাইল ব্যবহার করছেন। ঠেলাচালকের পক্ষে দেশের এ দুর্যোগোময় মুহুর্তে মাসে ২ টাকা দেয়া কোনো বিষয় না । তাছাড়া ২ টাকা দিয়ে তার ঘরে ৫০০ বা ১০০০ টাকার ত্রাণ আসবে। এটা ছাড়াও জনগণের জন্য এই দুর্যোগ মুহূর্তে মাসে ২ টাকা দিতে আমাদের গায়ে লাগবেনা বা কেউ নারাজ হবেন না ।
তারপর বিটিআরসি
প্রত্যেক মোবাইল অপারেটরদেরকে ডেকে যদি বলেন যে জনগণের কাছ থেকে মাসে ২ বারে ২টাকা করে জমা দাও তারা সেটা করে দিতে পারবে। ১ টাকা করে কাটলে ১ দিন টাকা দাড়ায় ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজার। আরও ১৫ দিন পর ১ টাকা করে কাটলা আরও হলো ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজার। মাসে হলো – ৩৩ কোটি ১১ লাখ ৪৪ হাজার । আপারেটরদেরকে বললেন আপনারাও মাসে ১ টাকা করে ২ বার দেন তাহলে টাকা দাড়ালো ৬৬ কোটি ২২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এটা কি করা যায় না ?
আসুন পরের বিষয়:
যদি মোবাইল থেকে জনগণের টাকা কেটে না নিতে চান, তাহলে ২০১৯ সালের একটি হিসেবে দেখা গেছে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ৯ কোটি ৯৪ লাখ ২৮ হাজার। যারা ইন্টারনেট ইউজ করেন তারা বেশিরভাগই বিনোদনের জন্য ইন্টারনেট ইউজ করেন। এখান থেকে টাকা কাটা যেতে পারে। ঠিক একই রকম যদি টেলিভিশনে বা পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেন যে – আমরা এই দুর্যোগময় মুহূর্তে আপনারা নেট ব্যবহার কারীদের কাছ থেকে “৪ টাকা করে মাসে ২ বার কেটে নিতে চাই”- না বলে বলবেন দাবি করে কেটে নিচ্ছি । দয়া করে কেউ মনে কিছু নিবেন না । তাহলে কেউ এটাতে মনে কিছু করবে না ।
আপনি ৪ টাকা করে কাটলেন এবং ইন্টারনেট কোম্পানীর প্রধানদের সাথে বসে আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে ৪ টাকা করে কাটেন মাসে ২ বার। তাহলে টাকা দাঁড়াল – ৮ টাকা গুন ৯ কোটি ৯৪ লাখ ২৮ হাজার = মাসে ৭৯ কোটি ৫৪ লাখ ২৪ হাজার ।
নেট কোম্পানী যদি আরো ৮ টাকা দেয় তাহলে টাকা হবে দ্বিগুন।
মাননীয় নেত্রী আপসি তো জনগণের উপর দাবি করতেই পারেন। কারণ আপনি জীবন বাজী রেখে এদেশের জন্য কাজ করছেন। তাছাড়া আপনি প্রধানমন্ত্রী । আপনার অনেক দাবি আছে জনগণের উপর। সম্রাট শাহজাহান, মমতাজের জন্য ২০ হাজার লোককে ২০ বছর খাটিয়েছেন তাজমহল বানানোর জন্য । তার ব্যক্তি স্বার্থে কত টাকা খরছ করেছেন। আপনি মাত্র ২ টাকা বা ৮ টাকা কর্তন করছেন আমাদেরই জন্য ।
আমাদের জন্যই আমরা ২ টাকা বা ৮ টাকা মাসে দিচ্ছি। এটা যদি কেটে নেন কেউ কিছু মনে করবেন না। কারণ একটা পানের মূল্য এর চেয়ে অনেক বেশি।
সারা দেশ আজ লকডাউন, এটা করতে হচ্ছে আমাদের সবার স্বার্থে। আপনার জন্য নয়, আমাদের জন্য করছেন। সুতরাং এ ব্যাপারে যত তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নিবেন ততই মঙ্গল ।
এ প্রস্তাবটা বিবেচনা করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি ।
কেউ ঘর থেকে বের হবেন না, বার বার হাতে ধৌত করুন, কাউকে আসতেও দিবেন না। সব সময় সতর্ক থাকবেন ।
লেখক: সভাপতি, সিলেট জেলা যুবলীগ।