সিলেট ব্যুরো:
সকল কোলাহল থেমে গেছে। সকালে ঘুম থেকে জেগেই শ্রমিকদের ছুটে চলার দৃশ্য এখন স্বপ্নময়। অফিসমুখি মানুষের ঢল থেমে গেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়মুখি ছাত্র-শিক্ষকের ছুটে চলা বন্ধ হয়েছে। শিক্ষক চক ডাস্টার হাতে ক্লাসে ছুটে যান না। সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি সব অফিস আদালত বন্ধ। অফিস আদালতে নেই কোনো কোলাহল। চারদিকে আতঙ্ক আর আতঙ্ক। আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই বিশ্বময় হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। অদৃশ্য এই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা বিশ্ববাসীর কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবজাতির জন্যে অভিশাপ, করোনা ভাইরাসের থাবা কবে শক্তি হারাবে তাও অনিশ্চিত। একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই পারেন করোনার অভিশাপ থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দিতে। মুসলিম বিশ্ব চেয়ে আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে আবার জেগে উঠবে কোলাহল। জেগে উঠবে মানবজতি।
করোনাভাইরাসে জীবনের গতিধারা পরিবর্তনের বিষয়ে দৈনিক বায়ান্নের কাছে খোলামেলা কথা বলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে এডভোকেট মিসবাহ বলেন, মানবজাতির গতি ধমকে গেছে। সমাজকে বিচ্ছন্ন করে দিয়েছে করোনাভাইরাস। আপনজনকে দূরে সরিয়ে রাখছে। করোনা প্রতিরোধ ছাড়া পৃথিবীতে এখন আর কোনো কাজ নেই বললে চলে। এই অবস্থায় বিশ্বের অর্থনীতিতে ধস নামছে। বাংলাদেশও ওই অবস্থা থেকে মুক্ত নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিও পিছনের দিকে যাচ্ছে। কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যারা শ্রমজীবী হিসেবে কাজ করেন তাদের ঘরে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া শুরু করেছেন।
সিলেটের ছাত্র রাজনীতির কর্মীবান্ধব নেতা মিসবাহ বলেন, পুরো বিশ্ব চরম দুর্যোগময় সময় অতিক্রম করছে। করোনায় আক্রান্ত হলে গর্ভধারিনী মা সন্তানের কাছে যেতে পারেন না। কারণ তিনিও অদৃশ্য শক্তি করোনায় আক্রান্ত হবেন নিশ্চিত। মা-বাবা আক্রান্ত হলে সন্তান কাছে যেতে পারেন না। কী এক নির্মমতা। মৃত্যুবরণ করলে শেষবারের মতো মৃত্যু মুখ দেখার সুযোগ পান না স্বজনরা। করোনা রোগী কাউকে স্পর্শ করা মাত্র ভাইরাস তাকে আক্রমণ করছে। রেহাই পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। একমাত্র রাস্তা সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। ঘর থেকে বের না হওয়া। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা জারি করেছেন। ওই নির্দেশনা মেনে চললে অবশ্যই আমরা অনেকটা সফল হবো।
ভয়াবহ করোনার থাবার মধ্যে বিভিন্ন সেক্টরের চলমান কর্মকান্ড সম্পর্কে বলতে গিয়ে সিলেটের মাটি ও মানুষের বন্ধু এডভোকেট মিসবাহ বলেন, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র্যাব, সেনাবাহিনী, স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন ছাড়া মাঠে কেউ নেই। তারাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবসেবায় কাজ করছেন। ইতোমধ্যে ওইসব বিভাগের লোকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন অনেকে। কিন্তু তারপরও কেউ পিছু হটছেন না। জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় ওইসব সেক্টরের লোকজন মাঠে আছেন। কাজ করছেন মানবতার জন্যে, দেশের জন্যে, জাতির জন্যে। ইতোমধ্যে ওইসব সেক্টরের কর্মকান্ড সৃষ্টি করেছে নজির বিহীন দৃষ্টান্ত। যা জাতি কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার কারিগর প্রবাসী বাঙ্গালি। তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগ্রামী জীবনের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মূদ্রা প্রেরণ করেন। এই মূদ্রা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলে। এদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে চোখের পানি ফেলে দেন জনগণের নেতা এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল সংখ্যক বাঙ্গালি তথা সিলেটি বসবাস করেন। এখন প্রতিদিনই ঘুম থেকে উঠার পর প্রায় সারাদিনই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে ফোন আসে অথবা আক্রান্তের খবর আসে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর অনেক বাঙ্গালি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তাদের জন্যে প্রতিনিয়ত দোয়া করছি, আল্লাহ যেন তাদেরকে বেহেস্ত নসিব করেন। সকলের প্রতি অনুরোধ জানাবো তাদের জন্যে দোয়া করার জন্যে। এছাড়া যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের জন্যে সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন-আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ্য করে দেন। এই প্রবাসীরাই আমাদের জাতীয় সম্পদ। তিনি বলেন, আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্টজীব মানবজাতি। এই মানবজাতিকে তুমি রক্ষা করো।
করোনা বিস্তাররোধে করণীয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই তৃণমুলের নেতা এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকারি কয়েকটি সেক্টর জীবনবাজি রেখে কাজ করছেন আমাদের জন্যে। এক্ষেত্রে আমাদেরও করণীয় আছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা। সবাইকে নিজ দায়িত্বে ঘরে বন্দি রাখা আমাদের সকলের অবশ্যই কর্তব্য। সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে। অন্যথায় একজনের অসেচতনা অন্যের জন্যে মৃত্যু ডেকে আনবে। সভ্য জাতির জন্যে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। করোনামুক্ত বাংলাদেশ দেখার প্রত্যয়ে আসুন আমরা সচেতন হই। সহযোগিতা করি আমাদের জন্যে যারা অবিরাম কাজ করে চলেছেন তাদেরকে।