শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের জন্য সবসময় আলোচনার দ্বার খোলা রয়েছে। শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনভিপ্রেত কিছু আমরা কামনা করি না। গত কয়েক দিন যা ঘটেছে তা আমরা চাইনি। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কারো ইন্ধন আছে কি না, ব্যাপকতার ডাইমেনশন আছে কি না সেটা বুঝতে পারছি না।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে শাবিপ্রবি শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় এ বৈঠক শুরু হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গতকাল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আমাদের রাজনৈতিক দল সেখানে গিয়েছে। আমিও গতকাল কথা বলেছি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে বলেছি। তারা তখন উৎসাহের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু এরপর অনশনরতদের বাদ দিয়ে তারা আসতে চায়নি। ভার্চুয়ালি কথা বলতে চেয়েছে। আমরা সবাইকে নিয়ে বসতে চেয়েছি। সবাইকে নিয়ে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। অসুস্থতার কারণে আমি সেখানে (শাবিপ্রবি) যেতে পারিনি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়েছেন, আমরা তাদের খোঁজ নিচ্ছি। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমি যেহেতু অসুস্থতার কারণে যেতে পারছি না, তারা (আন্দোলনকারীরা) কথা বলতে রাজি হলেই আমাদের প্রতিনিধি দল সেখানে যাবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা না আসলেও শিক্ষক প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে বৈঠক করতে এসেছেন। আমি তাদের সময় দিয়েছি। ইউজিসি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করলে তিনিও এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের তিনজন এসেছেন। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার চালিকা শক্তি শিক্ষাঙ্গন। এটি ভালো থাকলে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।
দীপু মনি বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় একসময় অস্থির থাকলেও গত চার বছর খুব ভালোভাবেই চলেছে। সেজন্য তিনি (ফরিদ উদ্দিন আহমদ) দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হয়েছেন। গত কয়েকদিন প্রথমে অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। এরপর পুলিশি অ্যাকশন হয়েছে। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কমবেশি অনেকেই আহত হয়েছেন। আমরা কোথাও এমন অ্যাকশন চাই না। তারা কোন পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে গিয়েছেন, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ থাকতেই পারে, এগুলোর সমাধানে আলোচনা হলো শ্রেষ্ঠতম পথ। একসময় শিক্ষার্থীদের দাবি এখন ভিন্ন দাবিতে পরিণত হয়েছে। অনশনকারীদের চারপাশে হয়ত অনেকেই আছেন। তারা অবস্থান করছেন, স্লোগান দিচ্ছেন। হয়ত বিভিন্ন কারণেই শিক্ষকরা আন্দোলনকারীদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা অনশন প্রত্যাহার করুক। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করুক। অনশনরত অবস্থায় আলোচনা করতে চাইলে সেটিও পারবে।
তিনি বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে সেখানে কী হয়েছে, আমরা সেসব বিষয়ে জেনেছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য সবসময় আলোচনার দ্বার খোলা রয়েছে। শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনভিপ্রেত কিছু আমরা কামনা করি না।
দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তারপর তাদের দাবি ভিন্ন জায়গায় চলে গেছে। দাবি মানতে হলেও আলোচনায় বসতে হবে। শিক্ষকরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের আলোচনা করতে হবে।
উল্লেখ্য, শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে টানা তিন দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন ২৪ শিক্ষার্থী। অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ জনকে এরই মধ্যে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আজ কাফনের কাপড় পরে ক্যম্পাসে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।