ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আশুলিয়ায় শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত, গুলিবিদ্ধ ৬

মাসুদ রানা, সাভার (ঢাকা) : | প্রকাশের সময় : সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:০০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের জিরাবো এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
 
সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, "দুপুর ১টার দিকে আমাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৩ জনকে আনা হয়েছে। এর মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারা গেছেন।"
"নিহতের নাম কাউছার হোসাইন খান (২৭)। তিনি ম্যাংগোটেক্স এর শ্রমিক বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। বাকী দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও তিনি জানান ।
 
পরবর্তিতে বেলা ৩টার সময় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাজমুল এবং ওবায়দুল মিয়া নামে আরও দুই শ্রমিককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। দুজনই ন্যাচারাল ইন্ডিগোর শ্রমিক বলে জানা গেছে।
এর আগে, আশুলিয়ার পিএমকে হাসপাতালে দুজন শ্রমিককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। গুলিবিদ্ধরা হলেন, ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবীব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান।
পিএমকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, "আমাদের এখানে ৪ জন শ্রমিককে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে আনা হয়েছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায়। তাদের পায়ে গুলি লেগেছে।"
তবে কি ধরনের গুলিতে তারা বিদ্ধ হয়েছেন সে বিষয়টি জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা। 
 
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার পর শিল্পাঞ্চলের জিরাবো এলাকায় কয়েকটি পোশাক কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কে নেমে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়। 
এসময়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হওয়া ছাড়াও একাধিক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
সুমন নামে ন্যাচারাল ডেনিম কারখানার একজন শ্রমিক বলেন, "সকাল থেকে জিরাবো এলাকায় মন্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড এর শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছিল। আমাদের শ্রমিকরা সকাল থেকে কারখানায় কাজে যোগ দেয় এবং কাজ চলমান ছিল। বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা মণ্ডলের শ্রমিকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কাজ বন্ধ করে কারখানা থেকে বেরিয়ে মন্ডল নিটওয়্যার-এর সামনে যায়।"
তিনি বলেন, " শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মুখোমুখি হলে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। কয়েকজন শ্রমিক এসময় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও পালটা টিয়ার শেল ও গুলি করা শুরু করেন।"
সুমন আরও বলেন, "সংঘর্ষে ন্যাচারাল ডেনিম, ন্যাচারাল ইন্ডিগো ও মন্ডল নিটওয়্যার এর অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ দুই জনকে আমি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।"
সংঘর্ষ চলাকালে উত্তেজিত শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন বলেও জানান তিনি। 
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় দুপুর ১টা পর্যন্ত অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
ন্যাচারাল ডেনিম কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এইচআর) সবুজ হাওলাদার বলেন, "আমাদের কারখানায় কোন সমস্যা ছিল না। সকাল থেকেই শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করছিল। হঠাৎ শ্রমিকদের কাছে গুজব আসে, পাশের মন্ডল গার্মেন্টসের শ্রমিক মারা গেছে। এটা শুনেই সব শ্রমিক একসাথে কারখানা থেকে বেরিয়ে মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে চলে যায়। পরে ওখানে কি ঘটেছে আমার জানা নেই।"
অন্যদিকে আজ(সোমবার) সকাল থেকেই আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তৈরি পোশাক কারখানা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা।
তাদের বিক্ষোভের বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, "বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।"
গত ২৭ আগস্ট এক নোটিশের প্রেক্ষিতে, বার্ডস গ্রুপের চারটি কারখানা আর এন আর ফ্যাশনস লি., বার্ডস গার্মেন্টস লি., বার্ডস ফেডরেক্স লি. এবং বার্ডস এ এন্ড জেড লি. ২৮ আগস্ট থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে, বিজিএমই এর সাথে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের বৈঠকে আজকের মধ্যে শ্রমিকদের যাবতীয় আইনগত পাওনাদি পরিশোধের কথা থাকলেও বার্ডস কর্তৃপক্ষ আজ সোমবার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারবে না বলে জানায়। এতে, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পরবর্তীতে মহাসড়ক অবরোধ করেন।