চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ষোলশহর রেল ষ্টেশনটি দিন দিন পরিণত হচ্ছে একটি বস্তি এলাকায়। যাত্রিদের চলাচল ও নিরাপত্তা হুমকিতে হলেও স্টেশনটি ঘিরে আছে অবৈধ বস্তি, শ‘য়ের উর্ধ্বে স্থায়ী ও ভাসমান দোকান সেইসাথে সন্ধ্যা কালিন ভ্রাম্যমান কাচাবাজার। এই ষ্টেশনের পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রুপটি হারিয়ে গেছে। মাদকবানিজ্য, ক্রিকেট জুয়া, তাস আর ক্যাসিনো খেলার আসরে পরিনত হওয়া ষোলশহর রেলষ্টেশনটি এখন নগরজুড়ে আলোচনার মুখে। তবে কেউ নিচ্ছেনা দায়, স্টেশনমাষ্টার, আরএনবি, জিআরপি কেউ পারছেনা অবৈধ দখলদার ও দোকানীদের সরাতে। তারা বলছে অবৈধ দখলদাররা শক্তিশালী, তাদেরকে সরাতে জিআরপি ও আরএনবির যে জনবল দরকার তা নেই। স্টেশনমাষ্টার জয়নাল বলেন, আমিতো এসব বস্তি উচ্ছেদে চিঠির পর চিঠি দেই, উপরওয়ালারা প্রতিকার না নিলে আমি কি করবো। এস্টেটের কানুনগো সোলায়মানকে প্রশ্ন করা হলে সে বলে, ভাই আমি কি করবো। অবৈধ দখলদাররা দীর্ঘদিন ধরে আছে। তাদের এতো সহজে উচ্ছেদ করা যাবেনা। আর বিষয়গুলো বিভাগীয় প্রধান ও রেল পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূÑসম্পত্তি কর্মকর্তাই ভাল জানবে। তারা কি কারনে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা তা আমি জানিনা। অবৈধ দখলদাররাতো আমার অফিসের চারপাশও ঘিরে ফেলেছে। আমি নিজেই হুমকির মুখে অফিস করছি।
যদিও কর্মরত ক্ষমতাবান কর্মকর্তারা এসব বলছে, সেখানে যাত্রি সাধারণ ও জনমনে প্রশ্ন আসে যে, রেলষ্টেশনের অবৈধ বস্তি, ২নং গেইট রেল লেভেল ত্রসিং ও অক্সিজেন রেল লেভেল ক্রসিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ন জায়গার ভাসমান দোকান থেকে চাঁদা নেয় কারা? এর অনুসন্ধান করতে গেলে জানা যায়, অবৈধদখলদারদের ভয়ের বিষয়টা মুখে বললেও প্রমানহীন অতি গোপনে স্টেশন মাষ্টার ও জিআরপি, আরএনবি, কানুনগোসহ মাসে একটা ভালো মাশোহারা পাচ্ছেন তাদের থেকেই। বস্তি ও ভাসমান দোকানীদের একজন করে প্রতিনিধি এই চাঁদার টাকা উত্তোলন করেন।
ষ্টেশনটিতে সরেজমিনে যায়, ষোলশহর রেলওয়ে জংশন ষ্টেশনের উপর দিয়ে প্রতিদিন নাজিরহাট, দোহাজারী ও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়গামী প্রায় ৩৬টি ট্রেন চলাচল করে। এখন চালূ হয়েছে কক্সবাজার লাইন চালু হয়েছে। বেড়েছে কর্মরত স্টেশন মাষ্টার ও পিডব্লিউ, আইডব্লিউ কর্মকর্তাদের প্রাত্যাহিক কাজ। সেইসাথে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রিরা এই ষ্টেশনটি থেকে উঠেন। যাত্রিদের সুবিধার্থে ফাষ্টফুড ও কুলিংকর্নারসহ ১৮টি দোকান লিজ দিলেও বাকী শত দোকান ও বৈকালিক বড় একটি বাজার গড়ে উঠেছে অবৈধ ভাবে। জানা যায়, ষ্টেশনের পিছনে ও সামনের জায়গাগুলো দখল করে বস্তির মতো কলোনী করে ভাড়া খাচ্ছে রেলওয়ের প্রভাবশালী একশ্রেনির কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তাদের দখল ঠিক রাখতে বহিরাগতদের ।
শুধু তাই নয়, ষ্টেশনের আশে পাশে পুরাতন রেল লাইন, পাটাতনসহ রেলের বিভিন্ন মালামাল যা এক শ্রেনীর কর্মচারীদের যোগসাযশে চুরির মাধ্যমে দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। আরো জানা যায়, ষ্টেশনের আশেপাশে রয়েছে প্রায় ২১০ টি দোকান। আর প্রতি দোকান থেকে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে ভাড়া তোলা হয়। বিদ্যুতের খুটি হতে অবৈধ লাইন নিয়ে দীর্ঘ ১২ বৎসর যাবত প্রায় ৬৪টিঁ দোকান থেকে প্রতিদিন চাদা সংগ্রহ করেন দারোয়ান খ্যাত এক ব্যক্তি ।
২নং গেইট রেল লেভেল ক্রসিং গেইট ঘরের গেইটম্যান আজাদ বলেন, বেরিয়ার ফেলতে অনেক কষ্ট হয়। ভাসমান দোকানীরা রেললাইন, গেইটঘর ও বেরিয়ারের আশ পাশ দখল করে বেচা কিনা করে। আমি আমাদের ষ্টেশন মাষ্টার, আরএনবি ও জিআরপিকে জনহুমকির কথা মৌখিক ভাবে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নেননা। এতে আমরা থাকি ভাসমান দোকানীদের হুমকিতে। ট্রেন আসলে সরতে বললেও অনেক দোকানী রেগে যায়। তারা তাদের ইচ্ছেমতো সরবে। বেরিয়ারতো সহজে ফেলা যায়না। এপাড়া ওপাড়ের বেরিয়ার ফেলার জায়গা পুরোটাই দখলে।
ষ্টেশন মাষ্টার জয়নাল আবেদীনকে তার মুঠোফোনে বক্তব্যের জন্য ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে ষোলশহর রেলস্টেশনের জি আর পি ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর খোরশেদ আলম বলেন, ২নং গেইট এলাকার রেলরাস্তার আশপাশ ও গেইটঘরের আশপাশ দখল করে আছে অবৈধ দোকানীরা। যদি গেইটম্যানরা লিখিতভাবে অভিযোগ দেয় কারা গেইটঘরের আশপাশ ও বেরিয়ার অংশে ভাসমান দোকান চালাচ্ছে, তাহলে অবশ্যই আমি পর্যাপ্ত ফোর্স নিয়ে এসব অবৈধদের উচ্ছেদে ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে ষোলশহর রেলস্টেশনের আরএনবি ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা গেলে ভাসমান দোকানদাররা চলে যায়। আমরা অফিসে ফিরে আসলে তারা আবার পুনরায় দখল করে। আমার ফোর্স কম, প্রয়োজনীয় ফোর্স দিলে অবশ্যই অবৈধ দোকানিদের ব্যবস্থা নিবো।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামকে মুঠোফোনে এসব অবৈধ দখলদার ও ভাসমান দোকানীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আসলে আমি চেষ্ঠা করছি। এদের উচ্ছেদ করতে। ইনশাল্লাহ খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ করবো।