ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কেন ইউক্রেনে আক্রমণ, কী চান পুতিন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১০:১৮:০০ অপরাহ্ন | আন্তর্জাতিক

আকাশ, স্থল এবং সমুদ্র— তিনপথেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। রুশ সৈন্যরা এখন ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষের গণতান্ত্রিক এই দেশটির রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে অবস্থান করছেন। প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা গত কয়েক মাস ধরে অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পরবর্তীতে একটি শান্তি চুক্তি ছুড়ে ফেলেছেন তিনি এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বদিক থেকে ইউক্রেনজুড়ে সৈন্য মোতায়েন করেছেন।

নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইউরোপের শান্তি তছনছ করে দিয়েছেন। এখন সেখানে যা ঘটছে, তা পুরো ইউরোপের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলতে পারে।

ইউক্রেনে আক্রমণ কেন?

রাশিয়ার নেতা নির্দেশ দেওয়ার পর উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ দিক থেকে পুরো-মাত্রার আগ্রাসন শুরু হয়েছে। এই আগ্রাসন শুরুর চার দিন পর রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনের রাজধানীতে প্রবেশ করেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরের আগে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি ঘোষণা দেন, রাশিয়ার উন্নয়ন এবং অস্তিত্ব হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। আর নিরাপদ বোধ করা যাচ্ছে না। কারণ হিসাবে তিনি ‘আধুনিক ইউক্রেন’ ক্রমাগত হুমকি হয়ে উঠছে বলে দাবি করেন।

প্রথমে ইউক্রেনের বিমানবন্দর এবং সামরিক সদরদফতরে হামলা করা হয়। পরে রাশিয়া, রাশিয়ার-দখলকৃত ক্রিমিয়া এবং মিত্র বেলারুশ থেকে ট্যাংক এবং সৈন্য ইউক্রেনে পাঠানো হয়।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের অনেক যুক্তি ছিল মিথ্যা অথবা অযৌক্তিক। তিনি দাবি করেন, তার সামরিক অভিযানের লক্ষ্য ইউক্রেনে নিপীড়ন ও গণহত্যা থেকে লোকজনকে রক্ষা এবং অসামরিকীকরণ ও নাৎসিবাদ হটানো। ইউক্রেনে কোনো গণহত্যা ঘটছে না: এটি উদীয়মান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং এর নেতৃত্বে রয়েছেন এমন একজন প্রেসিডেন্ট যিনি ইহুদি।

রাশিয়ার আক্রমণকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির আক্রমণের সাথে তুলনা করে ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, আমি কীভাবে নাৎসি হতে পারি? ইউক্রেনের প্রধান রাব্বি এবং অশভিৎস মেমোরিয়ালও পুতিনের অপবাদ প্রত্যাখ্যান করেছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রায়ই ইউক্রেন চরমপন্থীদের দখলে গেছে বলে অভিযোগ করেন। কয়েক মাসের বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে ২০১৪ সালে রুশপন্থী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এই অভিযোগ করছেন পুতিন। পরবর্তীতে রাশিয়া দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলে নেয় এবং পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলন উসকে দেয়। এছাড়াও বিচ্ছিন্নতাবাদী— যারা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাদের প্রতি সমর্থন জানায় রাশিয়া। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

২০২১ সালের শেষের দিকে ইউক্রেন সীমান্ত ঘেঁষে বিশালসংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করতে শুরু করে রাশিয়া। একই সময়ে তারা ইউক্রেনে হামলা করতে যাচ্ছে, এমন অভিযোগও বারবার অস্বীকার করে। পরবর্তীতে পুতিন ২০১৫ সালের একটি শান্তি চুক্তি বাতিল করেন এবং বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রণাধীন ইউক্রেনের দু’টি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসাবে স্বীকৃতি দেন।

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ইউক্রেনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের ঘোষণা দিয়ে তিনি ন্যাটো ‘তার দেশের ঐতিহাসিক ভবিষ্যৎ হুমকি’ বলে অভিযোগ করেন।

কতদূর যাবে রাশিয়া?

এটা এখন স্পষ্ট যে, ইউক্রেনের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার উৎখাত করতে চাইছে রাশিয়া। মস্কোর লক্ষ্য হল ইউক্রেনকে নিপীড়ন থেকে মুক্ত এবং নাৎসিদের কবল থেকে উদ্ধার করা। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, শত্রুপক্ষ আমাকে এক নম্বর টার্গেট হিসাবে নিশানা করেছে; আমার পরিবার রয়েছে দুই নম্বর টার্গেটে।

২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দ্বীপ দখলে নেওয়ার সময়কার একটি মিথ্যা আখ্যান ক্রেমলিন-নিয়ন্ত্রিত টিভিতে নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে। এতে যারা বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী অপরাধ করছেন, তাদের আদালতের দ্বারস্থ করা হবে বলে পুতিনকে বলতে শোনা যায়।

ইউক্রেনের ব্যাপারে রাশিয়ার পরিকল্পনা কী, সেটি অজানা। তবে দেশটিতে অত্যন্ত বৈরী জনগোষ্ঠীর তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে রাশিয়া।

গত জানুয়ারিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন সরকারের নেতৃত্বে মস্কোপন্থী পুতুল বসানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছিল যুক্তরাজ্য। যদিও সেই সময় এই দাবিকে অর্থহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল রাশিয়া। অসমর্থিত এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে রাশিয়া প্রতিবেশী দেশটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করতে চায় বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

আগ্রাসনের আগের দিনগুলোতে, যখন ইউক্রেন সীমান্তজুড়ে রাশিয়া ২ লাখের বেশি সৈন্য সমাবেশ করে, তখন রাশিয়ার জনসাধারণের মনোযোগ পুরোপুরি লুহানস্ক এবং দনেৎস্কের পূর্বাঞ্চলের দিকে ছিল।

রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত এই দুই এলাকা স্বাধীন ঘোষণা করে প্রেসিডেন্ট পুতিন বিশ্বকে বলেছিলেন, এই দুই অঞ্চল আর ইউক্রেনের অংশ নয়। পরে তিনি জানান, ইউক্রেনীয় অন্যান্য ভূখণ্ডের স্বাধীনতার দাবির প্রতি তার সমর্থন রয়েছে।

স্ব-শাসিত গণপ্রজাতন্ত্রগুলো পুরো ইউক্রেনের লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলের এক তৃতীয়াংশের বেশি অংশের সমান হলেও বিদ্রোহীরা বাকি অংশেরও আশা করে।