ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রতিবেদন-২

কে ঘুচাবে রেলওয়ে শ্রমীকলীগের দৈন্যদশা

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২১ জানুয়ারী ২০২৪ ০৮:৫৯:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যা রেলে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করে। গ্রুপিংয়ে এখন নিঃশে^সের পথে এই শ্রমিক সংগঠনটি। হতাস হয়ে পড়ছে কর্মরত শ্রমিকরা। তারা যেন এই সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের রুটি রুজি ও কল্যানের অধিকার আদায়ে কোন পথ দেখছেন না। কয়েকজন কর্মরত শ্রমিকরা বলেন, কিছু নেতৃবৃন্দের ঘসাঘসি ও অমিলের কারনে সংগঠনটি তার নিজত্ব হারাচ্ছে। দুর্বল হচ্ছে সাংগঠনিক কাঠামো। ট্রাফিক বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্চুক কয়েকজনের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত মুরুব্বিদের পরিবর্তে বেশীর ভাগ কর্মরত শ্রমিকরা চায় এই সংগঠনের নেতৃত্বের দায়িত্ব। যেন তাদের সমস্যা তারাই তুলে ধরতে পারেন। তারা বলেন, অবসর প্রাপ্ত পেনসানভোগী, আউটসাইডার ও কর্মরত কর্মকর্তাদের সুশৃংখল নেতৃত্ব নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জটিলতা ও গ্রুপিং। পুরো পূর্ব-পশ্চিম রেলজুড়ে অবসরপ্রাপ্ত মুরব্বি হুমায়ুন-আকন্দ গ্রুপ, হায়দার-সিরাজ গ্রুপ, অন্যদিকে শুভ্র-মেহেদী গ্রুপ। গ্রুপিংয়ের কারনে ঝিমিয়ে পড়েছে আওয়ামী রাজনৈতিক ব্যানারে রেল শ্রমিক লীগের এই সেবামুলক সংগঠনটি। রেল শ্রমিকরা এসব গ্রপিংয়ের কারনে হতাস হয়ে অনেকে আবার সংগঠন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আবার অনেকে এই গ্রুপিংকে পূজী করে চটকদার আলোচনা ও টু পাইস কামিয়ে নিচ্ছে। সেইসাথে আরো অনেকের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন গ্রুপিং করে নেতা হওয়ার ইচ্ছা। সব মিলিয়ে রেল শ্রমিক লীগের এক দৈন্য দশা, যার সমাধান নেই রেল শ্রমিক নেতৃবৃন্দের কাছে।

 জানা যায়, অবসরপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে কর্মরত রেল শ্রমিক লীগের সাবেক কার্যনিবাহী সদস্য মাসুম বিল্লাহ (পিটিশন ৮১৭১/২০২২) ২০২২ সালের ৩০ জুন হাইকোর্টে বাদী হয়ে রীট পিটিশন করেন। আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রিয় রেল শ্রমিক লীগের ৫ জন নেতা সভাপতি হুমায়ুন কবির, কার্যকরী সভাপতি লোকমান হোসেন ও ওয়ালী খান, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আকন্দ, অতিরিক্ত সাধারন সম্পাদক গোকুল চন্দ্র চক্রবর্ত্তী। তাদের পদ থেকে সরিয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট। গত বছরের ২৫ জানুয়ারী হাইকোর্ট শুনানি শেষে ৩ মাসের মধ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে রায় দেন। জানা যায়, গত বছর ২৮ মে রেল শ্রমিক লীগ সাবেক কার্যনিবাহী সদস্য মাসুম বিল্লাহ (পিটিশন ৮১৭১/২০২২) রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি বুঝে পান।

এই রিট করার কারন হিসাবে মাসুম বিল্লাহ বলেন, চাকরি থেকে অবসর নিলেও শ্রমিক লীগ নেতারা শীর্ষ পদ আঁকড়ে ধরে পরিবারের সদস্যদের পদপদবী দিয়ে কমিটি চালিয়ে যাচ্ছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছে মাঠকর্মীরা। তিনি ন্যায় বিচার পেতেই মামলা করেছেন বলে জানান।

হাইকোর্টে নতুন কমিটি করার আদেশ দিলেও আপিল করেন হাইকোর্ট কর্তক বাদ দেয়া ৫জন নেতা। হাইকোর্টের রায় পেয়ে শুরু হলো অনেকের মাঝে নতুন কমিটি করার উদ্যেগ । ভিতরে ভিতরে চলছিল পূর্ব -পশ্চিমে নতুন কমিটি করার আমেজ। কিন্তু এই আমেজ মেনে নিলনা হুমায়ুন ও আকন্দ গ্রুপ। তারা সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলো। 

এ বিষয়ে এডভোকেট হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা রিটের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। গত সাতই আগষ্ট ২০২৩ আমাদের বহালের রায় পেয়েছি। শ্রম অধিদপ্তর থেকে আমাদের অনুমোদন আছে। ১০ অবসর প্রাপ্ত আউটসাইডার থাকতে পারবে আদালত রায় দিয়েছে। গত ১৯ সালের পর সম্মেলন হয়নি। আমরা শীঘ্রই একটি কাউন্সিলের মাধ্যমে সম্মেলন করবো।

এ বিষয়ে রেল শ্রমিক লীগের আরেকংশের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, মেহেদী হাসান বলেন, আমিও গ্রপিংয়ে বিশ^াসী নই। আমিও চাই গ্রুপিংয়ের অবসান হোক। এ নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি। তিনি গ্রপিং সরিয়ে একটি সুন্দর সংগঠন করার ক্ষেত্রে তিনি ব্যবস্থা নিবেন।

রেল শ্রমিক লীগের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি হায়দার আলী বলেন, রেল শ্রমিক লীগ একটি শক্তিশালী সংগঠন।  আমি চাই এই সংগঠনটা আরো শক্তিশালী হোক। এক্ষেত্রে নতুন রেলমন্ত্রী মহোদয় আমাদের সব গ্রুপের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বসবেন, সবার সমন্বয় করে গ্রপিংয়ের অবসান করাবেন। সবাই এক না হলে সিভিএ নির্বাচনের মাধ্যমে এই গ্রুপিং শেষ করা যায়। তখন সবাই ভোটার হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন। সবাইর সমন্বয়ে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ একটি সুন্দর সংগঠনে রুপ নিবে।

গ্রুপিংয়ের বিষয়ে একাংশের কেন্দ্রীয় রেল শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, সব দলেই গ্রুপিং আছে। তবে রেলের কল্যানে একটি সংগঠন থাকলে ভালো হয়। সবাই যদি ছাড় দিয়ে এক হয় তাহলে একটি শক্তিশালী সংগঠন হবে। দেখি মন্ত্রী মহোদয় কি উদ্যগ নেয়।