আমরা এমন এক শহরে বসবাস করি, যেখানে একবার কোন কিছুর দাম বৃদ্ধি পেলে তার কমে না। কমানোর জন্য কেউ কোন কথাও বলে না। সরকার সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ৫ দিন পর ব্যবসায়ীরা কমিয়েছে। এই সময়ে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু জনগণের করার কিছুই ছিলো না। সয়াবিন তেলের দাম কমানোর পরই আবার কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে চিনির দাম। কেউ কোন কথা বলে না। চালের দাম আকাশ ছোঁয়া, তাও কেউ কোন কথা বলে না। নিরবে সবাই সহ্য করে নেয়।
আজ শনিবার খুলনার ময়লাপোতা এলাকার সন্ধ্যা বাজারে বাজার করতে আসা গৃহিনী সালেহা আকমল, সরকারী চাকরীজীবি মোসলেহ উদ্দিন, দলিল লেখক কৃষ্ণচন্দ্র বাছাড়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে এমন কথা বলেন। তারা বলেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ে, কিন্তু আমাদের আয় বাড়ে না।
খুলনার এই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য বাজারের তুলনায় অনেক বেশী সতেজ শাক সবজির আগমন। তার মধ্যে শীতের প্রায় সব সবজিই রয়েছে। কিন্তু সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া। ইলিশ মাছ বাজার থেকে উধাও হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য মাছের দামও একটু বেড়েছে।
নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, বাজারগুলোতে শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম আরও আগেই এসেছে। এখন এইসব সবজির যোগান দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তবুও দাম কমছে না।
খুলনার বাজার ভেদে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি, বিটকপি ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা কেজি, সিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এছাড়া ঝিঙে ৬০, বেগুন ৬০, করলা ৬০, কুমড়া ৫০, পেঁপে ৪০ টাকা, পটল ৪০, গাজর ১৫০, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচু ৬০ থেকে ৮০ ও টমেটো ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শীতের সবজির আমদানী বাড়লেও কোন সবজিরই দাম কমছে না।
টুটপাড়া জোড়াকল বাজারের নিয়মিত ক্রেতা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ব্যবসায়ীরা সব সময় জিনিস পত্রের দাম বাড়ায়। কোন অজুহাত পেলেই হলো। অমনি দাম বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু কমানোর কোন লক্ষন তাদের মধ্যে দেখা যায় না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত সপ্তাহে ডিম ৫০ টাকা হালি বিক্রি হয়েছে। এই সপ্তাহেও একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর নিউ মার্কেটের কাঁচা বাজারের আসা ব্যবসায়ী রকিবুল হোসেন বলেন, বিশ^ বাজারে এখন সয়াবিন তেলের কোন সংকট নেই। তবুও আমাদের কেনো ৯০ টাকার তেল ১৯২ টাকায় কিনতে হবে। এই ব্যবসায়ী বলেন, ২০২০ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দোহাই দিয়ে বাড়ানো হয় ভোজ্য তেলের দাম। এখন তো আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের কোন সংকট নেই, তাহলে কেন এখনও বর্ধিত দরে বিক্রি করা হচ্ছে এ পণ্যটি। দেশটা আজ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। এরা যেভাবে চাইছে সেভাবে চলছে সব কার্যক্রম। ৯০ টাকার তেলের লিটার এখনও ১৯২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সরকার ৩ অক্টোবর তেলের নতুন দর নির্ধারণ করে দিলেও তাকে বর্ধিত দরেই কিনতে হয়েছে।
রূপসা বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম গোলদার জানান, সরকার ভোজ্য তেলের নতুন দর নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বড় বাজারের অনেক ব্যবসায়ী এখনও দাম কমায়নি। ব্যবসায়ীরা এখনও তাদের কাছে বেশী দরে তেল বিক্রি করছেন। উপায়ন্তু না পেয়ে আমাকে বেশী দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন করে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। বিক্রি করতে গেলে আমাকে বেশী দরে বিক্রি করতে হবে, না হলে পরের ট্রিপে মাল আনতে গেলে তার লস হবে। যদিও তার ঐ বক্তব্য অযৌক্তিক।
নগরীর এখনো ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। একই ভাবে ৫ লিটারের বোতল ৯৪০ টাকা ও খোলা এককেজি সয়াবিন ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। অথচ সরকার ৩ অক্টোবর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৪ টাকা ও খোলা তেলে প্রতি লিটারে ১৭ টাকা দাম কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করে দেয়।
সরকার নির্ধারিত নতুন দর অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৫৮ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন ১৭৮ টাকা ও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৮৮০ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা।
অন্যদিকে এলপিজি বোতলের দাম ৩৫ টাকা কমিয়ে ১২০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সরকারের কথায় কর্ণপাত না করে ১২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
এর আগেও সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমিয়ে পুন:নির্ধারণ করে দিলেও খুলনার ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম কমাতে বিলম্ব করেছে। এ অবস্থায় স্থানীয় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারাও খুব একটা পদক্ষেপ নেন না। বরং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। ফলে সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করতে সাহস পাচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীরা।