চট্টগ্রামের বায়েজীদের শেরশাহ কলোনী দিঘীর পাড় এলাকায় গণপূর্তের সরকারী দিঘীটি ভূমিদস্যুদের দখলে তার পুরো অস্তিত্ব হারিয়েছে। দিঘীর চারপাশ দখলকরে দখলদাররা ভাড়া বাড়ি নির্মান করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা চারপাশ এমন ভাবে দখল করেছে বাহির থেকে কেউ বলতে পারবে না এখানে দীর্ঘবছরের দিঘীর এতিহ্য ছিল। এই দিঘীটি ছিল এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সেইসাথে এলাকার জনমানুষের মিঠা পানির চাহিদা পূরন করতো। আগুনের কোন দূর্ঘটনা হলে এখান থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা পানি সংগ্রহ করে আগুন নির্বাপন করতো। বর্তমানে সে অবস্থা মোটেই নাই। জানা যায়, গত ৭ই ডিসেম্বর সকাল আটটায় দিঘীর পাড় কলোনীতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে । সেসময় ফায়ার সার্ভিস টিম পানির জন্য গুগলে চার্জ করে এখানে একটা দিঘী দেখলেও বাস্তবে কোন দিঘী খুজে পায় নাই। সে সময় দিঘীর চারপাশের দখলদারদের মধ্যখানে ছোট একটা ডোবা থাকলেও তারা সেই ডোবা থেকে পানি উত্তোলন করতে ব্যর্থ হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, এই দিঘী নিয়ে একসময় আনন্দময় ছিল শেরশা ও দিঘীর পাড় এলাকার মানুষেরা। প্রাণ ভরে গোসল করতে পারতো। এলাকার ছেলেরা সাতার শিখা, সাতার কেটে বিনোদন নিতো। সেই ঐতিহ্যবাহী সরকারী দিঘীটি আজ ভুমিদস্যুদের হাতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
যদিও বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এ পরিষ্কার বলা আছে, দিঘী বা জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট করা যাইবে না। এছাড়া"প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। একইসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে ২০০০ সালের ২২ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন মুখ্যসচিব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, "কোনো অবস্থাতেই খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে খাল-বিল, পুকুর, নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয়/জলাধার বন্ধ করা যাবে না।"
সরেজমিনে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এই গুরুত্বপূর্ণ দিঘী ফিরে পেতে চান এলাকাবাসী। যারা দখল করে আছে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকে বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হবে মনে করে মুখ খুলতে পারছেনা। আবার অনেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। গণপূর্তকেও কয়েকবার অভিযোগ দিয়েছে। তবু দিঘী উদ্ধার হয়না। কার স্বার্থে গণপূর্ত এই দিঘীটিকে ধ্বংস করার সুযোগ করে দিল। এই অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে বা রক্ষনাবেক্ষনে কেন ভুমিকা নিচ্ছেনা গণপূর্ত ও সিটি কর্পোরেশন। গণপূর্ত কি দিঘী দখলকারীদের থেকে কোন মাসোহারা নিচ্ছে কিনা এমন অনেক প্রশ্ন উঠে আসছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। দিঘীটি উদ্ধারে এলাকাবাসী বর্তমান জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবুর সাথে অনেকবার মত বিনিময় করেন। তিনিও কয়েকবার গণপূর্তের সাথে বৈঠক করেন। তবে গণপূর্ত কতৃপক্ষ আশ^াস দিলেও এখনো সেই দিঘীটি এলাকার ষাট হাজার মানুষকে ভুমিদস্যূদের কবল থেকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি গণপূর্ত।
এই বিষয়ে ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, এই দিঘীটি ফিরে পেতে এলাকাবাসী আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের হয়ে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহের সাথে কথা বলেছি। তারাও আমাকে আশ^াস দিয়েছে। কিন্তু কেন এখনো দিঘীর চারপাশ দখলকারীদের উচ্ছেদ করে এতিহ্যবাহী এই দিঘীটি উদ্ধার হচ্ছেনা তা এখনো বুঝতে পারছিনা।
গণপূর্তের নির্বাহী পরিচালক রাহুল গুহ বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। দ্রুত সময়ে দিঘীরপাড়ের চারপাশের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে ব্যবস্থা নিবো।