জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন সুধীজনরা। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ পরামর্শ দেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ এবং সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ।
ড. তোফায়েল আহমেদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা যাচাই করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে। তিনি বলেন, "স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে কমিশনের দক্ষতা পরীক্ষা হয়ে যাবে। একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সমর্থন নিশ্চিত হবে।"
তবে তিনি এটাও বলেন যে, বর্তমান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সমন্বিত কোনো কাঠামো নেই। আলাদা আলাদা আইন ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট। ফলে, একটি কমপ্রিহেন্সিভ সিস্টেম বা সমন্বিত কাঠামো গড়ে তোলার এটাই সঠিক সময়।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যয় কমাতে এবং দক্ষতা বাড়াতে নতুন একটি কাঠামো তৈরির প্রস্তাব দেন ড. তোফায়েল। তিনি বলেন, "আমাদের দেশে মেয়র ও চেয়ারম্যান নির্বাচন সরাসরি হয়। কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মতো সিস্টেমে কাউন্সিলর ও মেম্বার নির্বাচনের পর তারা পরিষদে গিয়ে নির্বাহী কমিটি গঠন করে। এতে নির্বাচন অনেক ব্যয় সাশ্রয়ী ও কার্যকর হয়।"
তার হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনে ২৩ হাজার কোটি টাকা এবং প্রায় ২০ লাখ জনবল প্রয়োজন। তবে সমন্বিত কাঠামো তৈরি করলে খরচ কমে আসবে মাত্র ৬০০ কোটি টাকায়, লোকবল লাগবে ৮ লাখ, এবং সময় লাগবে মাত্র ৪৫ দিন।
ড. তোফায়েল আরও বলেন, "সংবিধান অনুযায়ী এমপিদের কাজ হলো সরকারের কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন নয়। এমপিরা যদি উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব নেন, তাহলে স্বার্থের সংঘাত দেখা দেয়।"
তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তিনি বলেন, "বর্তমান পাঁচটি আইনের ভিত্তিতে পাঁচ ধরনের স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে তা জাতীয় নির্বাচনের আগে করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।" তবে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সমন্বিত কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচন আয়োজন করলে জাতীয় নির্বাচনের আগে তা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংস্কার শুধু সময়োপযোগী নয়, এটি প্রয়োজনীয় বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একটি সমন্বিত আইন ও কাঠামো তৈরি করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালিত হলে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে।
বায়ান্ন/এএস