ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঝিনাইদহ সদরের ১৫ ইউনিয়নের ৮টিতে আ'লীগের নতুন প্রার্থী

এম বুরহান উদ্দীন, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২১ নভেম্বর ২০২১ ০৮:১১:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
ঝিনাইদহের সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদে এবার ৮টিতে নতুন প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামীলীগ। যোগ্যতা ও ত্যাগী বিবেচনায় এ সব নতুন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। পুরানো ৭ চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বহাল রাখা হয়। 
 
নৌকার নতুন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- সাধুহাটী ইউনিয়নে শফিউদ্দীন আহম্মেদ মিন্টু, মধুহাটী ইউনিয়নে আলমগীর আজাদ সম্রাট, সাগান্না ইউনিয়নে মোজাম্মেল হোসেন শেখ, হলিধানী ইউনিয়নে আবুল হাসেম, গান্না ইউনিয়নে আতিকুল হাসান মাসুম, মহারাজপুর ইউনিয়নে আরিফ আহম্মেদ, নলডাঙ্গা ইউনিয়নে রেজাউল করীম ও ফুরসন্দি ইউনিয়নে শহিদুল ইসলাম শিকদার। 
 
পুরাতনদের মধ্যে বহাল রয়েছেন কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নে আশরাফুল ইসলাম, কালীচরণপুরে কৃষ্ণপদ দত্ত, ঘোরশাল ইউনিয়নে পারভেজ মাসুদ, দোগাছি ইউনিয়নে ইসাহাক আলী জোয়ারদার, পোড়াহাটি ইউনিয়নে শহিদুল ইসলাম হিরণ, হরিশংকরপুর ইউনিয়নে আব্দুল্লাহ আল মাসুম ও পদ্মাকর ইউনিয়নে সৈয়দ নিজামুল গনি। 
 
এদিকে ৮টি নতুন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করায় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী, যারা এখনো চেয়ারম্যন তাদের সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পছন্দের প্রার্থী নৌকা না পাওয়ায় অনেকেই বিমর্ষ ও মলিন। 
 
সাধুহাটী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী নাজির উদ্দীন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। গত নির্বাচনেও তিনি নৌকাকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়ে দলে যোগদান করেন। কাজী নাজিরের সমর্থকরা এখন দ্বিধায় পড়ে যাবেন। সাধুহাটীতে কৃষকলীগ নেতা শফিউদ্দীন মিন্টুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ওই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানও বেশ জনপ্রিয়। সেখানে নৌকা প্রার্থীকে জিততে হলে দ্বিধাবিভক্ত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। 
 
মধুহাটী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক জুয়েল, উত্তম গাঙ্গুলী, আলতাফ হোসেন ও তহুরুল ইসলাম নৌকার প্রার্থী হিসেবে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। তাদের এলাকায় বেশ পরিচিতি ও প্রভাব আছে। সেখানে এবার নতুন মুখ আজাদ সম্রাটকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বলা যায় একেবারেই অপরিচিত। ফলে মধুহাটী ইউনিয়নে জয় পরাজয় জটিল ও কঠিন সমীকরণে গিয়ে দাড়িয়েছে। 
 
সাগান্না ইউনিয়নে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা মোজাম্মেল হোসেন শেখকে মনোয়ন দেওয়া হয়েছে। বংশ পরস্পরায় মোজাম্মেল আওয়ামীলীগ করেন। ওই ইউনিয়নে বাবুল ও মুন্সি সাইদ প্রার্থী হতে মাঠে ছিলেন। সাগান্না ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল মামুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে জয় বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। 
 
হলিধানী ইউনিয়নে যুবলীগ নেতা বিপ্লব আলোচনার তুঙ্গে ছিলেন। নির্বাচনী মাঠ মোকাবেলা করা তার জন্য বেশ সহজ ছিল। এই ইউনিয়নেও নতুন একজন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে হলিধানী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ দ্বিধা বিভক্ত। হলিধানী ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান এড এনামুল হক নিলু বেশ জনপ্রিয়। যুদ্ধাপরাধী মামলায় হলিধানী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মিয়া কারাগার ও পরে জামিন লাভ করে ঢাকায় রয়েছে। ওই পরিবারের পক্ষে তার ছেলে হারুন অর রশিদ ভোট করার ঘোষনা দিয়েছেন। ফলে সেখানে ভোটের জটিল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। 
 
জেলার সবচেয়ে জটিল ইউনিয়ন গান্না। এক সময় আতংকের জনপদ ছিল। দাদা তপনের বাড়ি এই ইউনিয়নে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও কেসি কলেজের জিএস আতিকুল মাসুমকে মনোনয়ন দিয়ে ব্যাপকভাবে মুল্যায়ন করা হয়েছে। তরুন প্রজন্মের কাছে তিনি জনপ্রিয়। কিন্তু গান্না ইউনিয়ন বহুধারায় বিভক্ত। বর্তমান চেয়ারম্যান নাসির মালিথা, সাবেক চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমান লিটন ও আব্দুল ওহাবের বেশ প্রভাব রয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ না হলে জয় বেশ কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 
 
ফুরসন্দি ইউনিয়নে শহিদুল ইসলাম শিকদার সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। তার প্রতিপক্ষ একটা শক্ত সামাজিক গ্রুপ রয়েছে। এ নিয়ে আগে প্রায় মারামারি ও খুনোখুনি হতো। বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকলে নৌকার প্রার্থীকে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার সম্মুখীন হতে হবে। 
 
মহারাজপুর ইউনিয়নে আরিফ আহম্মেদ ও নলডাঙ্গা ইউনিয়নে রেজাউল করীম একেবারেই নতুন মুখ। এই দুইটি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান খুরশীদ ও কবির হোসেন বেশ জনপ্রিয়। তারা মাঠে থাকলে জয় পরাজয় ভাগ্যের উপর নির্ভর করবে বলে অনেকে মনে করেন। 
 
তবে সব কথার শেষ কথা ভোট নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক খুবই কঠোর। ভোট কাটাকাটি, কেন্দ্র দখল ও জালভোট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর বার্তা ভোটারদেরকে বেশ উজ্জীবিত করেছে।