রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা অব্যাহত পাহাড়ি ঢল এবং রাঙামাটিতে চলমান ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে হ্রদের পানির স্তর বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই পরিস্থিতিতে, হ্রদের পানি দ্রুত কমানোর জন্য কর্তৃপক্ষ কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ের ১৬টি গেট'র চার ফুট খোলা থাকলেও এবার ৫ ফুট খুলে দিয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার সময় সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি গেট ৬০ ইঞ্চি পরিমাণ করে খোলা হয়েছে। এর ফলে প্রতি সেকেন্ডে ৭৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে নির্গত হচ্ছে।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানিয়েছেন, হ্রদের পানির স্তর বিপদসীমার কাছে চলে আসায় গেটগুলো খোলা ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থা ছিল না। হ্রদের পানি স্তর বর্তমানে ১০৮.৬৫ ফুট মিন সি লেভেল (এমএসএল) এ রয়েছে, যা হ্রদের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার ১০৯ এমএসএলের খুব কাছাকাছি। স্পিলওয়ে থেকে এই পরিমাণ পানি নির্গমনের ফলে হ্রদের ওপর চাপ কিছুটা কমানো সম্ভব হবে।
পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে এবং প্রতিদিন ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় প্রতি সেকেন্ডে ৩২ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত পানি হ্রদে থাকা অবস্থায় হ্রদের তীরবর্তী এলাকার অনেক অংশই প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির ফলে রাঙামাটি এবং তার আশেপাশের নিম্নাঞ্চল, বিশেষ করে লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল, এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার মতো এলাকায় চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এসব এলাকায় প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জলাবদ্ধতার কারণে অনেকের ঘরবাড়ি এবং জমি প্লাবিত হয়েছে, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৯২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাঁধের পানিছাড়া অব্যাহত আছে। আশা করা হচ্ছে, অল্প কিছুদিনের মধ্যে হ্রদের পানি কমে আসবে।
প্রসঙ্গত, কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি চলে আসায় ২৪ আগস্ট প্রথম দফায় জলকপাটগুলো ৬ ইঞ্চি খুলে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তাতে পানি না কমায় ধাপে ধাপে বাড়িয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে জলকপাটগুলো খোলা হয়েছে ৫ ফুট।