ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
দুর্ভোগ থেকে কোনভাবেই নিস্তার পাচ্ছেনা সাধারণ মানুষ

বাংলাবাজার সড়কে অবৈধ ভাসমান বাজার উচ্ছেদের নামে পুলিশের ইদুর দৌড় খেলা

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:১১:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছেনা বাংলাবাজার সড়কের উপর অবৈধভাবে বসানো ভ্যানগাড়ির বাজার। চলাচলের যানবাহনের জ্যাম, জনসাধারণ, ছাত্রছাত্রিরা নিরাপত্তায় বাসায় ফেরা, ইন্ডাষ্ট্রীর লোড আনলোডের গাড়িগুলোর নির্বিঘ্নে আসা যাওয়া, রোগীরা সময়েই জ্যাম পেরিয়ে কাঙ্খিত স্থানে যাওয়া চরম ভোগান্তি হলেও স্থায়ী সমাধান করছেননা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। পাশেই রয়েছে বায়েজিদ থানার একটি বিট। তবু ভাসমান ব্যবসায়ীদের রহস্যজনক প্রভাবের কাছে সব যেন অসহায়। পুরো সড়কজুড়ে অবৈধ দোকানিরা দখল করে ব্যবসা করছে, তাদের অসহায় হালের দোহাই দিয়ে বাজার বানিয়ে অনেকে মধ্যস্বত্ব হয়ে চাঁদার ভাগ নিচ্ছে। পুলিশ আসলে এরা ভ্যানগাড়ি নিয়ে ঝুকি নিয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে, ৫ থেকে ১০ মিনিট পর তারা চলে গেলে তারা আবার ফিরে আসে। পুলিশ ও অবৈধ দোকানিদের এই ইদুর দৌড় চলে পুরো সপ্তাহ ও মাসজুড়ে। থানা পুলিশের টইল গাড়িও থাকে প্রায় সময় বাজারে। তবুও স্থায়ী কোন সমাধান নেই।  নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন ব্যস্ততম সড়ক শেরশা-ফৌজদারহাট লিংকরোড ও তার পাশঘেষে টেক্সটাইলের দিকে যাওয়া সড়কের উপর অবৈধপ্রভাব খাটিয়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ১০০টি ভাসমান দোকানের বাংলাবাজার। 

এলাকাটি জনবহুল হওয়ায় এই ভাসমান বাজারটি জনভোগান্তি ও দুর্ঘটনার কারন হয়ে দাড়িয়েছে নিয়মিত। মিল ফ্যাক্টরী থাকায় তাদের পন্য পরিবহনেও ঝামেলায় পড়তে হয় বলে জানান ট্রাক চালকরা। কয়েকবার চসিক উচ্ছেদ করলেও এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় সড়কের উপর গড়ে উঠা এই অবৈধ বাজারটি চলছে। এই সড়কের উপর দিয়ে বাংলাবাজার, ডেবারপাড়, মুক্তিযোদ্ধা কলোনী ও টেক্সটাইল, রুবীগেইট, টেকনিক্যাল এলাকার মানুষ ও মিল ফ্যাক্টরীর মানুষসহ আরো কয়েকটি এলাকার প্রায় এক লাখ মানুষের আসা যাওয়া। সেইসাথে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছেলে মেয়ে, অভিভাবক, অফিস আদালতে কর্মরত কর্মকর্তা ও পথচারী এবং যাত্রিদের যাতায়াত। নগরীর বাংলাবাজারের গুরুত্বপূর্ন এই সড়কটি এখন সবার জন্য ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। 

জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ মে উচ্ছেদ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আক্তারের জিপসহ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে মদদদাতারা। এ ঘটনায় আহত হন বায়েজিদ বোস্তাামী থানার এএসআই মুজিবুর রহমান, আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্য। গত বছরের ১৮ অক্টোবর চসিকের নির্বাহী মাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) জাহানারা ফেরদৌস এর নেতৃত্বে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত হয়।  সেই সময় এলাকার মানুষ সড়ক ও ফুটপাত ফিরে পেয়ে খুশি হন।

কিন্তু বছর যেতে না যেতেই অবৈধ দখলদাররা তাদের প্রভাব খাটিয়ে বাংলাবাজার এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পুনরায় বাজার বসানোর প্রতিযোগীতায় দখলে নিয়ে নেয়। দখলের সুযোগে ফুটপাত ও ড্রেনের উপর তৈরি অস্থায়ী দোকানের দখল-বেদখল নিয়েও একটি চক্র বাণিজ্য করেছে রীতিমত। একটি মহলের  ইন্ধরেন এই বাণিজ্য হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানদাররা জানান। সড়কে চলা পথচারীরা ভোগান্তির স্বীকার হয়ে বলেন, সড়ক ও ফুটপাত দুটোই তাদের দখলে। মানুষযে হাটবে তার জায়গাটাও থাকেনা। স্কুলগামী ছাত্রছাত্রি ও অভিভাবকরা এই সড়কে চলতে অনেক কষ্ট হয়। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলেও পড়ে পথচারীরা।

এক ভাসমান ভ্যানগাড়ির দোকানি বলেন, আমরা রাতে ৫০ টাকা করে দেই। আপনারা কাকে টাকা দেন প্রশ্ন করলে, দোকানি বলেন, সোর্স মানিক জেল থেকে বেরিয়ে পুনরায় টাকা তুলছে। মানিকই পুলিশসহ এলাকার নেতাকর্মি ও কতিপয় সাংবাদিক পরিচয়ধারীদের ম্যানেজ করে। আগে এই বাজার নিয়ন্ত্রনে একসময়ের নেতা জসিম ও নেতা ইব্রাহিম প্রকাশ্যে আসলেও এখন তাদের দেখা যায়না। এলাকার কোন কোন নেতা জড়িত আছে জানতে চাইলে দোকানি বলেন, সেটা জানিনা। বর্তমানে পুরোটাই সোর্স মানিকই নিয়ন্ত্রন করেন। 

এই বিষয়ে জানতে ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু বলেন, তারা সড়কের উপর অবৈধ দখলদার। এই সড়কটি পুনরায় দখলের ব্যাপারে আমি মেয়র সাহেবকে জানিয়েছি। মেয়র সাহেব বলছে, শীঘ্র্রই এসব অবৈধ দোকানিদের উচ্ছেদ করা হবে।

 এই বিষয়ে জানতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রতিবেদকের মুঠোফোনে বলেন, আমি এই থানায় যোগদানের পর কয়েকবার চেষ্টা করেছি এই অবৈধ ভাসমান বাজারটি উচ্ছেদের জন্য। তারা আমরা গেলে পালায়, আমরা চলে এলে আবার বসে যায়। এবার এদের গ্রেফতার করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।