ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সদস্য ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা জানা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস দৈনন্দিন জীবনে একান্ত অপরিহার্য দুটি উপাদান। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, কৃষি, পর্যটন সব কিছুই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। সার্বিকভাবে দেশকে সচল রাখতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা নেওয়ার পাশাপাশি বাস্তবায়ন করেছে। ফলে বিগত ১৪ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচগুণেরও বেশি বেড়েছে এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৬০৯ কিলোওয়াট-ঘণ্টায় উন্নীত হয়েছে। গ্যাসের উৎপাদনও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০০৮ সালে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা ছিল এক হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৮ সালে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়ায় দুই হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে। বর্তমানে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমদানিকৃত তরল গ্যাসের ব্যবহার, আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া, নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ, উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয় দামের মধ্যে সমন্বয়, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমানের সমন্বয়ের কারণে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়ে থাকে।
২০১১-১২ অর্থবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী সব জ্বালানির দামে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। জ্বালানি সংশ্লিষ্ট ব্যয় যেমন: বিমা খরচ, ঝুঁকি ব্যয়, ব্যাংক সুদ, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান সমন্বয় করায় সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি দামও অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি বাবদ দিতে হচ্ছিল।
তিনি জানান, চলমান কৃষি সেচ মৌসুম, আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানো, শিল্প খাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং রপ্তানিমুখী বিভিন্ন কলকারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানিপূর্বক বর্ধিত চাহিদা পূরণ করতে হবে। এই কারণে সরকার অন্যান্য ভোক্তা শ্রেণিকে অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব খাতে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।