সাধারণ নির্বাচনের এক দিন আগে পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের পিশিন শহরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। দুটি পৃথক হামলায় ঘটা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২৭ জন নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন ৪০ জনের বেশি।
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) পৃথক দুটি হামলার ঘটনা ঘটে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে পিশিন শহরের আসফান্দ ইয়ার খান কাকার নামে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর কার্যালয়ের বাইরে। এ হামলায় ঘটা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন ১৫ জন। আহতের সংখ্যা ৩০ জনের বেশি। ঘটনার সময় কাকার তার কার্যালয়ে ছিলেন না।
দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি হয় জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম ফজল (জেইউআই-এফ) কার্যালয়ের বাইরে। কার্যালয়টি কিল্লা সাইফুল্লাহ জেলায় অবস্থিত। এ হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন। জেইউআই-এফ নেতা মাওলানা আবদুল ওয়াসায় এবার প্রার্থিতা করছেন। তিনি হামলা থেকে বেঁচে গেছেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জিও’র খবরে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণে আহতদের তহসিল হাসপাতাল খানোজইতে নেওয়া হয়েছে। মরদেহগুলোও ঘটনাস্থল থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের চিকিৎসক হাবিব এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে বেশিরভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রাদেশিক স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ঘটনার পর কোয়েটার হাসপাতালগুলোয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ডাকা হয়েছে অতিরিক্ত কর্মীদের। ট্রমা সেন্টার, সিভিল হাসপাতাল, বিএমসি, বেনজির ও শেখ জায়েদ হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার জন্য অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত করা হয়েছে।
হামলা ও বিস্ফোরণের ঘটনায় পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) একটি নোটিশ জারি করেছে। একইসঙ্গে বেলুচিস্তানের মুখ্য সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছ থেকে ঘটনার প্রতিবেদন চেয়েছেন।
ইসিপির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ওই নোটিশে ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হামলার ঘটনার পর আসফান্দ ইয়ার খান কাকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জিও। তিনি জানিয়েছেন, পিশিন শহরে তার নির্বাচনী অফিসের বাইরে একটি মোটরসাইকেলে বিস্ফোরণ ঘটে। নির্বাচন অফিসে পোলিং এজেন্টদের নাম চূড়ান্ত করার সময় বিস্ফোরণটি হয়। এতে তার আট কর্মী শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৮ জনের বেশি কর্মী।
তিনি আরও জানান, ন্যক্কারজনক এ ঘটনার সময় তিনি বারশোরে ছিলেন। বর্তমানে তিনি খানোজাইতে অবস্থান করছেন।
বেলুচিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক তথ্যমন্ত্রী জান আচাকজাই বলেছেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী একটি মোটরসাইকেলে বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল। ঘটনাটি নিয়ে বড় পরিসরে তদন্ত চলছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, বাধা এলেও বৃহস্পতিবার বেলুচিস্তানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রদেশের মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে। তারা সন্ত্রাসীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিস্ফোরণে আহতদের বিষয়ে তিনি বলেন, সবাইকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে। কোয়েটায় চিকিৎসা নিতে না পারলে তাদের অন্য শহরে পাঠানো হবে। মর্মান্তিক ঘটনা সত্ত্বেও সরকার তার দায়িত্ব অব্যাহত রাখবে। সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্য সফল হবে না এবং শেষ সন্ত্রাসী নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
খাইবার পাখতুনখাওয়ার গভর্নর হাজি গুলাম আলি বেলুচিস্তানের গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতদের ব্যাপারে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
পিশিনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও বিস্ফোরণের ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গোহর এজাজ। কর্মীদের মূল্যবান প্রাণহানির ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশও করেন তিনি।
গোহর বলেন, দুষ্টু কিছু লোক নির্বাচনের সময় নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে পাকিস্তানকে বদনাম করতে চায়। যারা নিরপরাধ নাগরিকদের জীবন নিয়ে খেলা করে তাদের লোহার হাতে মোকাবিলা করা হবে। নির্বাচনকালীন শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।