ভোলার উত্তরের অন্যতম জ্ঞান বিতরণের বাতিঘর ‘পরানগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বিদ্যালয়টি শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে। শতবর্ষ ধরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিলেও এই বিদ্যালয়ের তেমন কোন অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি। একমাত্র দ্বীতল ভবনটিতে প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠদান করছে। ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ শিক্ষার্থী থাকায় পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। ভবন সংকটের কারণে ক্লাস নিতে হিমশিত খাচ্ছে শিক্ষকরা। ৬ রুমে প্রায় ৮ শত শিক্ষার্থী গাতাঘাতি করে ক্লাস করছে। যার কারণে পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। ভবন সংকটের বিষয় নিয়ে বহুবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ঐতিহ্যবাহী পরানগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন সংকট সমাধাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভোলার অভিভাবক তোফায়েল আহমেদ এমপি, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিবসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ১৯১১ইং সালে ‘পরানগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হক নিজ উদ্যোগে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরানগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় জ্ঞান বিতরণের আলোর দিশারী হয়ে ভোলা জেলা তথা উত্তর জনগদে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শতবর্ষেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পরানগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ওই অঞ্চলকে আলোকিত করেছে। এই বিদ্যালয় থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন এবং বর্তমানেও আছেন। শিক্ষার মানান্নোয়নের পাশাপাশি ভালো ফলাফল করছে এই বিদ্যালয়টি। ২০২০-২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ৪টি এপ্লাসসহ ভালো ফলাফল করেছে। পরানগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ভবন সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের একটি মাত্র দ্বীতল ভবনে রুম রয়েছে ৭টি। যার একটি ক¤িপউটার ল্যাবের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। বাকী ৬টি রুমের বিপরীতে শিক্ষার্থী প্রায় ৮ শতাধিক। বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ১৬০জন, সপ্তম শ্রেণীতে ১২০জন, অষ্টম শ্রেণীতে ১৫৩জন, নবম শ্রেণীতে ১৭০জন, নিউ দশম শ্রেণীতে ১৪৪জন ও দশম শ্রেণীতে ১৪০জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদানে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। প্রত্যেক ক্লাসে শিক্ষার্থীদেরকে অনেক কষ্টে গাতাঘাতি করে পড়ালেখা করতে হচ্ছে। এক টেবিলে ৫/৬জন পর্যন্ত কষ্ট করে বসতে হয় তাদের। যার কারণে পড়ালেখায় চরম ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ক্লাস করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের সাবেক পুরাতন ১ তলা ছোট্ট ভবনটি লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা পুরাতন হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের বিভিন্ন অংশে পেলেস্তারা খসে পড়ছে। ভবন সংকট সমাধানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভোলার অভিভাবক তোফায়েল আহমেদ এমপি, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিবসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি শত বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের স্কুলে প্রায় ৮ শত শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। আমাদের একটি মাত্র ভবনে মাত্র ৬টি রুম। আমাদের ক্লাসে ১৪০জন ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করে। কিন্তু আমাদের রুমটি ছোট হওয়ায় এক সাথে সকল শিক্ষার্থীদের বসতে খুব সমস্যা হচ্ছে। আমরা টেবিলে ৫/৬জন গাতাঘাতি করে বসে পড়ালেখা করছি। যার কারণে আমাদের স্বাভাবিক পড়ালেখায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। সরকারের কাছে আরো একটি ভবন নির্মান করে আমাদের এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
প্রধান শিক্ষক মোঃ আবদুর রব বলেন, আমাদের এই বিদ্যালয়টি ভোলার পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম একটি। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পরানগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষা আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে ভবন সংকটের কারণে পাঠদানে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একটি মাত্র দ্বীতল ভবনে আমাদেরকে ৬টি রুমে প্রায় ৮ শত শিক্ষার্থীকে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক ক্লাসে শিক্ষার্থী প্রায় দেড় শতাধিক। কিন্তু রুমের স্পেস কম হওয়ায় শিক্ষার্থীদেরকে এক টেবিলে ৫/৬জন করে বসাতে হচ্ছে। গাতাঘাতি করে বসার কারণে পড়ালেখা ব্যাঘাত ঘটছে। নতুন ভবনের জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা নতুন কোন ভবন পাইনি। আমাদের নতুন ভবন নির্মানের জন্য অনেক যায়গা থাকার পরও ভবন না পেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদানে হিমশিত খেতে হচ্ছে। এই ভবন সংকট সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কাচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম নকীব বলেন, ভবন সংকটের কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমান করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক দুরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছেনা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভবন সংকটের এই বিষয়টি দ্রুত সমাধানের দাবী জানাচ্ছি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মাদব চন্দ্র দাস বলেন, পরানগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ভোলার অনেক পুরাতন। একটি মাত্র ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সমস্যা হচ্ছে এমন একটি আবেদন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পেয়েছি। নতুন ভবন নির্মানের জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত ভবন সংকটের এই সমস্যা সমাধান হবে।