‘সচেতন হলেই অটিস্টিক শিশু স্বাভাবিক হবে’, ‘সুন্দর ব্যবহার ও সুন্দর করে বুঝালে অটিজম ভালো হবে’ চারপাশের দেয়ালে এমন নানা স্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড দিয়ে সাজানো কক্ষগুলো। আছে শিশুদের জন্য নানারকম খেলনা সামগ্রী। আছেন একদল দক্ষ প্রশিক্ষকও। বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী নিয়ে শিশুরা নিজেদের মত করে খেলাধুলা করছে। এমনই দৃশ্য দেখা যায় কুমিল্লার মুরাদনগরে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য নব্য প্রতিষ্ঠিত ‘প্রতিভা’ স্কুলে গিয়ে। স্কুলটির স্বপ্নদ্রষ্টা সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিনের উদ্যোগে মুরাদনগর উপজেলা কমপ্লেক্সে প্রতিষ্ঠিত ‘প্রতিভা’ স্কুলটি গত ৩ অক্টোবর (২০২৪) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার। উপজেলা কমপ্লেক্সের সেন্ট্রাল স্কুলের ক্যাম্পাসে চালু হওয়া "প্রতিভা" নামে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্কুলটি প্রতিষ্ঠার এক মাসের মধ্যেই স্কুলের সেবামূলক কর্মকান্ড ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ও আশার আলো জাগিয়েছে শিশুদের অভিভাবকসহ সকলের মাঝে।
স্কুলটির পরিচালকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা শারমিন ফাতেমা বলেন, প্রতিভা স্কুল একটি অনন্য ও অসাধারণ উদ্যোগ। এ উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন মহোদয়। মূল ধারার বাহিরে আমাদের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যে শিশুগুলো রয়েছে সে শিশুদের বিশেষ সেবা, চিকিৎসা ও শিক্ষার মাধ্যমে যেন মূলধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যেই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।
বিদ্যালয়টির ফিজিওথেরাপিস্ট মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি এখানে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসাবে কাজ করি। উপজেলা পর্যায়ে এ ধরণের স্কুল সচরাচর দেখা যায়না। আমরা চাই শিশুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। যদি বাচ্চার বাবা-মা আমাদের কথাগুলো অনুসরণ করে বা আমাদের দেখানো ব্যায়ামগুলো অনুকরণ করে তাহলে তারা অবশ্যই ভালো ফল পাবে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদেরকে আলাদাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই, তাই তাদের জন্যে এমন একটি বিশেষ স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সুমি আক্তার, রোজিনা আক্তার সহ অন্যান্য অভিভাবকরা বলেন, এটি ইউএনও সিফাত উদ্দিন স্যারের একটি মহৎ উদ্যোগ। মুরাদনগরে এ ধরনের একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে আমরা আগে কখনো ভাবিনি। আমাদের অনেকেই অর্থের অভাবে শহরে গিয়ে বাচ্চাদের এ ধরনের চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়না। এই স্কুলটি হওয়ায় আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। অভিভাবকরা আরো বলেন, এখানে এসে আমরা জানতে পারলাম এ ধরনের শিশুদের জন্য কি ধরনের ব্যায়ামের প্রয়োজন, কি ধরনের খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন, কিভাবে তারা কথা বলবে, আরো দশ জনের সাথে কিভাবে মিশবে তা আমরা বুঝতে পেরেছি। আমাদের শিশুদের কথা ভেবে এ ধরণের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেছেন আমরা উনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ‘প্রতিভা’ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উপজেলার প্রায় ১২ হাজার প্রতিবন্ধী পরিবার রয়েছে। তাই আমার মনে হয়েছে উপজেলায় এ ধরনের একটি সেবা সীমিত পরিসরের হলেও যেন চালু করতে পারি তাহলে মানুষকে হয়তো কিছুটা স্বস্তি দিতে পারবো। সমাজের অংশ এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মূল স্রোতে আনতে পারলেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের যে প্রত্যয় তা বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি।
বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমান বলেন, আমি সবেমাত্র এ উপজেলায় যোগদান করেছি। সাবেক ইউএনও মহোদয় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও অভিভাবকদের কথা চিন্তা করে এমন একটি মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সত্যিই প্রশংসনীয়। স্কুলটিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমি সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করবো। বিদ্যালয়টির প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।