ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সালেহ ষ্টিলসহ ইন্ডাষ্ট্রিজের বিষাক্ত বায়ুতে দুষিত হচ্ছে বায়েজিদ

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : সোমবার ৪ মার্চ ২০২৪ ০৭:১৫:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন
  • বারংবার জড়িমানা হলেও বন্ধ হয়নি কালো ধোঁয়া
  • নেই পরিবেশ ছাড়পত্র

চট্টগ্রামে পরিবেশ ও বায়ু দূষণে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুুপ, সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকান্ড, উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিভিন্ন শিল্প কারখানার কালো ধুয়া নির্গমন, শিল্প বর্জ্য, ইট ভাটার ধোঁয়া বড় ভুমিকা রাখছে। যারফলে শিশু ও মায়েদের হাপানী, এ্যাজমা, ক্যান্সার, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, শিশুর মেধা বিকাশ, জন্ডিসসহ নানা জঠিল রোগের প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। ক্রমাগত বায়ু দুষণের কারনে দেশের বানিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রাম ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এক জরিপের মাধ্যমে জানা যায়, সাধারণত বাতাসে ভাসমান পিএম-১০ প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রাম থাকার কথা থাকলেও এখানে ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। আর বায়েজিদ এলাকায় ইস্পাত শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ার কারণে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

 চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকাটিকে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এরিয়া বলা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের সুত্রে জানা যায়, শিল্প-কারখানাগুলোকে বায়ু পরিশোধন প্লান্ট বসানোর জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েক ইন্ডাষ্ট্রি বসিয়েছে, আবার কয়েক ইন্ডাস্ট্রি বসানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে, আবার অনেক প্রতিষ্ঠান প্লান্ট ছাড়াই ম্যানেজ করিয়ে চলছে। তারা সকল প্রতিষ্ঠানকে জোর চাপ দিচ্ছেন বলে জানা যায়। 

বায়েজিদের টেক্সটাইল এলাকার এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোজাম্মেল বলেন, প্রতিদিন এই এলাকাটা ইন্ডাষ্ট্রির কালো ধোয়ায় রোদের আলোতেও ঘোলা হয়ে যায়। নিশ^াস নিতে পর্যন্ত খারাপ লাগে। বাতাসের সাথে পুড়ানো গন্ধ নাকে লাগে। মাঝে মাঝে নিশ^াস বন্ধ হয়ে আসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক প্রতিষ্ঠানের কালো ধোঁয়া, নালায় রাসায়নিক ফেলা যেন নিত্য নৈমেত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় অবস্থিত সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের ক্ষতি করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। পরিবেশ সম্মত উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় গত বছর ১৫ মে প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল টিম পরিচালনা বন্ধ করা হয়েছিল এবং অর্থদন্ড করা হয়েছিল। তারপরও প্রতিদিনই সালেহ ষ্টিল ইন্ডাষ্ট্রিজের কালো ধোঁয়া পুরো এলাকাকে ধোঁয়াময় করে রাখে। সেই সাথে তাদের ষ্ক্রাব গলানো ধেকে অনেক ক্যামিক্যাল মিশ্রিত ধোয়া নির্গমন হচ্ছে ফলে এসব দুষিত ধোঁয়া পুরো এলাকার পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। কারখানা থেকে অনবরত কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ট হওয়া এলাকাবাসী পূর্ব থেকেই পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনের কাছে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কারখানাটিকে জরিমানসহ কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছিল। মোবাইল টিম প্রতিষ্ঠানকে সিলগালাও করেছিল।  তখন কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিবেশ সম্মতভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চালাবে বলে মুচলেকা দিয়েছিল। মুচলেকা দেয়ার পরও পূনরায় তারা কালোধোঁয়া উন্মুক্ত পরিবেশে ছড়িয়ে দেওয়া অব্যাহত রাখছে। 

সালেহ ষ্টিল ইন্ডাষ্ট্রিজের এডমিন এইচ আর এহতেসামকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমরা এএসএস সিষ্টেমের মাধ্যমে বায়ুকে পরিশোধণ করছি। প্রায় ৭০ পারসেন্ট বায়ু প্রক্রিয়াকরন হচ্ছে। এখন ধোয়া অনেক কম। পরিবেশের ছাড়পত্র আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে ছাড়পত্র পাবো।

এ বিষয়ে জানতে সালেহ ষ্টিল ইন্ডাষ্ট্রিজের শিমুল দাসের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি বলেন, একটি মিটিংএ আছি। পরে কথা বলবো।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন বলেন, সালেহ ষ্টিলকে কয়েকবার জরিমানা করা হয়েছে। তাদের ছাড়পত্রের আবেদন জমা আছে। তাদের এএসএস সিষ্টেম যদি সঠিক ভাবে পরিচালনা না করে তখন জরিমানা ও সিলগালা করা হবে।