যে বাদশাহি ফরমান অনুসারে সৌদি আরবের পতাকা ও জাতীয় সংগীত পরিচালিত হচ্ছে, তাতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। দেশটির পতাকায় খচিত তরবারির ওপরে যে ঈমানের ঘোষণা কালেমা তাইয়্যিবা রয়েছে, তা সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
সৌদি আরবেই প্রথম ইসলামের প্রচার করা হয়েছে। ইসলামের সর্বশেষ নবী মোহাম্মদ (সা.) এই পবিত্র ভূমিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন। এমনকি ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি হজ পালনে সারা বিশ্ব থেকে মুসলমানদের সৌদিতেই যেতে হয়।
গত সোমবার বাদশাহি ফরমানে পরবর্তনের পক্ষে সায় দিয়েছে দেশটির অনির্বাচিত মজলিশে সুরা।
এমন এক সময় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যখন সৌদির জাতীয়তা ও জাতীয় গর্বের প্রতি জোর দিয়েছেন সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমান।
উপসাগরীয় দেশটির প্রচলিত আইন ও কাঠামোয় মজলিশে সুরার সিদ্ধান্তের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তবে স্বয়ং বাদশাহের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় তাদের মতামতে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিংবা নেতৃবৃন্দের সম্মতি নিয়েই কখনো-কখনো তারা নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করেন।
অর্থাৎ সৌদির ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে তাল মিলিয়েই নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান মজলিশে সুরার সদস্যরা।
রাষ্ট্রীয় একটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, জাতীয় পতাকা, স্লোগান ও সংগীত পরিচালনা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলোর আধেয় বা কন্টেন্ট অপরিবর্তিতই থাকতে পারে।
এ নিয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি মসজিশে সুরা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, রাষ্ট্রীয় প্রতীক ব্যবহারের আরও স্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ, জাতীয় পতাকা ও সংগীতের গুরুত্ব সম্পর্কে সতর্কতা বাড়াতে কিংবা অবমাননা ও অবহেলা থেকে জাতীয় পতাকা সুরক্ষায় এই পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সৌদি পতাকা অবমাননার দায়ে গত সপ্তাহে চার বাংলাদেশি প্রবাসীকে গ্রেফতার করেছে সৌদি পুলিশ। সৌদি সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, পতাকা পরিচালনার প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো বাদশাহি ফরমানের একটি খসড়া সংশোধনী অনুমোদনে ভোট দিয়েছে মজলিশে সুরা।
সাদ আল-কাতাবি নামের এক সুরা সদস্য এই প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছেন। সুরা সদস্যদের মধ্যে আলোচনার আগে একটি উপ-কমিটি এ নিয়ে গবেষণা করেছে।
এক সময়ের অতিরক্ষণশীল সৌদিকে বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন দেশটির কার্যত নেতা মোহাম্মদ বিন সালমান। তার বাবা অশীতিপর বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদের সমর্থনে তিনি সৌদি আরবের পরিচয়কে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সঙ্গে ইসলামি ঐক্য কেন্দ্রীক চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে বর্তমান সৌদি। যেখানে তাদের পরিচয় কেবল ধর্মীয় ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে না।
সম্প্রতি সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে ২২ ফেব্রুয়ারিকে পালন করতে একটি ফরমান ঘোষণা করা হয়েছে। উসমানীয়দের হাতে বিলুপ্ত হওয়ার আগে অষ্টাদশ শতকে প্রথম সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন ইমাম মোহাম্মদ বিন সৌদ।
চলতি সপ্তাহে আরবের কফিকে সৌদি কফি নামকরণ করতে রেস্তোরাঁ ও কফিশপগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৌদি পরিচয় ও ঐতিহ্যকে যেসব সাংস্কৃতিক উপাদান দিয়ে শনাক্ত করা হয়, তা নিয়ে নতুন করে সরব হয়েছে দেশটির সরকার।
১৯৭৩ সালে সৌদি সবুজ পতাকায় ইসলামের একাত্মবাদের ঘোষণা যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। ক্যালিগ্রাফি করে লেখা কালেমার নিচে একটি পতাকা খচিত রয়েছে।