দেখতে সুদর্শন যুবক মোঃআব্দুল্লাহ্। গ্রামে গড়ে তুলেছেন সুবিশাল বাগানবাড়ি। বাড়িতে সুরম্য অট্টালিকা। এলাকাতেও রয়েছে বেশ প্রভাব প্রতিপত্তি।করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অথচ লোকচক্ষুর আড়ালে এই আব্দুল্লাহ আন্তঃজেলা গরুচোর চক্রের সক্রিয় সদস্য।গতকাল ১৩ মার্চ রাতে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় এলাকায় গত কয়েক দিনে চুরি হওয়া বেশ কয়েকটি গরু।
এলাকার লোকজন জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে রাতের আঁধারে গত বেশ কিছুদিন ধরে চুরি হচ্ছে একের পর এক কৃষকের গরু।লক্ষাধিক টাকার গরু চুরি যাওয়ায় দিশেহারা কৃষক ও গেরস্ত। শক্তিশালী চোরচক্র প্রায় প্রতিরাতেই হানা দিচ্ছে উপজেলার কোনো না কোনো গ্রামে।প্রভাবশালী এ চোর চক্রের এক সদস্য এই আব্দুল্লাহর বাড়িতে গড়ে তোলা গোপন আস্তানা থেকে গতকাল ১৩ মার্চ রাতে নবীনগর থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম হানা দিয়ে ৬ টি চোরাই গরু সহ আব্দুল্লাকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হওয়া ৬টি গরুর মধ্যে ৪টি গত দু'দিন আগে উপজেলার রসুল্লাবাদ ইউনিয়নের কালঘড়া গ্রাম থেকে চুরি যাওয়া। ১ টি গরুর এখনো হদিস মেলেনি বলে জানিয়েছেন ঐ কৃষক। এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র সক্রিয় থাকলেও প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের অনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে কেউ ভয়ে মুখ খোলেনা।আটক চোর জনপ্রতিনিধি হতে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদে আপেল মার্কায় নির্বাচন করেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ধরা পরার আগ পর্যন্ত এলাকাবাসী কখনোই টের পায়নি সে গরুচোর চক্রের সক্রিয় সদস্য।
এলাকাবাসী জানান, গত কয়েকদিন আগে উপজেলার রছুল্লাবাদ ইউনিয়নের কালঘড়া গ্রামের মেজবাহ উদ্দিন নামক এক দরিদ্র পরিবারে সর্বশেষ সম্বল ৬টি গরু চুরি হলে সেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এতে নড়েচড়ে উঠে নবীনগর থানা পুলিশ।
এর প্রেক্ষিতে উপজেলার শ্রীঘর গ্রামের বাসিন্দা নুরু মিয়ার পুত্র আবদুল্লাহ নামক প্রভাবশালী চোর চক্রের এক সদস্যের বাড়িতে সন্দেহজনক আচরণ করায় গতকাল ১৩ মার্চ রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নবীনগর থানা পুলিশের একটি টিম হানা দিয়ে ৬ টি চোরাই গরু সহ তার সাথে জড়িত আবদুল্লাহকে আটক করেন। পুলিশ আব্দুল্লাহর বিলাসবহুল বাড়ির পেছনের দিকে গুপ্ত একটি গোয়ালঘর থেকে ৬টি গরু উদ্ধার করেন।
উদ্বারকৃত গরু থেকে ৪টি গরু নিজের বলে দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন দরিদ্র কৃষক মেজবাহ উদ্দিন।
এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে এই আবদুল্লাহ এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ গরুচোর চক্রের সঙ্গে সক্রিয় থেকে অসংখ্য গরু চুরি করিয়েছেন,তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ ভয়েও কথা বলতে নারাজ।বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে গরু চুরের কারণে।তারা আইনের আওতায় আনায় বেশ আনন্দিত,সকল গরু চুরির তথ্য উদঘাটন করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।
এদিকে এলাকাবাসী আরো জানান,আটককৃত গরুচোর আব্দুল্লাহ নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে জাহির করে তার অপকর্ম চালিয়ে যেতে জনপ্রতিনিধি হওয়ার লক্ষ্যে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদে আপেল মার্কায় নির্বাচন করেছিলেন। যদিও নির্বাচনে সে পাশ করেন নি।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার ওসি তদন্ত সজল দাস বলেন,গত ১১ মার্চ ৫টি গরু চুরির ঘটনায় নবীনগর থানায় একটি এজাহার দায়ের হয়,সেই আলোকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা আবদুল্লাহর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৬টি গরু উদ্ধার করি,এলাকাবাসীর অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে।তার সাথে আর কে কে জড়িত এই চুরির ঘটনায় সবকিছু খুঁজে বের করা হবে।