ঢাকা, বুধবার ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ই মাঘ ১৪৩১

"ঋণের ভারে জর্জরিত দেশ: ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সরকারের ঋণ ১৮ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা"

আহমেদ শাহেদ | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১০ জানুয়ারী ২০২৫ ০৫:১৯:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সরকারের দেশি-বিদেশি মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ট্রেজারি ও ঋণব্যবস্থাপনা শাখা থেকে প্রকাশিত এ তথ্য সরকারি ঋণের ক্রমবর্ধমান চাপ এবং এর বহুমুখী প্রভাব নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সরকারি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মোট ঋণের মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। এই ঋণ মূলত ব্যাংক ব্যবস্থা, ট্রেজারি বিল, বন্ড এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। এ ঋণ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে, যার একটি বড় অংশ এসেছে বৈশ্বিক উন্নয়ন সংস্থা এবং বহুপক্ষীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের ঋণ জাতীয় অর্থনীতির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের হার ২০ দশমিক ২১ শতাংশ এবং বিদেশি ঋণের হার ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২১ থেকে ২০২৪ অর্থবছরের মধ্যে ঋণের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে:

* ২০২১ সালে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।

* ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।

* ২০২৩ সালে ঋণের অঙ্ক দাঁড়ায় ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকায়।

* ২০২৪ সালের জুনে এটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকায়।

২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র এবং সাধারণ ভবিষ্য তহবিল থেকেও বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। সে সময় বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় ঋণের অংশ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ঋণের বর্তমান চিত্র সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় সংকুচিত করছে। বিশেষত, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি জনগণের জীবনযাত্রায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।

এ ছাড়া বৈষম্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়ে তারা বলছেন, সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং কিছু অযৌক্তিক প্রকল্প গ্রহণের ফলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন যে, ঋণের পরিমাণ এখনও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের মধ্যে রয়েছে। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেওয়া ঝুঁকিমুক্ত। বাংলাদেশের ঋণ সেই সীমার নিচেই রয়েছে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঋণ ব্যবস্থাপনায় যথাযথ স্বচ্ছতা এবং অগ্রাধিকার নিশ্চিত না হলে এ ঋণের চাপ ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটে রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে অযৌক্তিক প্রকল্প এবং অব্যবস্থাপনা যদি অব্যাহত থাকে, তবে এটি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উভয় ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।

সরকারি ঋণের এই বিশাল অঙ্ক জাতীয় অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। এর সুফল পেতে ঋণ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বায়ান্ন/এসএ/পিএইচ