দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোববার (৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে জনগণের কান্ডারী হিসাবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ৩ স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ নৌকার মাঝিরা। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল ইসলাম সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণা করলে প্রার্থীদের জয়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিরা আনন্দে মুখরিত হয়ে সিমীত আকারে বিজয় মিছিল করেন বিজীতদের সমর্থকরা।
বিজয়ী সংসদ সদস্যরা হলেন যারা
চট্টগ্রাম-১(মীরসরাই) আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল। তিনি এই আসন থেকে ৮৯ হাজার ৬৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন (ঈগল) পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯৯৬ ভোট।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ১৪২ কেন্দ্রে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি (নৌকা) পেয়েছেন ১ লাখ ৬৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব (তরমুজ) পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৬৬ ভোট। সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ (একতারা) পেয়েছেন ৩ হাজার ১৫১ ভোট।
চট্টগ্রাম-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫৪ হাজার ৭৫৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএমএ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন ২৮ হাজার ৭০ ভোট।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আল মামুন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এস এম আল মামুন পেয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিদারুল কবির পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৮০ ভোট। এছাড়া ঈগল প্রতীক প্রার্থী মো. ইমরান পেয়েছেন ৪ হাজার ৫০০ ভোট।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে টানা চতুর্থবারের মত জয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি পেয়েছেন ৫০ হাজার ৯৭৭ ভোট। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকের প্রার্থী মো. শাহজাহান পেয়েছেন ৩৬ হাজার ২৫১। তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন পেয়েছেন ১ হাজার ৪০১ ভোট। এ আসনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৬টি।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী টানা পঞ্চমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৫৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজম পেয়েছেন ৩ হাজার ১৫৯ ভোট। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ সফিক-উল আলম চৌধুরী পেয়েছেন ২ হাজার ৬৫৪ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের স ম জাফর উল্লাহ চেয়ার প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৯৩৭ ভোট ও তৃণমূল বিএনপির (সোনালি আঁশ) প্রার্থী মো. ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী পেয়েছেন ১ হাজার ১৪৯ ভোট। এখন টানা পঞ্চমবার নৌকা প্রতীকে জিতলেন তিনি।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী) আংশিক আসন চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। মোট কেন্দ্র সংখ্যা ১০৩টি। তিনি এই আসন থেকে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ইকবাল হাছান (মোমবাতি) পেয়েছেন ৯ হাজার ৩০১ ভোট। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির মুসা আহমেদ রানা (লাঙল) ২ হাজার ২০৬ , তৃণমূল বিএনপির খোরশেদ আলম (সোনালি আঁশ) ১ হাজার ৩৩১, ইসলামিক ফ্রন্টের আহমদ রেজা (চেয়ার) ১ হাজার ৩৯০, সুপ্রিম পার্টির মোরশেদ আলম (একতারা) ১ হাজার ১৩০ ভোট পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম -৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে ফলাফলে বেসরকারি ভাবে জয়ী হয়েছেন কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম। তিনি পেয়েছেন ৭৮ হাজার ২৬৬ ভোট তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরী পেয়েছেন ৪১ হাজার ৫০০ ভোট। এছাড়া জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সোলাইমান আলম শেঠ পেয়েছেন ৮ হাজার ২৩২ ভোট। এ আসনে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৮৪টি।
চট্টগ্রাম-৯(কোতোয়ালী) আসনে বড় ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী সনজিদ রশিদ চৌধুরী পেয়েছেন ১ হাজার ৯৮২। এ ছাড়া এ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী আবু আজম পেয়েছেন ১ হাজার ৫৩২ ভোট।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাঁচলাইশ) আসনে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি পেয়েছেন ৫৯ হাজার ২৪ ভোট। তার নিটকতম প্রতিদ্বন্ধী ফুলকপি প্রতীকের প্রার্থী মনজুর আলম পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৫৩৫ ভোট। এছাড়া ফরিদ মাহমুদ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৮ ভোট। এ আসনে কেন্দ্র সংখ্যা ১৪৮টি।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসনে টানা জয় পেয়েছেন এম আবদুল লতিফ। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হলেও দলের প্রভাবশালী নেতাদের একাংশের বিরোধিতার মধ্যেও ভোটযুদ্ধে জয়ী হলেন লতিফ। তিনি পেয়েছেন ৫১ হাজার ৪৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিয়াউল হক সুমন পেয়েছেন ৪৬ হাজার ৫২৫ ভোট।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম এই আসন থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে সামশুল পেয়েছেন মাত্র ৩৫ হাজার ২৪০ ভোট। এছাড়া আরেক প্রার্থী মোহাম্মদ নুরুচছফা সরকার (লাঙ্গল) প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৩৭৮ ভোট। এ আসনে মোট কেন্দ্র রয়েছে ১০৮টি।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। মোট ৪৬টি ভোটকেন্দ্র। এ আসনে মোট ভোটার এক লাখ ২৬ হাজার ২৫৭ জন। নৌকা প্রতীক নিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী পেয়েছেন ৬০ হাজার ৭৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ইসলামী ফ্রন্টের মাস্টার আবুল হোসেন (মোমবাতি) পেয়েছেন এক হাজার ৬৬১ ভোট। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুর রব চৌধুরী টিপু (লাঙ্গল) পেয়েছেন এক হাজার ৯২ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্টের স ম হামেদ হোসাইন (চেয়ার) পেয়েছেন ২৯৩ ভোট, খেলাফত আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হক (বটগাছ) পেয়েছেন ২৮৫ ভোট, তৃণমূল বিএনপির মকবুল আহমদ চৌধুরী সাদাদ (সোনালী আঁশ) পেয়েছেন ২৭৮ ভোট, সুপ্রিম পার্টির মো. আরিফ উদ্দিন (একতারা) পেয়েছেন ১৮২ ভোট।
চট্টগ্রাম-১৪, (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম। তিনি এই আসন থেকে ৭১ হাজার ১২৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল জাব্বার চৌধুরী পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৮৪ ভোট।
চট্টগ্রাম-১৫(সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেব। তিনি এই আসন থেকে ৮৫ হাজার ৬২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী নৌকা প্রতীকের পেয়েছেন ৩৯ হাজার ২৫২ ভোট। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকে মোহাম্মদ ছালেম পেয়েছেন ৩৮০ ভোট। মিনার প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ২৯৪ ভোট। মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী হোসাইন পেয়েছেন ৩৬২ ভোট। এ আসনে মোট কেন্দ্র সংখ্যা ১৫৭টি।
চট্টগ্রাম-১৬(বাঁশখালী আসন) বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমান। মোট কেন্দ্র সংখ্যা ১১৪টি। এ আসনে ৩৬ হাজার ৯৬৮ ভোট বাতিল করা হয়। তিনি এই আসন থেকে ৫৭ হাজার ৪৯৯ হাজার পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ কবির লিটন (ট্রাক) পেয়েছেন ৩২ হাজার ২২০ ভোট। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের মোহাম্মদ মহিউল আলম চৌধুরী (মোমবাতি) ১ হাজার ১২৫, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল মালেক পেয়েছেন ৫০৩ ভোট। এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
উল্লেখ্যযে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে মোট প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ১২৫ জন প্রার্থী।