ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা: বাড়ছে জনদুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৮ অগাস্ট ২০২৩ ০৮:০৫:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

 

 

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানাধীন ডিসি রোডের কালাম কলোনিতে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন মো. মোমিন (৪৫)। টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চার দিন ধরে পরিবার নিয়ে পানিবন্দি তিনি। তার বাসায় জ্বলছে না রান্নার চুলাও। মোমিনের পরিবারের মতো নগরীতে কমপক্ষে ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব পরিবারে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।

 

মোমিন  বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার বাসায় পানি ঢুকেছে। দিন দিন পানি বেড়েই চলেছে। এখনও হাঁটু সমান পানি রয়েছে। তবে সড়কের চেয়ে আমার বাসাটি উঁচু হওয়ায় পানি কিছুটা কম উঠেছে। সড়কে এখনও কোমর সমান পানি। পানিতে ডুবে আছে রান্নাঘর। যে কারণে চার দিন ধরে আমার বাসায় রান্না হচ্ছে না। পানিতে বাসার অনেক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।’

 

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতিও। ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে নগরীর রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘর-বাড়িসহ নানা স্থাপনা।

 

 

নগরীর চক সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রয়েছে চকবাজার এলাকার চক সুপার মার্কেট। এ মার্কেটে পানি ঢুকেছে। মার্কেটের নিচতলায় ৫৫টি দোকান আছে। তার মধ্যে ৩৫-৪০টিতে পানি ঢুকেছে। এতে কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।’

 

পানিতে ডুবেছে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় অবস্থিত স্বজন সুপার মার্কেটের নিচতলা। নিচতলায় থাকা শতাধিক দোকানেই পানি ঢুকেছে বলে দাবি এ মার্কেটের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘পানিতে এবার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ৪০ লাখের বেশি টাকার পণ্যের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। গত চার দিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে এ মার্কেট খোলা যায়নি।’

 

ডুবে যাওয়া সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

অন্যান্য এলাকার মতো ডোবেনি দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। তবে খাতুনগঞ্জ-চাকতাই এলাকার বেশ কিছু আড়তে দুই আগস্টের বৃষ্টিতে কয়েকশ’ দোকানে পানি ঢুকেছিল। এ সময় কমপক্ষে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাসেম। তিনি বলেন, ‘চাকতাই-খাতুনগঞ্জে খালের মুখে স্লুইচ গেট নির্মাণ করেছে সিডিএ। এ কারণে জোয়ারে এবার পানি প্রবেশ করতে পারেনি। বেচা-কেনা নেই বললেই চলে। জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য আনা-নেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে ব্যবসায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।’

 

রিয়াজুদ্দিন বাজার বণিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আবদুল শুক্কুর বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় রিয়াজুদ্দিন বাজারে এবার ২০০ থেকে ২৫০টি দোকানের পণ্য নষ্ট হয়েছে। তবে এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করা যায়নি। কাজ চলছে। জলাবদ্ধতার কারণে চার দিন ধরে এই বাজারে দোকানপাট খোলা যাচ্ছে না।’

 

তিনি আরও জানান, এবারই প্রথম রিয়াজুদ্দিন বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। আগে কখনও পানি না ঢোকায় দোকানিরা সেভাবে প্রস্তুতও ছিলেন না, যে কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। এখানে কাপড়ের দোকান, সুপারির গুদাম, আচারের দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে চারটি প্রকল্পের কাজ। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে হলেও মিলছে না কোনও সুফল। বরং দিন দিন বাড়ছে জলাবদ্ধতার সমস্যা।