- দুমুঠো খাদ্য কিনতে উপছেপড়া ভীড় হোটেল গুলোতে
- বাড়ছে মানুষের ক্ষোভ
তীব্র গ্যাস সংকটে চট্টগ্রাম নগরীর মানুষ নাকাল। চুলাতে আসছেনা গ্যাস , জ¦লছেনা আগুন। বেচে থাকার জন্য রান্না করা যাচ্ছেনা। এই সংকটে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ছয় লাখ এক হাজার ৯১৪জন গ্রাহক আছে গ্যাসহীন বিপাকে । এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি। গ্যাস না থাকায় গত কয়েকদিন থেকে খাবার হোটেলগুলোতে ভিড় করছেন গ্যাস ভোক্তারা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষকে খাবার সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। এক প্রকার খাবার রান্নায় সংকটেই পড়ে গেছে চট্টগ্রামের মানুষ। সংকটের মধ্যে বেশি দামে খাবার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
গৃহস্থালী, সিএনজি পাম্প, কারখানা সবত্রই গ্যাসের ঘাটতি। পরিবারের সদস্যরা অনেক কষ্ট করে লাকড়ী চুলা ব্যবহার করে রান্না বা গৃহস্থালীর কাজ শেষ করছেন । আবার অনেকে হোটেল নির্ভর হয়ে উঠছে। তবে খাবারের দাম বেশী হওয়ায় অনেকে হিমশিম খাচ্ছে তাদের দৈনিক খাবারের চাহিদা মিটাতে।
জানা যায়, জানা যায়, চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ তদারকি করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড। গ্যাসের সরবরাহের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করে আমদানিকৃত এলএনজির ওপর। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রামে ৪০০-৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হলেও এখন মাত্র ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রাপ্ত মোট গ্যাসের মধ্যে প্রায় ১২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দুটি সার কারখানা ও একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া অবশিষ্ট গ্যাস নগরবাসী, শিল্প ও সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বিতরণ করা হয়, যা নগরীর যথেষ্ট নয়।’ কর্ণফুলী গ্যাসের কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজারের মহেশখালীতে সাগরের তলদেশের সঞ্চালন পাইপলাইনের (কনভার্টারের) মাধ্যমে এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ হয়। দুটি কনভার্টারের মধ্যে একটি গত নভেম্বর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। একটি পাইপলাইন দিয়েই এতদিন সরবরাহ চলছিল। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রক্ষণাবেক্ষণ হওয়া কনভার্টারটি কমিশনিং করা হয়েছে। পাশাপাশি অপর কনভার্টারটি রি-কমিশনিং করা হয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। কিন্তু মধ্যরাত থেকে নতুন কমিশনিং হওয়া কনভার্টারের জেনারেটর বিকল হয়ে গেছে। এজন্য পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
দেশের অন্যতম স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গ্যাস সংকটে তাদের জ্বালানি চাহিদার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিজেল ব্যবহার করতে হয়, যাতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে কঠিন হয়ে পড়ছে তাদের মুজুরী খরচসহ অন্যান্য খরচ মিটাতে।
নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বড় হোটেল গুলোর পাশাপাশি ছোট ছোট ভাতঘরগুলো পর্যন্ত জ্যামে পূর্ন। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে দোকানদারের উপর। খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে কে কার আগে খাবার নিবে তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগীতা। অনেকে আবার আগে না পেয়ে দোকানীর সাথে ঝগড়া করছে। এমনই একজন ক্রেতা আমিনুর রহমান বলেন, ঘরে গ্যাস নাই, হোটেলে খাবার শেষ । কি করবো বুঝতে পারছিনা। ছেলে মেয়েদেরকে এখন শুকনো খাবার দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।
চান্দগাঁও এলাকার এক পরিবারের কর্তা নুরে আলম বলেন, গত কয়দিন ধরেই গ্যাস নেই বললেই চলে। হোটেল ওয়ালারা সুযোগে পকেট কাটছে। গ্যাস অফিসতো মাস শেষে বিলটা ঠিকই নিবে, তখন বলবেনা যে, গ্যাসতো ছিলনা এই মাসে বিল নিবোনা। দুইদিকেই আমাদের খরচ।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আমিনুর রহমান, 'গতকাল রক্ষাবেক্ষণ হওয়া কনভার্টারটি কমিশনিং করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যটি রি-কমিশনিং করে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর জন্য প্রস্তুুত করা হচ্ছিল। এরমধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ হওয়া কমিশনিং করা কনর্ভাটারটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এজন্য গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ কখন শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সংকট কতদিন থাকবে তা এখনো সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছেনা।
এদিকে আজ শুক্রবার দুপুরে মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়. তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তরের টার্মিনালে কারিগরি ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাস সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, আবাসিকে আরো ২৫ হাজার গ্রাহক গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় আছেন। এসব আবেদনকারীরা বছরের পর বছর ধরে সংযোগ না পেয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন আদালতের।’