সুসজ্জিত তোরণ, দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা আর নজরকাড়া আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে টাঙ্গাইল পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) মাসব্যাপী শিল্প মেলা। ১৮ দিনেও জমে উঠেনি এই মেলা। এ মেলায় তরুণ-তরুণীসহ সকল বয়সের মানুষ ঘুরতে আসছেন। সুবিশাল পরিসরে নান্দনিক সজ্জায় সাজানো হয়েছে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। টাঙ্গাইল পৌর শহরের কালেক্টরেট মাঠে নান্দনিক আদলে সাজানো পানির ফোয়ারা আকৃষ্ট করছে শিল্প ও পণ্য মেলায় আগত দর্শকদের। রকমারি পণ্যে দিয়ে সাজানো হয়েছে দোকানগুলো। তবে নেই কোন ক্রেতা, হতাশায় বিক্রেতারা।
মেলা চত্বরে শিশুদের বিনোদনের জন্য অনেকগুলো রাইডস আকৃষ্ট করছে মেলায় আগত শিশুদের। নাগরদোলা, নৌকা, ট্রয় ট্রেন প্রতিটি রাইডসে চড়ে খুশি তারা।
শতাধিক স্টল দিয়ে সাজানো মাসব্যাপী এ মেলা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা বয়সি মানুষ ঘুরতে আসছেন মেলায়।
দর্শনার্থীরা জানান, এ রকম বড় মেলা টাঙ্গাইলে কখনও হয়নি। পুনাক মেলায় এসে অনেক ভালো লেগেছে। মেলায় মোটামোটি সব ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। পণ্য গুলোর দাম অনেক বেশি। যদি পণ্য গুলোর দাম কম হতো ক্রেতারা বেশি পণ্য ক্রয় করতে পারতো। তাদের দাবি আয়োজকদের কাছে এ রকম মেলার প্রতি বছর আয়োজন করা হোক।
কয়েকজন বিক্রেরা জানান, তাদের ভিটি ভাড়া অনেক বেশি। সব কিছুর দামও বেশি আগের তুলনায় পণ্য গুলোর দাম বেশি নিতে হচ্ছে। যদি জিনিস পত্রের দাম কম হতো তাহলে তারা বিক্রিও বেশি করতে পারতো।
চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার বিক্রেতা জমিস মিয়া বলেন, মেলায় ভিটি ভাড়া অনেক বেশি। লোকজন হলেও বেচাকেনা কম। মানুষ কেনাকাটা কম করে। এরকম বেচাকেনা হলে আমাদের লস হবে ।
বিক্রেতা রাকিব হোসেন বলেন, মেলায় বেচাকেনা তেমন নেই। কর্মচারী খরচ ও তিনবেলা খাবারের খরচ সব মিলে আমাদের সে রকম বিক্রি হচ্ছে না। এভাবে বেচাকেনা হলে আমাদের আরও ক্ষতির মুখে পরতে হবে।
বিক্রেতা আহাত মিয়া বলেন, মেলায় বেচাকেনা ভালো না। মানুষ কেনাকাটা কম করে। সবাই ঘুতে আসে কেউ কিনতে আসে না। আমাদের প্রতিদিন খরচ অনুযায়ী বিক্রি তেমন হচ্ছে না। এরকম বেচাকেনা হলে লাভ তো দূরের কথা আমাদের আরও লুকসান হবে।
দর্শনার্থী ফরিদুল আলম বলেন, আমাদের টাঙ্গাইলে ভালো কোনো পর্যটন বা ঘোরার তেমন কোনো ভালো জায়গা নেই। বিশেষ করে শিশুদের জন্য। মেলায় শিশুদের জন্য রাইডসগুলো বেশ সুন্দর। শিশুরা চড়ে অনেক আনন্দ পাচ্ছে।
মেলায় ঘুরতে আসা শিশু জান্নাতুল মায়দা বলেন, মেলায় অনেক ভাল লেগেছে। অনেকগুলো রাইডসে উঠেছি। আগে আর এ ধরনের রাইড কখনো আসেনি।
দর্শনার্থী লোকমান তালুকদার বলেন, মেলায় টিকিটের মূল্যটা বেশি হয়ে গেছে। ২০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা করলে লোকজন মেলায় আরও বেশি আসতো। মেলায় পণ্যের দাম দেড়গুণ। বিশেষ করে খাবারের দাম আরও বেশি।
কলেজ পড়–য়া ছাত্রী সাইমা আক্তা সাদিয়া বলেন, মাসব্যাপী পুনাকের এ মেলায় এসে আমার খুব ভাল লেগেছে। আমি আমার বান্ধুবীদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছি। মেলায় অনেক নতুনত্ব পণ্য রয়েছে। আবার আসবো পরিবার নিয়ে ঘুরতে। এরকম আয়োজন প্রতি বছর করা হোক।
তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মোহাদ্দিস সিকদার আস সামি বলেন, আমার আব্বু-আম্মুর সাথে মেলায় ঘুরতে এসেছি। আমি রাইডসে উঠেছি, ট্রেনে উঠেছি অনেক ভালো লেগেছে।
রাবেয়া খাতুন বলেন, মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি অনেক ভালো লেগেছে। মেলায় নানা রকমের দোকান বসেছে। তবে পণ্য গুলোর দাম অনেক বেশি। সে জন্য কেনকাটা করা হয়নি।
পুনাক মেলার আয়োজক কমিটির ম্যানেজার আব্দুস সালাম বলেন, মেলা পুরোপুরি এখন জমে উঠে নাই। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য প্রচার-প্রচারণা তেমনি করা হয়নি। পরীক্ষা শেষ হলে প্রচার-প্রচারণা আরও ভালো করে করা হবে। আশা করি তখন মেলায় আরও লোকজন বাড়বে। এ মেলা দেড় মাস চলবে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর টাঙ্গাইল পৌর শহরের কালেক্টরেট মাঠে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) উদ্যোগে শিল্প ও পণ্য মেলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক উদ্বোধন করেন।