২০১৯ সালে ৪৮ কোটি টাকার এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে সত্যতা যাচাইয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে(চসিক) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথম দফায় প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করে চসিক। তখন পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও কোন কারণ না দর্শিয়ে তাদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালে চসিক দ্বিতীয়দফায় দরপত্র আহ্বান করেন। এই দফায় ছয়টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও কাজের অনুমতি মেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস লি এর। প্রথম দফায় অংশ নেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন অযোগ্য ঘোষণা করে বাতিল করা হয়েছে চসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী তার কোনো কাগজপত্র দুদককে দেখাতে পারেননি। প্রকল্পটির এ অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা তদন্তের সিদ্ধান্ত দেন সিটি মেয়র নিজেই। এরপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৪ মার্চ তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটি তিন মাসের মধ্যই জুনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এই প্রতিবেদেনে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় ক্যাবল ছিল নিম্নমানের, স্থাপিত বৈদ্যুতিক তারের গুণগত মান সঠিক ছিলনা, নিম্নমানের হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে স্পার্ক সৃষ্টি হওয়া , বিভিন্ন বৈদ্যুতিক পোলের সমস্যা চিহ্নিত হয়। স্থাপিত ক্যাবলের মান মোটেই ভাল ছিলনা। প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্ত কমিটি এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের রুপ দেখতে জিআই পোল বসানো নিয়ে অসামন্জস্য, বছর না পেরুতেই পোলে জং ধরেছে বলে দেখতে পায় তদন্ত কমিটি।
এ প্রকল্পে অর্থ আত্মসাৎ ও ঠিকাদার নিয়োগে ‘অনিয়ম’ এর অভিযোগের সত্যতা সন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার চসিকের টাইগারপাসস্থ কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুদকের তিন সদস্যের এনফোর্সমেন্ট টিম। জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয় জাইকার অর্থায়নে। নগরের ৩০টি সড়কে ৭৫ কিলোমিটার সড়কে এলইডি বাতি স্থাপনে চারটি প্যাকেজে ৪১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় ২০২০ সালের ১৪ মে কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস লি.। যা পরবর্তীতে প্রায় ৪৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০২০ সালের ৯ জুন প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করা হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।
চট্টগ্রাম-১ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এনামুল হক এনাম এই প্রকল্পে হওয়া অনিয়ম অভিযোগের তদন্ত টিমে নেতৃত্ব দেন। গতকাল চসিকের প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কুমার দাশের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হলেও প্রকল্পের সকল কাগজপত্র সরবরাহ করতে পারেননি বলে জানান দুদক কর্মকর্তা।
দুদক কর্মকর্তা এনামুল হক প্রতিবেদককে বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের নথিপত্রে অনেক অসামাঞ্জস্য পাওয়া গেছে। ১ম দরপত্র আহ্বান বাতিল প্রসঙ্গে ঝুলন কুমার দাশ রেকর্ডভিত্তিক কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। দ্বিতীয় দফা দরপত্র প্রক্রিয়ার নির্বাচিত দরপত্র প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস ব্যতীত অবশিষ্ট দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী ৫টি প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র সংরক্ষিত নেই। তাদের কেন বাদ দেওয়া হলো সেটিও যাচাই–বাছাই করছি। ই–জিপির মাধ্যমে টেন্ডার হয়েছে।দেখলাম, ই–জিপিতেও কোনো কাগজপত্র নেই। আরো কাগজপত্র আমরা চেয়েছি। তারা যেসব কাগজপত্র সরবরাহ করবে সেগুলো যাচাই–বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দুদক কার্যালয়ে প্রেরণ করবো। তারপর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।
চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষে বুঝে নেয়া ছাড়া আমাদের কোনো দায়–দায়িত্ব ছিল না। দায়িত্ব হচ্ছে জাইকা এবং মূল্যায়ন কমিটির। এলজিইডির সেই মূল্যায়ন কমিটিতে আমি ছিলাম না। মূল্যায়নের বিষয়টা ঢাকায় হয়েছে। দুদকের কর্মকর্তারা যে কাগজপত্র চেয়েছে তাদের তা দিয়েছি।