ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নগরে বাড়ছে টোকেন লাইসেন্সের ব্যাটারী চালিত রিক্সাসহ বিদ্যুত গিলার গ্যারেজ

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৪১:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম জেলার উপজেলাসহ মহানগরের অলি গলিতে প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যাটারি চালিত রিকশা। প্রশাসনের সামনেই মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগর ও উপজেলাগুলোতে প্রায় ৩০হাজার ব্যাটারী রিক্সা। দীর্ঘসময় যানজট ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে জীবনও দিতে হয়েছে অনেককে।  সেই সাথে বাড়ছে ব্যাটারী চালিত রিকসার অবৈধ গ্যারেজ। যেখানে প্রতিনিয়ত চুরি হয় বিদ্যুত। অভিযোগ রয়েছে,  তারা বিভিন্ন উপায়ে বিদ্যুত অফিস থেকে মিটার সংগ্রহ করলেও রাতে মুল মিটার থেকে বিদ্যুত ব্যবহার না করে চোরাই পন্থায় বিদ্যুত ব্যবহার করে। এসব গ্যারেজের নাই ট্রেড লাইসেন্স। ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে উঠা লাইসেন্স বিহীন অবৈধ রিক্সা গ্যারেজগুলোতে হরহামেশায় বসে জুয়ার আসর। ব্যাটারী চালিত রিক্সা দু একটা পুলিশ টু করলেও গ্যারেজগুলোতে নেই বিদ্যুত অফিস বা কোন প্রশাসনিক অভিযান। 

জানা যায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এক শ্রেনী সুবিধাভোগী মানুষ টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে বাধা বিপত্তিহীন এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলাচলকে কেন্দ্র করে প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। জানা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাও এই সিন্ডিকেটগুলো থেকে সুবিধা নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, চালকসুত্রে জানা যায়, প্রতি গাড়ি থেকে টোকেন বাবদ উত্তোলনের টাকার ভাগ দিতে হয় কয়েকটি মহলকে। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, মুল সড়কে আসলে পুলিশ গাড়ি টু করলেও পরে জরিমানা দিয়ে তারা রুটে ফিরে আসে। যার ফলে কোন আইনের তোয়াক্কা করছেনা ব্যাটারী চালিত রিকসার মালিকরা। এসব ব্যাটারী চালিত রিক্সার গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করার অভিযোগ থাকলেও কোন ভুমিকা নিচ্ছেনা বিদ্যুত অফিস।।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলাগুলোর কাচা পাকা রাস্তার পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরীর এমনকোন অলিগলি নেই যেখানে ব্যাটারী চালিত রিকসা নেই। তাদের দৌরাত্নে বন্ধ হতে বসেছে ঝুকিহীন প্যাডেল চালিত রিকসা। নগরীর অক্সিজেন, খুলশী থানাধীন নাসিরাবাদস্থ পলিটেকনিক্যাল এলাকা, বায়েজীদ, দুই নম্বর গেট, চান্দগাঁও, পশ্চিম বাকলিয়া, পাঁচলাইশ, লালখান বাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, দেওয়ানবাজার, শেরশা, বাংলাবাজার, চন্দ্রনগর, জামালখান, দিদার মার্কেট, বাকলিয়া এক্সেস রোড, সৈয়দ শাহ রোড, আমবাগান, বগারবিল রাহাত্তারপুল, পূর্ব বাকলিয়া বলিরহাট, একেখান, ভাটিয়ারী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই অবৈধ ব্যাটারী রিকসা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমিতির এক সদস্য থেকে জানা যায়, এসব সড়কে প্রায় ১২ হাজার রিক্সা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব রিক্সা থেকে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দৈনিক চাঁদা নেয়া হয়। এতে দৈনিক ১২লক্ষ টাকা অবৈধ চাঁদা উত্তোলন হয়। এই হিসাবে মাস আর বছরের হিসাব মিলালে চাঁদার পরিমান সবার চোখ আশ্চর্যবোধক কপালে উঠে যাবে।

সরেজমিনে গেলে আরো দেখা যায়, যারা টোকেনের মাধ্যমে রুট পারমিট দিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্পটে গাড়িগুলো চালাচ্ছে, তাদের প্রত্যেকের সাথে স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতাকর্মি, কিশোরগ্যাংয়ের নেতাসহ প্রশাসনের যোগসাজশ রয়েছে। যার ফলে অনুসন্ধানে গেলে পড়তে হয় অনেক বিপত্তিতে। এক সুত্রে জানা যায়, এই বিশাল অংকের ভাগ নয়টা জায়গায় দিয়ে প্রতিদিন একটি ব্যাটারী রিকসা গ্যারেজ থেকে বের হয়।

বায়েজিদের এক গ্যারেজ মালিক সুত্রে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও চার চাকার ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের খরচ হচ্ছে। সাধারণত একটি ইজিবাইক চালানোর জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। কিন্তু ৮০ ভাগ গ্যারেজ মিটারের বাইরে লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুত চুরি করে ব্যাটারী রিচার্জ করায় সরকার বিদ্যুত খাত থেকে অনেক রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। সেই সাথে নগরজুড়ে লোডশেডিং এর মাত্রা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওয়াজী উল্লাহ বলেন, ব্যাটারী চালিত রিকসা বন্ধে হাইকোর্টের রায়ের উপর আমরা আপিল করেছি। টোকেন বিষয়ে তিনি বলেন, টোকেন ছাড়া কোনটা চলছে। রাস্তায় কোন গাড়ি পাবেন না টোকেন ছাড়া। রাস্তায় যেসব ট্রাক বা গাড়ি পার্কিং করে রাখে, তাও এমনি রাখা হয়না। ব্যাটারী চালিত রিক্সা গাড়ির এই সব টোকেনের টাকার আশি ভাগই নয়টা জায়গায় দিতে হয়। তারপর গাড়িটা চলে। আপনি অনুসন্ধান করেন, বুঝতে পারবেন। টোকেনের টাকা না দিলেতো গ্যারেজ থেকেই গাড়িটা বের হবেনা। তারা যদি অবৈধ বিদ্যুত ব্যবহার করে, আপনারা জানলে সংবাদ করেন। সংশ্লিস্ট কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে।