দুজনেরই ছিলো সংসার। একজনের ঘরে রয়েছে একটি ছেলে সন্তান আর অপরজনের ঘরে ছিলো একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান। কিন্তু ছেলের পূর্বের সংসারের স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকলেও স্ত্রীর বিভিন্ন সমস্যা থাকায় পরিবারের সাথে পরামর্শ করে প্রথম স্ত্রীকে আইনিভাবে তালাক প্রদান করা হয়। এরপর পরিবারের পরামর্শেই এক সন্তানওয়ালা এক ডিভোর্সী মেয়েকে সামাজিকভাবেই বিয়ে করে।
কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন পর থেকেই নতুন বউয়ের সাথেও শুরু হয় ঝামেলা। পূর্বের স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার পরও তার সাথে যোগাযোগ রাখে স্বামী- এ নিয়েই সংসারে বাধে গন্ডগোল, নির্যাতিত হতে থাকে নতুন বিয়ে করে নিয়ে আসা স্ত্রী।শারীরিক ও মানসিক দুইভাবেই চলে এ নির্যাতন। এরই মাঝে গত ২০ দিন আগে বাড়ী থেকে লাপাত্তা হন স্বামী সাকিব আরমান ফরহাদ। স্বামীর সাথে কোনরকম যোগাযোগ করতে না পেরে এবং শ্বশুড়বাড়ীতে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকায় গতকাল বাবার বাড়ী এসে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গৃহবধু ফারজানা আক্তার বেবী।
পরে তাকে তার বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ইনফেকশন বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়নে। সাকিব আরমান ফরহাদ বড়গাঁও ইউনিয়নের মো: এমাজউদ্দিনের ছেলে আর ফারজানা আক্তার বেবী সদর উপজেলার জগন্নাথপুর আদর্শ কলোনীর বেলাল হোসেন এর মেয়ে।
জানা যায়, ফরহাদের সাথে তার পূর্বের স্ত্রী ছোট ধাপ আটোয়ারী উপজেলার বাসিন্দা শহীদুল ইসলামের মেয়ে সুরভী আক্তারের দুই সন্তান থাকার পরও চারিত্রিক সমস্যা থাকায় পরিবারের পরামর্শে ফরহাদের সাথে সুরভী আক্তারের ডিভোর্স হয়। ডিভোর্সের পর আবারও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এক সন্তানের জননী ফারজানা আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ফরহাদ।
এদিকে বিয়ের কিছু দিনের মাথায় পুর্বের স্ত্রীকে নিয়ে ফারজানার সাথে ফরহাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়, বাড়ে কলহ-এক পর্যায়ে ফারজানাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে শুরু করে স্বামী ফরহাদ। এ অবস্থায় গত ২০ দিন আগে হঠাৎ করে বাড়ী থেকে লাপাত্তা হয়ে যায় ফরহাদ। পরিবারের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আত্মগোপনে চলে যায় সে।
এদিকে শত নির্যাতন সহ্য করেও স্বামীর বাড়ীতে পড়ে থাকা ফরহাদের ২য় স্ত্রী ফারজানা রাগে-ক্ষোভে আজ (৬ নভেম্বর) বুধবার তার বাপের বাড়ী জগন্নাথপুর আদর্শ কলোনী ফিরে এসে ভোর রাতে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পরে সকালে পরিবারের লোকজন টের পেলে তাকে দ্রুত ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফারজানার সাথে কথা বললে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তিনি আর বেঁচে থাকতে চান না। তবে তিনি তার স্বামী ফরহাদকে প্রচন্ড ভালোবাসেন, তার কোনো ক্ষতি চান না তিনি। তার এ ঘটনার জন্য তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন।
ফারজানার বাবা বেলাল হোসেন জানান, আর কিছুক্ষণ দেরী হলে আমরা হয়তো আর মেয়েকে ফিরে পেতাম না। আল্লাহ আমাদের মুখের দিকে তাকাইছে। আমার মেয়ে যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা তাই মেনে নিবো।
এদিকে পলাতক স্বামী সাকিব আরমান ফরহাদের ব্যবহৃত ফোন নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে ফরহাদের পিতা এমাজউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বৌমাকে (ফারজানা) মঙ্গলবার তার দাদী ও বোন এসে নিজেদের বাড়ীতে নিয়ে যায়, বিষ পানের বিষয়টি তিনি জানেন না।
তবে বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় মেম্বার জেলা পর্যায়ের এক বিএনপি নেতার সাথে কথা বলেছেন। তিনি বর্তমানে জেলার বাইরে অবস্থান করছেন, উনি আসলে বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষ বসে সমাধান করা হবে বলেও জানান তিনি।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে