মিয়ানমারে তীব্র লড়াই ও ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দে আতংক, উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় কাটছে টেকনাফ সীমান্ত জনপদের মানুষের। কিছুক্ষণ পর পর এমন শব্দে চমকে উঠছে শিশু কিশোররা। এদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বিজিবি এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে যাতে পুণরায় যেন কোন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) এর মধ্যে লড়াই-সংঘাত চলছে গত প্রায় এক বছর ধরে। এতে উভয় পক্ষ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করছে প্রতিনিয়ত। ভারি অস্ত্র, মর্টারশেলের তীব্র আওয়াজে মহিলা, বৃদ্ধ ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ভয় পান। তীব্র কম্পনে সীমান্তের অনেক বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন সীমান্তের অনেক বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা বলছেন, বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে পর পর কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান তারা। তবে মিয়ানমারে চলমান এ সংঘাতের মধ্যে এমন শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা আর শুনেননি। শক্তিশালী বিস্ফোরণে বাংলাদেশ সীমান্তের ঘরবাড়িও ‘থর থর’ করে কেঁপে উঠে। ফাটল ধরেছে বেশকিছু বাড়িঘরে। কম্পনের সময় লোকজন প্রথমে ভাবেন ভূমিকম্প হচ্ছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত লোকজন।
টেকনাফের সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতের বিস্ফোরণের শব্দটি অনেক বেশি ভয়াবহ। এমন শব্দ আর কখনও শোনা যায়নি। তীব্র কম্পনে আমার এলাকার অনেক বাড়িঘরে ফাটল ধরেছে। আতংকে অনেকে বাড়িও ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে পর পর পাঁচটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। সঙ্গে সঙ্গে সীমান্ত এলাকার ভবন, বাড়িঘর থর থর করে কেঁপে উঠে। এতে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়েছে ভেবে ঘরে-বাইরে মানুষজন এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
ঘটনার পর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সীমান্ত এলাকার লোকজন একের পর এক এমন আতঙ্কের কথা প্রকাশ করেন।
আজিজুল হক রানা নামের ঘুমধুম সীমান্তের এক ব্যক্তি লেখেছেন, ঘুমধুম সীমান্তের মিয়ানমার অভ্যন্তরে পর পর তিনটি বোমার বিস্ফোরণ, বিকট শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে এপার।
এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে সীমান্ত দিয়ে যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছি।
সীমান্তে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সুযোগে যাতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেজন্য সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে