ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রেল পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুত গিলে খাচ্ছে অবৈধ বস্তির দুই হাজারের অধিক পরিবার

কাজী হুমায়ুন কবির | প্রকাশের সময় : শনিবার ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৯:৫৯:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রেলের আশেপাশে গড়ে উঠা অবৈধ বস্তির প্রায় দুই হাজারেরও অধিক পরিবার রেল পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুত গিলে খাচ্ছে। নেই রেল প্রশাসনের স্থায়ী নজরদাড়ি। রেল হারাচ্ছে রাজস্ব। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, রেল পূর্বাঞ্চলে টাইগার কলোনীর ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর বাসাগুলো প্রায় খালি হচ্ছে। যারা বাসায় আছেন তাদের কয়েকজন বলেন,  এখানে নেই থাকার পরিবেশ, অনেক বাসার ছলছামড়া উঠে গেছে, ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করানোর মতো নিরাপদ যাতায়াত অভাবসহ বিবিধ কারনে অনেকেই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে পরিবার পরিজন নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতে। বাসা গুলো খালি থাকায় চুরি হচ্ছে দরজা জানালা ও বাসার ভিতরের প্রয়োজনীয় নলকুপের পাইপসহ যন্ত্রপাতি। গড়ে উঠছে অবৈধ বস্তি । প্রায় হাজারের অধিক টিনের দুচালা গড়ে উঠেছে শুধু টাইগারপাশ রেলওয়ে কলোনীতে। ষোলশহর, সেগুন বাগান, পাঞ্জাবী লেইন, ওয়ারলেস, মাষ্টার লেইন, রেলস্কুল, খুলশী কলোনী, ডিজেল কলোনী, নালাপাড়া, ঝিলের পাহাড় রেললাইনের পাশে পাশে রয়েছে প্রায় শতাধিক বস্তির পরিবার। রেলের  বিদ্যুত গিলে খাচ্ছে অবৈধ বস্তিতে বসবাসকারীরা। সবাই চোরা তার দিয়ে কোটা মেরে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় এইসব বিদ্যুত ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে লাইনম্যান কাম ওয়্যারম্যান আবুল কালামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা এই সব অবৈধ গড়ে উঠা বস্তিগুলোর কারেন্ট লাইন জব্দ করি। কিন্তু তারা পরে আবার লাগিয়ে ফেলে। আমরা ছোট চাকুরী করি। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের জীবনটাই হুমকির মুখে পড়ে। উর্ধ্বতন ফোরম্যান বিটু চাকমাকে জানিয়েছি, তিনি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানান। তবে তাদের ব্যাপারে স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছেনা। আমরাও চাই এসব অবৈধ বস্তির বসতিদের উচ্ছেদ করে রেলের বিদ্যুত সাশ্রয় হোক।  

এ বিষয়ে জানতে ফোরম্যান বিটু চাকমাকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

টাইগার পাশ কলোনীর খেলার মাঠ হয়ে গেছে বাস পার্কিংয়ের ষ্ট্যান্ড। একটা শ্রেনী সেখান থেকে চাঁদা আদায় করে। জানা যায়, প্রতিটি বাস থেকে ১২০ টাকা করে চাঁদা তোলে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। সেই সাথে গড়ে উঠেছে বাবুলের রিকসা গ্যারেজ। এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে নেই কোন রেল প্রশাসনের নজরদারী। যাতে চলছে অবৈধ বিদ্যুত ব্যবহারে। এই সব এলাকায় মাদকসহ টোকাই শ্রেনীরা বিভিন্ন চুরিচামারী ও ছিনতাই কাজে লিপ্ত রয়েছে। এসব অবৈধ বস্তি নির্মানের পিছনে রয়েছে বহিরাগত ও রেলের কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজশ। প্রতিমাসে এখান থেকে উত্তোলিত ভাড়া থেকে তারা একটা ভালো আয় করেন। জানা যায়,  সিফাত আর বাদশার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করেন বিদ্যুত ও বাসষ্ট্র্যান্ড। তারা পুলিশ ও রেলের কয়েক অসাধুজনদের ম্যানেজ করে বাকী ফায়দা নিজেরা ভোগ করেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, সিফাত ও বাদশার সিন্ডিকেট রেলে গড়ে উঠা বস্তির জায়গা কোন গ্রাহককে এককালীন বরাদ্ধ দিয়ে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। এলাকার যারা কিশোর গ্যাং তারাও এই টাকা থেকে ভাগ পায়। যার ফলে তাদের সাথে কেউ কথা বলতে পারেনা। তাদের সাথে কথা বলতে গেলে অনেক হুমকি ধমকির কবলে পড়তে হয়। 

এ বিষয়ে সিফাতের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি বলেন, আসলে আমি বিদ্যুত ও বস্তির বিষয়গুলোতে জড়িত নাই। তবে খেলার মাঠে রাতে বাস রাখার বিষয়টার সাথে জড়িত আছি। আসলে ভাই দল চালাতে গেলে অর্থ লাগে তাই জড়িয়েছি। আর খেলার মাঠের বিষয়ে আমার অনেক অবদান রয়েছে। আপনি খবর নিয়ে দেখতে পারেন।

সেখানে রেলের বাসায় বসবাসকারী একজন বলেন, এই এলাকায় এখন রেল কর্মচারীরা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এখানে নিরাপদের সাথে থাকা ও সন্তানদের নিরাপদে স্কুল কলেজে পাঠানো অনেকটা হুমকি হয়ে উঠছে। যার ফলে অনেকে বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আবার যারা আছে তারা অনেক হুমকিতে বসবাস করছে।

 রেল পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম বলেন, আসলে আমরা এস্টেটের সহযোগীতা নিয়ে এসব অবৈধদের উচ্ছেদে যাই। সেই সাথে তাদের অবৈধ বিদ্যুতের লাইনও আমরা কেটে আসি। গত সপ্তাহেও অনেক লাইন কেটেছি। কাটলেও তারা আবার পুনরায় লাইন টানেন। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি, বিষয়গুলো অবশ্যই উর্ধ্বতনদের জানিয়ে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার ”েষ্টা করবো।