যশোরের শার্শা উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর থেকে উপজেলার বাগআঁচড়া ও কায়বা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা চালাচ্ছে বিজয়ী বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মিরা। ঘর বাড়ি ভাংচুর, মারপিট ও বাড়ির সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
শার্শার কায়বা ইউনিয়নের পরাজিত নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী ফিরোজ হাসান টিংকু জানান, গতকাল রোববার রাত থেকেই কায়বার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বসবাসকারি নৌকার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে ভোটে বিজয়ী বিদ্রোহী চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনের কর্মিরা। তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতসহ চেয়ারম্যান আলতাফের কর্মিরা রোববার রাতে কায়বার বায়কোলা গ্রামে নৌকার কর্মিদের ২০টি বাড়ি ভাংচুর করেছে। বোমা বিস্ফোড়ন ঘটিয়ে বিচালী গাদায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বাদামতলা বাজারে কয়েকটি দোকান ভাংচুর করেছে। আমার কর্মি হাসানকে বাড়িতে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গালিগালাজ করেছে। রাড়িপুকুর ওয়ার্ডে নৌকার অফিস ভাংচুর করেছে। নৌকার কর্মি সহিদুলের বাড়ি ভাংচুর করেছে। দাঁতখালীতে নৌকার এক কর্মিকে মেরে মাথা ফাঁটিয়ে দিয়েছে। ফোন করে থানায় জানালেও কোন অদৃশ্য শক্তির কারনে পুলিশ নিরব ভুমিকা পালন করছেন। আর এসব তান্ডব চালাচ্ছে বিএনপি জামায়াত ও সদ্য পাশ করা চেয়ারম্যানের কর্মিরা। থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন অভিযোগ করার প্রস্ততি চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগআঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নেতা জানান, নির্বাচনে জয়লাভ করার পর বিদ্রোহী চেয়ারম্যান আব্দুল খালেকের কর্মিরা প্রতিটি ওয়ার্ডে নৌকার সমর্থকদের ঘর বাড়ি ভাংচুর করেছে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বিএনপি জামায়াতসহ চেয়ারম্যানের কর্মিরা নৌকার শতাধীক কর্মির বাড়ি ভাংচুর করেছে। ২০ থেকে ২৫ জনকে পিটিয়ে জঘম করেছে। এদের মধ্যে ২ জন রয়েছে যশোর সদর হাসপাতালে, ৪ জন রয়েছে নাভারন হাসপাতালে, ২০ জন বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। সোমবার সকালে ঘোষ পাড়ার নৌকার কর্মি মহিদুলকে পিটিয়ে জখম করেছে চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক ও জামায়াত শিবিরের লোকজন। থানায় অভিযোগের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবনের নিরাপত্তা না থাকায় ঘর থেকে বের হতে পারছিনা। তবে ফোন করে শার্শা থানার ওসি ও এডিশনাল এএসপিকে জানালেও কোন তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এছাড়া ও শার্শার সামটা গ্রামে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ফুটবল ও টিউবকল মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে দু‘পক্ষের আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। ভোট দেওয়া নেওয়া নিয়ে কথাকাটির এক পর্য়ায়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাদের আহত করা হয়।
এ ব্যাপোরে সদ্য পাশ করা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন জানান, আমি নির্বাচেনের ফলাফল ঘোষনার আগেই আমার কর্মিদের বলেছি ফলাফল যায় হোক না কেন কেউ যেন কোন রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে। আমার বা আমার কর্মিদের নিয়ে ঘর বাড়ি ভাংচুর ও হুমকি ধামকির যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। এমন কোন প্রমান তারা দেখাতে পারবে না? নৌকার প্রার্থী টিংকু নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় সে এখন বিভিন্ন জায়গায় আমার নামে এসব কথা বলে বেড়াচ্ছে। তবে আজ সকালে কওসার মেম্বার ও নুরু কামারের ছেলেদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এ মারামারির সাথে আমি বা আমার কোন কর্মি জড়িত নয়।
বাগআঁচড়া ইউনিয়নের সদ্য নির্বাচনে জয়ী আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, আমি নিজে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি। আমার সাথে যারা আছেন সকলে আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত। গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারন মানুষ আমাকে চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করিয়েছেন। সাধারন মানুষের ভোটে পাশও করেছি। সাধারন মানুষ নৌকার প্রার্থী ইলিয়াছ কবির বকুলকে ব্যালেটের মাধ্যমে প্রত্যাখান করেছেন। তিনি হেরে গেছেন বলে তার কর্মিদের উপর আমার লোকজন হামলা করবে কেন? আমার বা কর্মিদের বিরুদ্ধে ঘর বাড়ি ভাংচুর ও মারপিটের যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যাও বানোয়াট।
এ ব্যাপারে শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল আলম জানান, নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বাগআঁচড়া, কায়বায় ঘর ভাংচুর ,হামলা ও নৌকার সমর্থকদের মাপিটের ঘটনা শুনেছি। ওখানে আমাদের সার্কেল এএসপি স্যার পরিদর্শনে গেছেন। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাগআঁচড়া ও কায়বায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।