দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম থেকে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের রাজনৈতিক ইশতেহারে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি কর্ণফুলী টানেল ঘিরে দেশের প্রধান শহর হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার দাবী করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
আজ ৯ ডিসেম্বর, শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতি চট্টগ্রাম মহানগর আয়োজিত '' চট্টগ্রামে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার রাজনৈতিক অঙ্গিকার চাই" শীর্ষক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবী জানান।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে তিনমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুবাধে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার রাস্তাাঘাট, ফ্লাইওভার, এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের আধুনিকায়নসহ সড়কের অবকাঠামো বির্নিমানে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও চট্টগ্রামে আধুনিক কোন গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নোংরা আর্বজনায় ভরপুর কিছু মিনিবাস, হিউম্যান হলার, মুড়িরটিনের মত মাহিন্দ্রা, অটোটেম্পু, ব্যাটারি চালিতরিক্সা, ইজিবাইক, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেলে প্রতিদিন যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছে লাখ লাখ নগরবাসী। যানজট-জনজটে আটকা পড়ে প্রতিদিন ক্ষয় হচ্ছে কর্মক্ষম মানুষের লাখো কোটি টাকার মহামূল্যবান শ্রমঘন্টা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, গণপরিবহন গুলোকে মুড়িরটিন বানিয়ে ইচ্ছে মত যাত্রী হয়রানি চলছে। ভয়াবহ বায়ুদুষণ ও ধুলো দুষণে অতিষ্ট নগরবাসী। এহেন পরিস্থিতিতে নগরীর যাত্রী সাধারণ এখন পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ইচ্ছের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এখানে সকালে এক ভাড়া, বিকালে আরেক ভাড়া, বৃষ্টির দিনে আরেক ভাড়া, দিতে বাধ্য হচ্ছে যাত্রী সাধারণ। প্রতিবাদ করলেও প্রতিকার নেই। মানুষ ইজ্জত ও মর্যাদা নিয়ে এসব পরিবহনে যাতায়াত করতে পারে না। গণপরিবহনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সকল ফোরামে মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে রাখা হলেও যাত্রী প্রতিনিধি রাখা হয় না। এহেন যাত্রীহয়রানি থেকে মুক্তি দিতে, ক্ষমতায় আসলে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মাননীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের কাছে দাবী জানান তিনি। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের বাস নেটওর্য়াক ভেঙ্গে পড়েছে। টেম্পু, ইজিবাইক, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল এখন প্রধান বাহন হিসেবে দাড়িয়েছে। ব্যয়বহুল, সড়ক নিরাপত্তায় ঝুকিপুর্ণ যানজট তৈরীর প্রধান উৎস এসব যানবাহন স্মার্ট বাংলাদেশের সাথে বেমানান বলে দাবী করেন তিনি।
সভায় বক্তারা বলেন, কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বাস-রেপিট ট্রানজিট চালু করার সুপারিশ করা হয়েছিল। যা কয়েকটি ফ্লাইওভার করার মধ্যে দিয়ে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগে যাত্রী বা নাগরিক সমাজের মতামত কোন নেওয়া হয়নি। এহেন পরিস্থিতিতে আধুনিক গণপরিবহন পরিসেবা গড়ে তোলা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। অথচ বাস-রেপিট ট্রানজিট সিস্টেমে নগরীতে ১টি কোম্পানীর অধীনে মাত্র ১ হাজার আধুনিক বাস নামিয়ে ডেডিকেটেড সিস্টেমে চালু করা গেলে এই সমস্যা অনেকখানী সমাধান সম্ভব। এর পাশাপাশি কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা বিমানবন্দর পর্যন্ত নদীর তীরবর্তী জনপদে আন্ডারগ্রাউন্ডে মেট্রোরেল করা হলে নগরীর যাতায়াত সমস্যা সিংহভাগ সমাধান সম্ভব। পাশাপাশি নগরীর চারপাশ ঘিরে সার্কুলার ট্রেন সার্ভিস চালু করা হলে নগরীতে স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। তাই আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম থেকে অংশগ্রহনকারী রাজনৈতিক দলের মাননীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহারে এসব যানবাহন উচ্ছেদ করে স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা তাদের স্ব-স্ব নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরার দাবী জানান বক্তারা।
সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যার চাপ কমাতে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ দাবী করেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন, আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন হলেও প্রধান শহর নিউইয়র্ক। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ হলেও প্রধান শহর করাচি। ভারতে রাজধানী দিল্লী হলেও প্রধান শহর বোম্বে। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর কারণে বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম শহর সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। সুতরাং চট্টগ্রাম শহরকে দেশের বানিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা গেলে ওয়ান সিটি টু টাউন আদলে এখানে প্রশাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালত সম্প্রসারণ করে চট্টগ্রামকে দেশের প্রধান শহর হিসেবে গড়ে তোলা ক্ষেত্রে আপনাদের ভুমিকা দেশের যাত্রী ও নাগরিক সমাজ আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার হিসেবে দেখতে চায়।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেকুর রহমান চৌধুরী , চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের অর্থসম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক কাজী হুমায়ুন কবির, সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল জলিল, সহ সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হোসেন, অর্থ সম্পাদক আব্দুর রহিম প্রমুখ।