অক্টোবরে খুলছে উন্নয়নের দুয়ার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একে একে খুলে দেওয়া হবে সরকারের বড় প্রকল্পগুলো। এর মধ্যে রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেললাইন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাংশ। এ ছাড়া উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে ও বিআরটির কিছু প্রকল্প। এর ফলে সহজ হবে দেশের যোগাযোগব্যবস্থা। বাড়বে কর্মসংস্থান। খুলবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে এসব মেগা প্রকল্পই দলটির ‘ট্রাম কার্ড’ হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দৃশ্যমান এসব উন্নয়ন প্রকল্প তরুণ ভোটারদের যেমন আকৃষ্ট করবে, তেমনি এ অর্জনগুলো নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়ও সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন তারা। ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, দেশবাসীর জন্য ভোটের আগে উন্নয়ন চমক অপেক্ষা করছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মেগা প্রকল্প উদ্বোধনের পাশাপাশি স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। উন্নয়ন উপহার দিয়ে সংসদ নির্বাচনে চাইবেন নৌকায় ভোট।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার আগে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। সারা দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সে কারণেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উন্নয়নের জয় হবে। মানুষ উন্নয়ন দেখছে। মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ৭০ শতাংশ মানুষ নৌকায় ভোট দেবে। মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে।’
সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনেকগুলো বড় প্রকল্প হাতে নেয়। সেগুলোর অনেকটার সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের মানুষ। এর মধ্যে আছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রো রেলসহ নানা প্রকল্প। এ মেগা প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের পাশাপাশি ওইসব এলাকায় সুধী সমাবেশের আড়ালে জনসভাও থাকবে আওয়ামী লীগের। টানা ক্ষমতায় থাকলে যে উন্নয়ন হয় সে বার্তা দেওয়া হবে। উন্নয়ন উপহার দিয়ে আগামী দিনেও যেন সরকারের ধারাবাহিকতা থাকে সে আহ্বান জানানো হবে দেশবাসীর প্রতি। আগামী ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের উদ্বোধন করা হবে। এ টার্মিনাল পুরোদমে চালুর পর উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বার্তা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ওই দিন রাজধানীতে সুধী সমাবেশ করার কথা রয়েছে। পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল উদ্বোধন করা হবে ১০ অক্টোবর। ইতোমধ্যে সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করেছে। ওইদিন পদ্মার দুই পাড়ে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হবে। মেট্রো রেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ উদ্বোধন হবে ২০ অক্টোবর। এ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি করা বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করা হবে। এটিই হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম টানেল। এ উপলক্ষে কর্ণফুলী নদীর অপর পাড় আনোয়ারায় জনসভা করবে সরকারি দল। এ টানেল চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে যুক্ত করেছে। সব সমাবেশেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ টানেলটি হয়ে উঠবে ‘দুই শহরের এক নগরী’ এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হওয়া প্যাসেজওয়ে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে আংশিকভাবে মেট্রো রেল ও বঙ্গবন্ধু টানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২ শতাংশের বেশি বাড়বে। একই মাসে ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেলসংযোগও চালু করার জোর চেষ্টা চলছে। যদিও সাম্প্রতিক ঢলের পানি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেললাইন। এটি মেরামতের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কক্সবাজার রেলস্টেশনকে দেশের প্রথম আইকনিক স্ট্রেশন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ঝিনুকের আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। এতে করে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াত ব্যবস্থা আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি অংশ খুলছে অক্টোবরে। যার মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। অন্য বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধনের তারিখ ঠিক হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সময় চেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে আখাউড়া-আগরতলা ও খুলনা-মোংলা রেললাইন। যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজও প্রায় শেষ। মেট্রো রেল লাইন-৫ নর্দান রুটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে অক্টোবর মাসে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করার কথা থাকলেও তা পিছিয়েছে। এ ছাড়া উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এ এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত। অত্যাধুনিক এ এক্সপ্রেসওয়েতে নেই কোনো স্টপওভার পয়েন্ট, সিগন্যালিং সাইন কিংবা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা। একটি গাড়ি বাধাহীনভাবে পাড়ি দেবে ৬-৭ মিনিটে ১২ কিলোমিটার পথ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় দেশের উন্নয়ন হয়েছে। এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সে জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। টানা তিন মেয়াদে কী কী উন্নয়ন হয়েছে, সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরছি। আশা করি দেশের মানুষ উন্নয়ন-অর্জনে আওয়ামী লীগকেই বেছে নেবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।’