ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চট্টগ্রামের ভাসমান তেলের টংগুলো অবৈধ হলেও চলছে প্রশাসনসহ কতিপয় সাংবাদিককে মাসোহারার মাধ্যমে

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১ জানুয়ারী ২০২৪ ০৭:৫৯:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম নগরের পেট্রোল পাম্পগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে গড়ে উঠছে অবৈধ তেলের টং দোকান। ফৌজদারহাট লিংক রোড, আকমল আলী রোড, কুয়াইশ সংযোগ সড়ক, নতুন ব্রীজ, বায়েজিদ সড়ক, টেক্সটাইল থেকে চন্দ্রনগর, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ইপিজেড, কালূরঘাট সড়কের  রাস্তার দুপাশে গড়ে উঠছে সারি সারি অবৈধ প্রায় ৭০টির মতো তেলের দোকান। বেসরকারি বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের গাড়ি থেকে চুরি করে তেল বিক্রি করছে গাড়ির ড্রাইভাররা। আর সেই তেল নিচ্ছে এই টং দোকানগুলো। সে তেল নিয়ে বিভিন্ন ভেজাল মিশিয়ে তেলের পরিমান বাড়িয়ে বিক্রি করছে।  যাদের সামনে নগর পেট্রোল পাম্পগুলো অসহায়। টং দোকানের ক্ষমতার কারনে কেউ তাদেরকে কিছু বলে ঝামেলা জড়াতে চায়না। এই সব টং দোকানের নেই কোন অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। এসব দেখেও  নীরব হয়ে আছে প্রশাসন।

টং দোকানদারদের সুত্রে জানা যায়, এই অবৈধ দোকান করতে যেয়ে অনেক টাকা চাঁদা দিতে হয় প্রশাসনসহ, এলাকার রাজনৈতিকধারী, ভিজিটিং কার্ডধারী কয়েকজন সাংবাদিককে। সরেজমিনে গেলে এক টং দোকানের মালিক, প্রায় ৩ডজন সাংবাদিকের ভিজিটিং কার্ড বের করে দেন। তার তথ্য মতে প্রতি মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে ভিজিটিং কার্ড দেয়া প্রতিটি সাংবাদিককে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা আবার অনেককে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকেন।

ফৌজদার হাট লিংক রোডের বাংলাবাজার থেকে একটু এগুলে পাওয়া যায়, আব্দুল করিমে অবৈধ তেলের টং দোকান। ট্রাক, পিকআপ থেকে চোরাই তেল নেয়। মাঝে মাঝে কার থেকে অকটেনও নেয়। তবে তার দোকান নির্বাচন পর্যন্ত বেচা কিনা হবেনা। তবে চাঁদার অংশ দিয়ে দিতে হবে।

আরেফিন গেটের পাশে টং দোকানদার বলেন, প্রতি মাসে চাঁদা দিতে দিতে মাস শেষে আমাদের আর কিছু থাকেনা। প্রতিদিনই নতুন নতুন সাংবাদিকরা এসে কার্ড অর্ন্তুভুক্ত হয়ে যায়। টাকা না দিলে সংবাদ করে আমাদের দোকান বন্ধ করে দিবে বলে হুমকি দেয়। তাদেও হুমকির ভয়ে তাদেরকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা দেই। 

 

চট্টগ্রামের বন্দর, হালিশহর,পাহাড়তলী,আকবর শাহ, বায়েজিদের কিছু এলাকায় চোরাই তেলের বড় কারবার ও তেল ক্রয় বিক্রয় করার জন্যই ৫০টি  দোকানের গড়ে উঠেছে।তবে যানা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কতিপয় কর্তার প্রশ্রয়ে এসব দোকানে তেলের ড্রাম সারি সারি সাজানো হচ্ছে।অনুসন্ধানে জানতে পারি,  স্থানীয় থানা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবির) কথিত ক্যাশিয়ারের ছত্রছায়ায় এসব অবৈধ তেলের দোকান গড়ে উঠেছে। তাদেরকে দিতে হচ্ছে  সাপ্তাহিক এবং মাসিক মাসোহারা,  নিয়মিত টাকা নেয় থানার টহল ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরাও। এদিকে আকবরশাহ থানাকে মাসিক মাসোহারা দিয়ে তেলের দোকান বসানোর বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন  ভাসমান তেলের ব্যবসায়ীরা । তাদের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা বলেন,দোকান চালাতে হলে সব থানার কথিত ক্যাশিয়ার কে প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা করে দিতে হয়। এরপর ডিবির কথিত ক্যাশিয়ার কে টাকা দিতে হয়। আর দোকানের ভাড়াতো আছেই। তেলের ব্যবসায় বেশি লাভ করা যায়না। লিটার প্রতি ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা লাভ হয়।

আরো পড়ুন: সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় ফেইজ আউট কর্মশালা অনুষ্ঠিত

এছাড়াও সীতাকুণ্ড, বায়েজিদ বোস্তামী থানার আওতাধীন রিং রোডের ভাসমান তেলের দোকান বসিয়ে  অবৈধ এই ব্যবসা পরিচালা করছেন কিছু প্রভাবশালী অবৈধ তেল ব্যবসায়ী।  বিএসআরএম সহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভারি যানগুলো থেকে জ্বালানি তেল কিনে আসছেন এসব অবৈধ ব্যবসায়ীরা। এক ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জাতীয় দৈনিক  স্বাধীন সংবাদ কে বলেন, ‘আমি ৬ মাস ধরে ব্যবসা করছি। বিএসআরএমের আমার পরিচিত দুইজন ড্রাইভার থেকে নিয়মিত তেল কিনছি। তাদের মাধ্যমে আরও কিছু গাড়ি থেকে তেল কিনে কোনোরকম সংসার চালাচ্ছি।

আরো পড়ুন:১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তারা স্বাধীন সংবাদ কে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স বানিয়েছি তবে বিস্ফোরকের  লাইসেন্স নেই। এটি বানাতে হবে,দোকান চালাতে কি কাউকে টাকা দিতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবাই টাকা দেয়, আমাকেও দিতে হয়। টাকা না দিলে কি ব্যবসা করতে দেবে? এখানে প্রায় ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছে অনেকেই টাকা সবাইকে দিতে হয়।

তারা গেইট এলাকার ভাসমান তেলের দোকানিরা জাতীয় দৈনিক স্বাধীন সংবাদ কে বলেন, ‘আমার কাছে ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স আছে।তবে ফায়ার সার্ভিসের অফিসে যোগাযোগ করলে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা বলেছে এটি বিস্ফোরক লাইসেন্স। তবে এখানে মাসখানেক আগে বেশ কয়েকটি অবৈধ তেলের দোকান ভেঙ্গে দিয়েছে।

আরো পড়ুন:কিচক প্রেস ক্লাবে প্রতিনিধিদের মাঝে আইডি কার্ড বিতরণ

তবে জানা যায়, চট্টগ্রামের হালিশহর, পাহাড়তলী, আকবর শাহ থানার রয়েছে অন্তত ৩০টি ভাসমান অবৈধ  তেলের দোকান রয়েছে। হালিশহর থানার টোল রোডের কিছু দূর পরপরই টিনের ছাউনি ঘেরা তৈরি হয়েছে ভাসমান অবৈধ তেলের ঝুপড়ি দোকানগুলো । এসব দোকানের নেই কোন সাইনবোর্ড কিংবা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স। দোকানিরা একটা নির্দিষ্ট সময়ে অবৈধ তেলগুলো  ড্রাম ও  জারের মধ্যে মজুদ করছে এসব অবৈধ তেল। এসব দোকানের মূল ব্যবসা হল চোরাই তেল।

আরো পড়ুন:সন্দ্বীপে চার সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার

এছাড়া বায়েজিদ বোস্তামী থানার টেক্সটাইল মোড়, আরেফিন নগর, শেরশাহ ও বায়েজিদের বোস্তামী লিং রোডে রয়েছে অন্তত ১০টি অবৈধ তেলের ভাসমান দোকান। তার মধ্যে চট্টগ্রাম পতেঙ্গা, ইপিজেড, বন্দর সল্ট ঘোলা ক্রসিং এলাকায়,  টেক্সটাইল মোড়ে শেরশাহ প্রধান সড়কে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সামনে আরেফিন নগর ওয়াসার সামনে দুটি, তারা গেইট কবর স্থানে বিপরীতে একটি , বায়েজিদের লিং রোডের একটি, লিং রোডের শেষ মাথায় রয়েছে একটি  অবৈধ তেলের দোকান ‘ওই দুই এলাকায় কিছুদিন পরপরই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের খবর পেয়ে ভাসমান তেলের দোকানিরা পালিয়ে যায়।

এই সমস্ত খোলা বাজারের অবৈধ তেলের দোকান থেকে যেকোনো সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটে যেতে পারে। তাই এলাকাবাসী দাবী এই সমস্ত দোকানগুলো বন্ধ করা হক।