ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চসিকের সৌন্দর্য বর্ধন নাকি বানিজ্যিকরণ

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫০:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সৌন্দর্যবর্ধনের নামে একে একে অনেক গুরুত্বপূর্ন জায়গা বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করে বানিজ্যিকরন করছে বলে অভিযোগ উঠে নগরে। যেখানে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে মেডিকেল স্থাপনা নির্মানের বিরুদ্ধে নগরবাসীর আন্দোলনের সাথে প্রধানমন্ত্রী একমত পোষন করে মেডিকেল করণের বানিজ্যিক ব্যবস্থাকে বন্ধ করেন। সেখানে চসিক একের পর এক সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নগরীর সবুজ উদ্যান ও উন্মুক্ত স্থানে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইতিপূর্বে পাঁচলাইশ মক্কি মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় শেভরনের বিপরীতেও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে প্রধান সড়কের পাশে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে চসিকের বিরুদ্ধে। নগরের অনেকেই বলেন, সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে এই বানিজ্যিকরনের কারনে প্রতিনিয়ত যানজট ও জনচলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় সড়কে।

 জানা যায়, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায়ও ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে চসিক পুরোদমে বানিজ্যিক এলাকায় পরিণত করছে। এতে সেই এলাকাবাসীর পক্ষে বানিজ্যিকরণ নিয়ে পাঁচলাইশ আবাসিক কল্যান সমিতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি নগরীর ২নং গেইট ঐতিহ্যবাহী বিপ্লব উদ্যান সৌন্দর্য বর্ধনের নাম দিয়ে বানিজ্যিকরন করার গুঞ্জন নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন ও নগরবাসী প্রতিবাদ আন্দোলন করলেও তোয়াক্কা করছেনা চসিক। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পাঁচলাইশ সড়কের খাল পাড় থেকে শ্রম আদালত পর্যন্ত সড়কের পাশের খালি জায়গায় ‘সৌন্দর্যবর্ধনের’ নাম দিয়ে কাজ করছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মিরাক্যাল মাইলস। চসিকের মাধ্যমে মিরাক্যাল মাইলসের সৌন্দর্যবর্ধনে প্রকল্প নিয়ে চলছে নগরে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। জনমনে প্রশ্ন আসছে সৌন্দর্য বর্ধনের কথা বলে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে কিনা মিরাকল মাইলস। ইতিপূর্বে বিপ্লব উদ্যানকে ধ্বংস করে বানিজ্যিকরন করার প্রক্রিয়ায় অনেক আন্দোলন করেও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বানিজ্যিকরণ বন্ধ হচ্ছেনা। এইভাবে যদি সৌন্দর্য বর্ধনের নাম করে করে পুরো শহরকে বানিজ্যিকরন করা হয় তাহলে শহরে সবুজ কিংবা উন্মুক্ত জায়গা বলতে কিছুই থাকবেনা বলে মনে করেন নগরবাসী। 

সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন সড়কটিতে সৌন্দর্যবর্ধন করার জন্য বেসরকারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মিরাক্যাল একটি প্রস্তাব সিটি মেয়রের কাছে জমা দেয় । মেয়র প্রস্তাবটি মতামতের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠিয়ে দেন। আইন শাখাসহ অন্য শাখাগুলোর মতামত গ্রহণের পর প্রস্তাবটি সম্প্র্রতি মেয়রের দপ্তরে জমা দিয়েছে নগর পরিকল্পনা শাখা। জানা যায়, চুক্তি স্বাক্ষর পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই সৌন্দর্যবর্ধনের অবকাঠামোগত কাজ শুরু করে দিয়েছে মিরাক্যাল। কাজ শুরুর আগে গত ৩ অক্টোবর সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেই থেকে আড়াই মাস ধরে পাঁচলাইশ খাল পাড় থেকে শ্রম আদালত পর্যন্ত দুইশ মিটারের বেশি জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। গত ১৬ ডিসেম্বর সেখানের একাংশে নির্মিত কিডস জোন ও জিম সেন্টারের উদ্বোধন করেন কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু। তদারকি করছেন চসিকের স্থানীয় দুই কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু ও রুমকি সেন গুপ্ত।

প্রকল্প প্রস্তাবনা সুত্রে জানা যায়, কাতালগঞ্জ খাল পাড়ে একটি ময়লার সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস), এর পাশে স্মৃতিতে বায়ান্ন, স্মৃতিতে একাত্তর, বীর শ্রেষ্ঠদের ম্যুরাল, বসার স্থান, ফিশ এক্যুরিয়াম, জিম সেন্টার এবং কিডস জোন করার কথা রয়েছে। পরবর্তী ধাপে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, সরকারের উন্নয়ন চিত্রের ডিসপ্লে বোর্ড, সাবেক মেয়রদের ম্যুরাল বসানো হবে। মাঝে স্থাপন করা হবে ফার্মেসি ও কফিশপের মতো বাণিজ্যিক স্থাপনা।

গণপূর্ত সূত্রে আরো জানা যায়, ষাটের দশকে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার সময় গণপূর্ত অধিদপ্তর পুরো জমি অধিগ্রহণ করে। এ সময় সড়কঘেঁষা প্লটের পাশের কিছু জমি ভবিষ্যতে সড়ক সম্প্র্রসারণ কাজে ব্যবহারের জন্য খালি রাখে তারা। ১৯৮৮ সালে জমিটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চসিককে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ জানান, চসিক আমাদের জানায় সেখানে নাগরিক সুবিধা বাড়িয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কিছু কাজ, অস্থায়ী জিম, বাচ্চাদের খেলার জায়গা করবে তারা। তবে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এখন যেহেতু এই সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বানিজ্যিকরনের বিষয়ে বিভিন্ন কথা উঠছে, বিষয়টি নিয়ে আমরাও আমাদের উর্ধ্বতনের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোহাম্মদ টিনু বলেন, পাঁচলাইশ কাতালগঞ্জ এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যই কাজ করা হচ্ছে। সেখানে কোন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করা হবেনা। করার পর দেখবেন সেখানে কোন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে কিনা? সেখানে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডের অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছে, তারাও একটি সিমীত জায়গায় সেখানে থাকবে।

সরে জমিনে দেখা যায়, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি মাইক্রোবাস ষ্ট্যান্ড রয়েছে। চসিকের অধীনের সৌন্দর্যবর্ধন ইস্যুতে সেই ষ্ট্যান্ডের মাইক্রোবাস চালক কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই ষ্ট্যান্ডে মাইক্রো রাখি। আমরা নিবন্ধিত সংগঠন। এই স্ট্যান্ডের বিষয়ে প্রশাসনের সবাই জানে। আমাদের ড্রাইভারদের তিনশ পরিবার চলে এই পেশায়। আমাদের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে হঠাৎ করে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছে। আমরাও চাই সৌন্দর্য বর্ধন হোক। তবে আমাদের ষ্ট্যান্ডের পুর্নবাসন না করে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যেন গড়ে না উঠে এটাই আমাদের দাবী।