ঢাকা, মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা নদী এখন খেলার মাঠ

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ ২০২৩ ১০:২০:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

যে তিস্তা নদী একসময় আশীর্বাদ ছিল তা এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে পানির অভাব আর বর্ষাকালে ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তার পানি এ অঞ্চলের মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। ভারত সরকারের গড়িমসি থেকে বাঁচতে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনে ন্যায্য হিস্যার দাবি জানিয়ে আসছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাশিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা নদী। ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভর। এর মাধ্যমে তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর অববাহিকায় বিভিন্ন চরাঞ্চলে সাড়ে নয় হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। চাষাবাদ করা ফসলের মধ্যে ভুট্টা, মরিচ, কুমড়া, বাদাম, গম, তিসি, সূর্যমুখী ও পাট উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এসব ফসল ফলাতে কৃষকদের কষ্টের যেন শেষ নেই। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকা, আর বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর অববাহিকায় বিভিন্ন চরাঞ্চলে সাড়ে নয় হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। চাষাবাদ করা ফসলের মধ্যে ভুট্টা, মরিচ, কুমড়া, বাদাম, গম, তিসি, সূর্যমুখী ও পাট উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এসব ফসল ফলাতে কৃষকদের কষ্টের যেন শেষ নেই। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকা, আর বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের

সরেজমিনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ঘেঁষা দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। আঙ্গুর মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, ভারত থেকে অসময়ে যে পানি আসে তাতে আমাদের কাউন, বোরো, ভুট্টাসহ নানা আবাদ তলিয়ে যায়। যেটা আমাদের মতো কৃষকদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। নুরুন্নবী মিয়া নামের অপর এক কৃষক বলেন, আমরা তিস্তা নদীর ডানপাড় এলাকার মানুষ। আমাদের প্রায় সবার জমিজমা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভারত পানি নিয়ে আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। এটা মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায়ও নেই।

যখন সেচের জন্য পানি দরকার তখন ভারত সরকার পানি দেয় না। আবার যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন ভারত পানি ছাড়ে। এটা একটা বড় সমস্যা। তারা বাঁধ নির্মাণ করে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে আমাদের এ অঞ্চলে অসময়ে বন্যা হয়, ফসলের ক্ষতি হয়। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করা এবং পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করাউন্নয়ন সংগঠক সাদ্দাম হোসেন পবন

কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, শুকনো মৌসুমে আমাদের এলাকায় পানির ব্যাপক সংকট থাকে। এ সময় সেচ দিতে আমাদের অনেক খরচ হয়। ব্যাপক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। আবার যখন বর্ষা হয় তখন ভারত পানি ছাড়ে। এতে আমাদের এলাকা প্লাবিত হয়। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, বর্ষার সময় ভারত যেন পানি না ছাড়ে।

dhakapost

জমিতে কাজ করা রহিম উদ্দিন বলেন, ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে আমাদের পানির দরকার। কিন্তু সেসময় পানি পাই না। ভারত থেকে পানি আসে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে। সেই পানিতে আমাদের অধিকাংশ ফসল তলিয়ে যায়। এছাড়া অনেক বাড়িঘর ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এভাবে ক্ষতি হলে আমরা কী খেয়ে বাঁচব? আমরা চাই সরকার একটা ব্যবস্থা নিক।

তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখের শেষ নেই। শুকনো মৌসুমে যখন এ অঞ্চলে পানি দরকার তখন ভারত সরকার পানি দেয় না। ফলে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। আবার যখন বর্ষা মৌসুম তখন তারা পানি ছেড়ে দেয়, এ অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। হাজার হাজার ফসলি জমি পানিতে ডুবে যায়। ভারত সরকার তিস্তা ইস্যু নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করছেগাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির

নদী নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার উন্নয়ন সংগঠক সাদ্দাম হোসেন পবন বলেন, যখন সেচের জন্য পানি দরকার তখন ভারত সরকার পানি দেয় না। আবার যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন ভারত পানি ছাড়ে। এটা একটা বড় সমস্যা। তারা বাঁধ নির্মাণ করে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে আমাদের এ অঞ্চলে অসময়ে বন্যা হয়, ফসলের ক্ষতি হয়। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করা এবং পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা।

এ বিষয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখের শেষ নেই। শুকনো মৌসুমে যখন এ অঞ্চলে পানি দরকার তখন ভারত সরকার পানি দেয় না। ফলে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। আবার যখন বর্ষা মৌসুম তখন তারা পানি ছেড়ে দেয়, এ অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। হাজার হাজার ফসলি জমি পানিতে ডুবে যায়। ভারত সরকার তিস্তা ইস্যু নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করছে। তিনি আরও বলেন, শুকনো মৌসুমে পানি কম লাগে— এমন ফসল ফলাতে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে এ অঞ্চলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিশেষ করে তিস্তাপাড়ের মানুষ উপকৃত হবে, তাদের দুঃখ চিরতরে মুছে যাবে।