ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

দখলে-ভরাটে মুরাদনগরের নদী -খাল

মমিনুল ইসলাম মোল্লা : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২১ জুন ২০২২ ০৪:১১:০০ অপরাহ্ন | মতামত

মুরাদনগর উপজেলার প্রধান নদী গোমতী।  এই নদীটি মুরাদনগরবাসীর প্রাণের নদী। এই গোমতী মুরাদনগরের কৃষকের প্রাণ। তাই এ নদীর সুনাম সর্বত্র।  এলাকার জনগণের  অতি প্রিয়, অতি আপন। উৎপত্তিগত দিক দিয়ে- গোমতী নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী।নদীটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক গোমতী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ০৪।

ভারতের ডুমুর নামক স্থানে পাহাড়ি এলাকায় এর উৎপত্তি।  বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কটক বাজার সীমান্ত দিয়ে,  বাংলাদেশে এ নদীর দৈর্ঘ্য ১৩০ কিলোমিটার। এই নদীটি কুমিল্লার বুক চিরে পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত হচ্ছে। কুমিল্লা শহর,  কুমিল্লা জেলা সদর,  বুড়িচং, দেবিদ্বার উপজেলা হয়ে  মুরাদনগরে প্রবেশ করেছে। 

একসময় বর্ষাকালে এই নদীটি মুরাদনগরের মানুষের জন্য দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াত। কয়েক দিন অনবরত বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলে নদীটি উন্মত্ত হয়ে উঠত। তলিয়ে দিত মুরাদনগরের দুইপাশের ফসলি জমি , বাড়িঘর ও ধন-সম্পদ। তাই প্রতিবছর মানুষের কাঁচাপাকা ধান ডুবিয়ে দেয়ার নজির রয়েছে। সেই বছরগুলোতে মুরাদনগরের মানুষের দুঃখ কষ্টের সীমা থাকতো না। বর্তমানে নদীর গতিপথ কিছুটা পরিবর্তন করে  দেয়ায় কুমিল্লা শহর সহ আশেপাশের উপজেলাগুলোর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ রক্ষা পাচ্ছে। বর্তমানে গোমতী নদীর যে ধারাটি আমরা দেখি তার আগে এটি আরো অনেকবার ধারা পরিবর্তন করেছে। 

ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি ধারা  দেবিদ্বার থানার জাফরগঞ্জ হয়ে দক্ষিণ -পশ্চিম মুখী গতি ধারণ করে খির নদীর ধারা ধরে বরকামতা ও চান্দিনা কে পাশে রেখে চান্দিনার বেশ কয়েক মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে মেঘনায় পতিত হত। আবার এই ধারা ও পরিবর্তন হয়ে বরকামতা ও চান্দিনার মাঝামাঝি স্থানে পশ্চিমমুখী গতি ধারণ করে বর্তমান বরকামতা খালের ধারা ধরে দাউদকান্দির উত্তর-পশ্চিম দিকে গিয়ে মেঘনায় পতিত হত। কিছুকাল পরেই এ ধারা পরিবর্তন হয়ে বরকামতা ও চান্দিনার মাঝামাঝি স্থানে পশ্চিমমুখী গতি ধারণ করে বর্তমান বরকামতা খালের ধারা ধরে দাউদকান্দির উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে মেঘনায় পতিত হত। পরবর্তীতে এই ধারার ও পরিবর্তন আসে । এ ধারাটি কুমিল্লা থেকে দেবিদ্ধার- জাফরগঞ্জ- কোম্পানীগঞ্জ  থেকে মরিচাকান্দা -পরমতলা হয়ে সিদ্ধেশ্বরী কৃষ্ণপুর এর পাশ দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে কালাডুমুর- ইলিয়েটগঞ্জ অতিক্রম করে বোয়ালজুরি খালের গতিপথে মেঘনায় পতিত হয়েছে। 

কালাডুমুর নদী:- কালাডুমুর নদী এসেছে গোমতী থেকে। এই নদীটি গৌরীপুর থেকে বাবুটিপাড়া- ইলিয়েটগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের উত্তর থেকে এসেছে । এই নদীটি মুরাদনগর দাউদকান্দি ও দক্ষিণে বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের খুব প্রিয় নদী ছিল ।এই নদীর পানি দিয়ে এলাকার মানুষ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতেন।  একসময় এই নদী দিয়ে ও ব্যবসায়ীদের বড় বড় নৌকা চলত। মাঝিরা মনের আনন্দে গান গাইতো।  একসময় এই নদীটি ছিল মুরাদনগরে বর্তমানে আরও রয়েছে তিতাস , রয়েছে আচনি নদী, মরা নদী সহ বেশ কিছু ছোট শাখা নদী । আরো রয়েছে বহু নামকরা খাল-বিল পুকুর ডোবা । যেগুলো দিয়ে দিনে রাতে নৌকা চলাচল করত।  এই গাং, নদী,খাল ডোবাগুলিতে মানুষ প্রকৃতির মানুষ গ্রীষ্ম বর্ষা সহ সারা বছর মাছ ধরত। 

জরুরিভাবে এই নদী, খাল,ডোবা ড্রেজিং বা খনন করা ছাড়া এগুলোর গতিপথ ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই । বিগত দিনে যথাযথ পরিচর্যা ও খনন না করার কারণে এগুলো ভরাট হয়ে গেছে । অধিকাংশ নদী-খালে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।  ফলে প্রাকৃতিক মাছ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পথে । গ্রীষ্মকালে আজ প্রায় প্রতিটি নদী-খাল শুকিয়ে যায় । খাল ডোবায় পানি থাকে না । পুকুরেও বেশি পানি থাকে না । আর খরস্রোতা গোমতীকে দেখা যায় মৃত্যুপথযাত্রীর ন্যায়। মুরাদনগর আর মানুষ সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ চায় । গোমোতীকে  আগের মত দেখতে  চায়। গোমতীর উত্তর -দক্ষিণে বিশাল প্রান্তরে নেওয়া ইরিগেশন প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন চায়। 

 লেখক মমিনুল ইসলাম