ভাগে বা শরীকে এক পশু একাধিক ব্যক্তি মিলে কুরবানি দেয়ার রেওয়াজ ও ধর্মীয় নিয়ম আছে সকলেরই জানা।
কিন্তু এক মুরগী দুজন মিলে শরীকে কেনার কথা আগে কখনোও কেউ শোনে নি। তাও আবার ২০২৩ সালে এসে।
এমন বিরল ঘটনাও ঘটছে এখন আমাদের আশেপাশে।
আব্দুল হালিম ও ইলিয়াস মিয়া, দুজন প্রতিবেশী।
পেশায় একজন দিনমজুর ও আরেকজন মৌসুমি ফলের ব্যবসা করেন সোনারগাঁয়ের নানা প্রান্তরে ও হাটে বাজারে ছোট পরিসরে। কখনো কাজ থাকে, আবার কখনোও থাকে না, অনিশ্চয়তার যাতাকলে পিষ্ট হয়ে কেটে যায় প্রত্যাহিক দিবসগুলো।
দুজন আজ মঙ্গলবার বাজারে এসেছেন যৌথভাবে একটিমাত্র ব্রয়লার মুরগী কিনতে, অথচ দুজন দু পরিবারের এবং বসবাসও করেন স্ব-স্ব পরিবারেই।
উৎসুক হয়ে এমন আশ্চর্যজনক কেনাকাটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ইলিয়াস মিয়া আক্ষেপ কন্ঠে বলে ওঠেন, ব্রয়লার মুরগীর দাম কেজিপ্রতি ২৪০ টাকা হওয়াতে তা একার পক্ষে কেনাটা দুঃসাধ্য ও রীতিমতো বর্তমান আয়ের বিপরীতে অসম্ভব হয়ে ওঠেছে, কিন্তু সাধ তো আর সাধ্য বিবেচনা করে মনে উদয় হয় না, তাই সাধ্যের মধ্যে যতটা পাওয়া যায় ততোটা স্বাদ নেয়ার জন্যই প্রতিবেশী হালিম মিয়াকে সাথে নিয়ে অর্ধাঅর্ধি দামে দুজন মিলে কিনতে এসেছেন ব্রয়লার মুরগী, তাও কম ওজনের একপিস, মুরগী নিয়ে বাড়িতে গিয়ে দু'ভাগে ভাগাভাগি করে মেটাবেন দু পরিবারের মাংস খাওয়ার সাধ।
পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে নাজেহাল বাজারমূল্যের এ সময়ে দূর্বিষহ হয়ে ওঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের টিকে থাকা।
আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের পরও কোনোক্রমেই কমানো যাচ্ছে না দ্রব্যমূল্যের এ দুঃসহনীয় ঘোড়দৌড়।
নাকাল রোজগারের আয়ের মানুষদের যেন "মরার উপর খরার ঘা" এর মতো বিদ্ধ করছে এ পরিস্থিতি।
লেবু,শশা,তেল,চিনি,বেগুন সহ রমজানে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দাম ইতিমধ্যে চলে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের ধরাছোয়ার বাইরে।
বিরাজমান এ নাজেহাল বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন আরো তৎপর ও সচেতন ভুমিকায় অবস্থান নিলে এ পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব। অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত পণ্য মজুদ রেখে তা বেশী দামে বিক্রি করার প্রবণতা কমাতে আইন-প্রশাসন কঠোর অবস্থান না নিলে এ পরিস্থিতি ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে বলে মনে করেন সাধারণ সচেতন নাগরিকরা।