চট্টগ্রাম নগরের বায়েজীদ এলাকায় যত্রতত্র চলছে ট্রাক পার্কিং। রাস্তার উপর ট্রাকের স্থায়ী ষ্ট্যান্ড তেরি করছেন ট্রাক ও পিকআপ চালকেরা। জানা যায়, প্রতিদিন চাঁদা দেয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন মোড় থেকে শুরু করে রুবিগেইট সড়কসহ বাংলাবাজার, টেক্সটাইল, রুবিগেট, বি,এস,আর,এম রোডসহ টেকনিক্যাল মোড়ের বাইপাস সড়কে দীর্ঘদিন যাবত সড়ক দখল করেই স্থায়ী স্টান্ড তৈরি করছেন চালকেরা। শিল্প-কারখানা ও কয়েকটির সমিতির নামে চলা ট্রাক ও শহরে মালমাল আনা নেওয়ার ট্রাকগুলোর নির্দিষ্ট পার্কিং না থাকায় যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করছে চালকেরা। জনভোগান্তি হলেও পার্কিংয়ের সুযোগে মাসিক মাসোহারা পান স্থানীয় প্রভাবশালী, পুলিশ ও কতিপয় পরিচয়ধারী সাংবাদিক।
সরেজমিনে দেখা যায়, টেক্সটাইল থেকে টেকনিক্যাল সড়কের পাশ জুড়ে এপারেলস প্রমোটারস লিমিটেড, বায়েজিদ ষ্টিল, গ্রিন ইনোভিটিফ এপারেলস লিমিটেড, সিইএম গ্রুপ, সালেহ ষ্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বি, এস আর এম ওয়্যার হাউজ, তামান্না এপারেলস লিমিটেড, চৌধুরী গ্রুপ, রেকেট চট্টগ্রাম ফ্যাক্টরীর প্রয়োজনীয় দ্রব্য লোড আনলোডের নামে ট্রাকের অবৈধ পার্কিংয়ের মাধ্যমে সড়ক দখল করে। যার কারনে সড়কটি মধ্যখানে সরু হয়ে ছোট হয়ে গেছে। সাধারণ যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়ছে।
কয়েকজন চালক জানান, বিভিন্ন ইস্পাত কোম্পানির মালামাল লোড আনলোড এর জন্য আসা গাড়ির পরিমাণ বেশি। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকটি শিল্প কারখানা লোড আনলোড এর জন্য নির্দিষ্ট পার্কিং থাকার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না বায়েজীদের কোন শিল্প-কারখানা। এসব পার্কিংয়ের লোকবল দেখে রাস্তার ওপর গড়ে উঠছে ভাসমান দোকান। জানা যায়, তাদের থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদা নেয় কিছু কিশোর গ্যাং, এলাকার কথিত নেতাকর্মী।
নাম না প্রকাশে ইচ্ছুক এক গাড়ির চালক বলেন, ছোট পিকআপগুলো থেকে দৈনিক একশত টাকা ও বড় ট্রাক গুলো থেকে ১৫০ শত টাকা থেকে শুরু করে ২০০ শত টাকা নেয়া হয়। এই স্ট্যান্ড এর এক দোকানির সাথে কথা বলে জানা যায়। এক একটি দোকান বসানো জন্য এক কালিন ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। আর দোকানের ভাড়া বাবদ দৈনিক ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ শত টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।
গাড়ি ও দোকান মিলিয়ে যার দৈনিক হিসাব দাড়ায় ৩৯ হাজার টাকা ও মাসে ১১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। যা গিয়ে বাৎসরিক দাঁড়ায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকায়। এই বিপুল পরিমাণ টাকার চাঁদাবাজি চলছে প্রশাসনে নাকের ডগায় যেন দেখার কেউ নেই।
অনুসন্ধানে কিছু ব্যাক্তির নাম আসে প্রতিবেদকের কাছে গাড়ি ও দোকানগুলো পিছনের থেকে পুরো নিয়ন্ত্রণ করছে মিন্টু, নবী আলম, সাত্তার। গাড়ি থেকে চাঁদার টাকা উত্তোলন ও বন্টন এর মূল দায়িত্বে আছে সোহাগ ও সিফাত। বাংলা বাজার এলাকা নিয়ন্ত্রন করে সোর্স মানিক। জনদুর্ভোগ হলেও তা তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় সড়কের উপর বাজার বসিয়ে প্রতি দোকান থেকে চাঁদা তোলে মানিক। এলাকার আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আমরা চাই এই সড়কটি জনগণের অবাধ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হোক। আমরাও অনেক সময় সন্তানদের স্কুলে নিতে হিমশিম খেয়ে যাই। কাকে বলবো জানিনা। প্রশাসন এসব অবৈধ দোকানীদের নিয়ে দৌড় খেলা খেলে। কাছেই বায়েজীদ থানা অথচ এদের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়না।
জানা যায়, দোকানের পাশাপাশি চলছে যত্রতত্র ট্রাকের অবৈধ পার্কিং। এলাকাবাসী ও যাত্রিদের চরম ভোগান্তি হলেও হাঙ্গামা এড়াতে নিরবে সয়ে যায় সবাই। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে থেকে ট্রাকগুলো এসে পার্কিং করার সাথে সাথে সোহাগ নামক এক ব্যক্তি দৈনিক রাত প্রতি ১০০ করে টাকা নেয় এবং দারোয়ান ভাড়া বাবত ৩০ টাকা করে নেয়। তিনশতাধিক গাড়ি থেকে দৈনিক ১৩০ টাকা আদায় করলে তা মোট অংকে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার টাকা। মাসিক এই টাকার অংক দাঁড়ায় ১১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম নগরের অবৈধভাবে এসব স্ট্যান্ডের পেছনে রয়েছে লাখ লাখ টাকার লেনদেন। নিরবেই ঘটছে চাঁদাবাজি। এসব চাঁদাবাজি নিয়ে কোনো অভিযোগও নেই কারো। গাড়ির মালিক-চালকেরা অবৈধভাবে রাস্তা আটকে স্ট্যান্ড বানিয়েছে। আর কতিপয় পুলিশ ও মাস্তানরা তার বিনিময়ে পাচ্ছে টাকা। কে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে? এতে পথচারীরা ও সাধারণ চালকের পড়ছেন বিপাকে। রাস্তার এই দুই পাশে গাড়ি রাখার কারনে দুর্ঘটনার শিকার হন পথচারীরা ও সাধারণ চালকেরা। রাতের আধারে এই গাড়িগুলো রাখা হয় প্রধান সড়কে। রাতের গভীরতা বাড়লে অক্সিজেনের মোড় থেকে রুবিগেট স্টীলমিল রোড পর্যন্ত যে যেভাবে পারে রাস্তার ওপর রেখে দেয়। ফলে যেকোনো সময়ে এখানে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উত্তর ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারকে মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেন নি।