মিরাজুল হক পেশায় একজন হকার। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফেরি করে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করেন। সেখান থেকে যা আয় হয় সেটা দিয়েই চলে সংসার। এরমধ্যেই তার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন সদ্য ঘোষিত ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। এছাড়াও তার ছোট ছেলে আলমগীর মোল্লা জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়। দুই ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন তিনি।
মিরাজুল হক ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। মিরাজুল হকের স্ত্রী জুলেখা বেগম শহরের অগ্রণী ব্যাংকের পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
মিরাজুল হকের বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেছেন ও ছোট ছেলে আলমগীর মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র ও জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়।
কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী খালেদ সাইফুল্লাহ জানান, মিরাজুল হক অনেক আগে থেকেই মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গাড়িতে বিভিন্ন জিনিসপত্র হকারি করে বিক্রি করেন। খুব কষ্ট করেন তিনি। তার এক ছেলে বিসিএস ক্যাডার ও ছোট ছেলে জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়। তার দুই ছেলের এই অর্জনে খুবই খুশি।
মিরাজুল হক জানান, ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি হকার পেশায় যুক্ত। তার স্ত্রী অগ্রণী ব্যাংকের পরিচ্ছন্ন কর্মী। গাড়িতে তিলের খাঁজা, বাদাম ও বুট ভাজাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেন। দু’জনের আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অর্থের অভাবে দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাতে না পেরে অল্প শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও থেকেও ঋণ নিয়েছেন তাদের পড়ালেখার খরচ মেটানোর জন্য।
তিনি আরও বলেন, এই পথ পাড়ি দিতে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে। অবশেষে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছি।
মিরাজুল হকের স্ত্রী জুলেখা বেগম জানান, ছেলে দুটির পড়ালেখা করাতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। খেয়ে না খেয়ে তাদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে হয়েছে। ছেলেদের এই সাফল্যে তিনি খুবই খুশি। সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।