ঢাকা, মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে গেস্ট হাউসে গলাকেটে তরুণী হত্যার রহস্য উদঘাটন

ময়মনসিংহ ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩ ০৪:১২:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

ময়মনসিংহ নগরীর নিরালা গেস্টহাউসের বাথরুম থেকে গলাকাটা তরুণীর লাশ উদ্ধার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। এই ঘটনার খলনায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২৩)কে মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী ভাসমান যৌনকর্মী ছিল। ঢাকা থেকে সে ওই যুবকের সাথে ৫ হাজার টাকায় রাত কাটানো চুক্তি করে ময়মনসিংহে আসে। টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাকিবকে থাপ্পর মারার জেরে ওই যৌনকর্মীকে গলা কাটার পর হাতের কবজির রগ কেটে মুত্যু নিশ্চিত করে বাথ রুমে লাশ ফেলে পালিয়ে রাকিব। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক রাকিব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে।

গ্রেফতারকৃত রাকিব মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার নতুন চরচাষী গ্রামের মো. খোকন মিয়ার ছেলে।

মঙ্গলবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, জেলা পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভুঁঙা।

পুলিশ সুপার বলেন, আসামী রাকিব পড়াশুনার পাশাপাশি সমাজ সেবা অফিসে আউট সোর্সিংয়ের কাজ করে। ময়মনসিংহের ভালুকায় কাজের জন্য গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টার সময় আগারগাঁও অফিস থেকে রওনা দেয়। সেখান থেকে মিরপুর সেহড়া পাড়া বাসস্ট্যান্ড যায়। পরে সেহড়া পাড়া ফুটওয়ার ব্রীজ দিয়ে যাওয়ার সময় এক যৌনকর্মী রাকিবকে ডাক দেয়। তখন রাকিব তার সাথে ৫ হাজার টাকা চুক্তি করে ময়মনসিংহে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। এতে ওই যৌনকর্মী ময়মনসিংহে যেতে রাজী হয়। পরে সেখান থেকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে ময়মনসিংহে আসে। আসার পর নগরীর ছোট বাজার এলাকার নিরালা রেষ্ট হাউজে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ৪ দিন থাকবে বলে ২০৯ নাম্বার রুম ভাড়া নেয়। 

পরদিন ১৫ মার্চ সকাল ১০ টার দিকে রাকিব ১ হাজার টাকা দেয় এবং বাকি ৪ হাজার দিবে না বলে জানায়। এতে দু'জনের কথা কাটাকাটির জেরে ওই যৌনকর্মী রাকিবের গালে থাপ্পর মারে। এতে রাকিব ক্ষিপ্ত হয়। পরে কৌশলে ওই তরুণীকে বিকাশ থেকে টাকা উঠানোর কথা বলে গেস্টহাউসের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। নিচে গিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে চাকু কিনে আবারও রুমে ঢুকে। রাকিব ওই নারীর গলায় চাপ দিয়ে বাথরুমে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে রাকিব ওই যৌনকর্মীর দুই হাতের কবজির রগ কাটে মুখে চাকু দিয়ে আচর কাটে। তারপর হোটেল রুমের রক্ত পরিস্কার করে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

 

দুই দিন রুমের তালা বন্ধ দেখে হোটেল কর্তৃপক্ষ ১৮ মার্চ পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

পুলিশ সুপার বলেন, এই ঘটনার পর ওই দিন পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা পর সিসিটিভির ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহাযতায় গত ১৯ মার্চ রবিবার রাকিবকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভুঁঙা বলেন, ওই যৌনকর্মীর পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার পরিচয় নিশ্চিতে পুলিশ কাজ করছে। তরুণীর মরদেহ ময়নাতদন্ত করে ফ্রিজিং করে রাখা হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাকিব আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।