ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জের শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

সোহাগ হাসান জয়, সিরাজগঞ্জ | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:২৮:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য
শুঁটকির চাতালে কাজ করছেন নারী শ্রমিক

সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাসহ চলনবিল এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক শুঁটকির চাতাল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব চাতালে শুরু হয় মাছ কাটা, ধোয়া এবং রোদে শুকানোর কাজ। এ কাজ করেন শত শত শ্রমিক।

জানা যায়, জেলার তাড়াশ, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ ও শাহজাদপুরসহ চলনবিল এলাকায় মিঠা পানির দেশীয় মাছের শুঁটকি উৎপাদন হয়। অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদন। এই মৌসুম চলবে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত।

মৎস্যজীবীরা জানান, চলনবিলে এ বছর দুই দফায় বন্যার পানি এসেছে। ফলে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির শিং, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, গুচিবাইম, বোয়াল, ফলি, কাতল, নওলা,পুঁটি, খলসে, চেলা, টেংরা, কই, মাগুর, শোল, গজারসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ধরা পড়ে এই বিলে জেলেদের জালে।

চাতাল শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, কোনো প্রকার রাসায়নিকের মিশ্রণ ছাড়াই শুধু লবণ যুক্ত করে মাছ সূর্যের আলোয় শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। এই শুঁটকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ভারত ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। শুঁটকি উৎপাদনে এ অঞ্চলের চাতালগুলোতে এখন কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী পুরুষসহ নানা বয়সী শ্রমিক।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানাযায়, উৎপাদনকারীরা মাছের আকার এবং মানভেদে শুঁটকির দাম নির্ধারন করেন। পাইকারি বাজারে তারা ২০০ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা কেজিতে শুঁটকি বিক্রি করেন। ভোক্তা পর্যায়ে এর দাম আরো বেশি। বিশেষ করে বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন শুঁটকির দাম বাড়ে কয়েক গুণ। শুঁটকির মধ্যে বড় শোল ১৬০০-১৮০০, বড় টাকি ১৪০০-১৬০০, মাঝারি টাকি ১০০০-১২০০, ছোট টাকি ৭০০-৮০০, ছোট গুলসা ৭০০-৮০০, চিংড়ি ৫০০-৬০০, বাইম ৬০০-৭০০ এবং বিভিন্ন আকারের পুঁটির শুঁটকি ৩০০-৬০০ টাকা, বোয়াল ২ হাজার, পর্যন্ত কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করে।

পুরুষ শ্রমিকরা বলেন, সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ৪শত ও ৫শত টাকায় হাজিরায় কাজ করেন শতশত শ্রমিক। এছাড়া এখানে নারীরাও কাজ করেন। নারী শ্রমিক ছকিনা খাতুন, শাহিনুর বেগম, মাজেদা খাতুনসহ একাধিক নারী শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, পুরুষের সমান কাজ করেও নারী হওয়ায় অর্ধেক হাজিরা পাই। চাতার মালিকদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

শুঁটকি ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান বলেন, চলনবিলের শুঁটকি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ অঞ্চলের শুঁটকি মাছের মান ভালো। শুঁটকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ভারত ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।

চাতাল মালিক বায়েজিত হোসেন বলেন, এ অঞ্চলে বরাবরই নারী শ্রমিকদের মজুরি কম ছিল। তারা সেভাবেই মজুরি দিচ্ছেন। নারী শ্রমিকদের দাবি পূরণে চাতাল মালিকরা আন্তরিক। শুঁটকির উৎপাদন বাড়লে বিষয়টি যথাযথ মূল্যায়ন করা যাবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহীনুর রহমান জানান, মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলের দেশি মাছ সুস্বাদু ও মানসম্পন্ন হওয়ায় বিদেশের বাজারে এই মাছের শুঁটকির চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে শুঁটকির উৎপাদনও। জেলা গত বছর ৩১৭ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে। এ বছর প্রায় ৩৫০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আছে। 

তিনি আরো বলেন, নারী শ্রমিকদের মজুরি কম দেওয়ার বিষয়টি অবগত হয়েছি। তাদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে চাতাল মালিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

 

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএ