কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে উখিয়া টেকনাফ এলাকা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের মতে ক্যাম্পের ভিতর বাইরে মাদক চোরাচালান উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এতে করে হিমসিম খেতে হচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। র্যাব বিজিবি প্রতিদিন মাদক উদ্ধার, কিছু মাদককারবারী আটক করলেও ধরাছুঁয়ার বাইরে রাঘববোয়ালরা এমন অভিযোগ সচেতন মহলের। এর জন্য সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দিকে আঙ্গুল তুলে সর্বস্তরের মানুষ। এদের প্রশ্ন, সীমান্তের কড়া নিরাপত্তা পেরিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প মাদক ডুকে কি ভাবে? এমন প্রশ্ন যথাযত হলেও এর উত্তর নেই কারো কাছে। এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই সীমান্তরক্ষী সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোন বাহিনীর।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাটাতারের ঘেরা আর পুলিশ এপিবিএন সহ যারা ক্যাম্পে দায়িত্বে আছেন তাদের চোখে ধুলি দিয়ে ক্যাম্পের ভিতর কি ভাবে মাদক আর অস্ত্র ডুকে তাও বুঝে আসেনা বলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদকে দিন দিন কিভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠছে তা বুঝা যায় পুলিশের তথ্যে। জেলা পুলিশের তথ্য মতে ২০১৭ সালে ক্যাম্পে মাদক মামলা হয়েছে ২২টি, আসামী ৪০জন, ২০১৮ সালে মাদক মামলা হয়েছে ৯৫টি, আাসমী ১৫৯ জন, ২০১৯ সালে মাদক মামলা হয়েছে ১৫২টি, আসামী ২৪৮ জন, ২০২০ সালে মাদক মামলা হয়েছে ২৫৬টি, আাসামী ৪৪৫ জন, ২০২১ সালে মাদক মামলা হয়েছে ৪২৯ টি, আসামী ৪৪৪ জন, ২০২২ সালে মাদক মামলা হয়েছে ৮৭১ টি, আাসামী ১৩১৭ জন,। বছরের পর বছর গানিতিক হারে বাড়ছে মাদক মামলা। আর এর প্রভাব পড়ছে ক্যাম্পের বাইরে স্থানীয়দের মাঝেও।
মাদকের কারনে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে অপরাধ প্রবনতাও। সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ ও হত্যা সহ নানা অপরাধ বেড়েই চলেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এর প্রভাব ক্যাম্পের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ উৎকন্ঠা ভর করছে স্থানীয় শান্তিপ্রিয় সাধারন মানুষের মাঝে। সবকিছু মিলিয়ে ওই এলাকা অস্থির হয়ে উঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, রোহিঙ্গারা আসার পর থেকেই মাদক চোরাচালান যেমন বাড়ছে, তেমনি বেড়েছে অস্ত্রের ব্যবহারও। এতে উদ্বেগও বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।
উখিয়া বালুখালী এলাকার শিক্ষক মাহমুদুল হাসান বলেন, রোহিঙ্গাদের কারনে এলাকায় মাদকে সয়লাব। অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগুচ্ছে এলাকার যুব সমাজ। উত্তোরণের উপায় কি তাও জানিনা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ও প্রশাসনের কিছু দুর্লোভী মানুষের কারনে এটি সৃষ্টি হয়েছে।
উখিয়া ফার্লংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কাঁটাতারের বেড়া বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সুরক্ষিত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে রোহিঙ্গারা মুক্ত। এরা দেশের যে কোন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। এরা মায়নামার সীমান্ত পেরিয়ে মাদক, স্বর্ন ও আইস এনে আবার কি ভাবে ক্যাম্পে ডুকে প্রশাসন যোগসাজশ না থাকলে? এনজিওদের গাড়ী, সরকারী বেসরকারী গাড়ী নজরদারীতে আনতে হবে। নইলে ক্যাম্পে মাদক বন্ধ হবেনা। মাদকের কারনেই ক্যাম্পে এত খুন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কথা বললেই খুন কিংবা অপহরণ ও মাদক অস্ত্র দিয়ে জেলে দিবে। জনপ্রতিনিধিরা আরো বেশী আতংকে কথা বলতে।
১৬ এপিবিএন কক্সবাজার এসপি জামাল পাশা বলেন, আসলে রোহিঙ্গারা কাঁটা তারের বেড়া কেটে অনেকেই বের হয়, চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়েও বের হয়ে মাদক নিয়ে ডুকে পড়ে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে মাদক নির্মুলে কাজ করে যাচ্ছি। অবশ্যই বিজিবি, এপিবিএন ও পুলিশ সহ সকলের সমন্বয়ে কাজ করে যেতে পারলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেই সরকারী বেসরকারী গাড়ি তল্লাসি করা হবে। এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা দরকার।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিস সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিষয় পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। আমরা সেই ভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আমরা বিশেষ কৌশলে কাজ করছি। খুব কম সময়ে হয়তো সুফল পাবো।